চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

রাত ৯টার বাস যেন সুরের মূর্ছনায় অন্য জগৎ

নাজমুল হাসান

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ছবি: নাজমুল হাসান

রাগ অভিমান যা-ই থাকুক না কেন পড়াশোনা শেষে সবাই তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে নিয়ে স্মৃতিকাতর থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, হল জীবন, বাস, শ্রেণীকক্ষ সবই তার হৃদয়ে রেখাপাত করে। তবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মনে বাসের প্রতি ভালোবাসা অন্য রকম। বিশেষ করে সবার প্রিয় রাত ৯টার বাস। দিনের বিভিন্ন সময়ে যারা চট্টগ্রাম শহরে আসে তারা মূলত রাতের বাসগুলোয় ক্যাম্পাসে ফেরেন। সাধারণত শিক্ষার্থীরা টিউশনি, কেনাকাটা, ঘোরাফেরাসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে শহরে যান। সারা দিনের ক্লাস, ল্যাবের পর আবার শহরে এসে টুকটাক কাজ সেরে যখন শরীর-মন ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন বাসে উঠে সিটে একটু শরীর এলিয়ে দিতে পারলেই মনে হয় জগতের সব সুখ এসে একাকার হয়ে যায়।

চট্টগ্রাম শহরের পুরনো রেলওয়ে স্টেশন থেকে চুয়েটের দূরত্ব প্রায় ২৯ কিলোমিটার। স্টেশন থেকে নগরীর টাইগারপাস-কাপ্তাই রাস্তার মাথা পার হয়ে বাস পৌঁছায় চুয়েটে। দিনে দুবার করে এ পথে চুয়েট বাস আসা-যাওয়া করে। প্রথম ট্রিপ ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রওনা দেয়, আবার পুরনো রেলওয়ে স্টেশন পৌঁছে সকাল ৭টায়  শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরে। দ্বিতীয় ট্রিপ বিকাল ৫টায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে আসে এবং রাত ৯টায় রেলওয়ে স্টেশন থেকে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হয়। মাঝে বেলা ২টায় একটা শর্ট ট্রিপ রয়েছে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত। 

চুয়েট বাসের ঐতিহ্য হচ্ছে পেছনের সিটের গান। বাসগুলো যখন শহরের জঞ্জাল ছেড়ে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পার হয়, আস্তে আস্তে নীরব হয়ে উঠতে থাকে চারপাশের পরিবেশ। তখন কোনো কোনো বাসে নীরবতা ভেঙে শিক্ষার্থীরা গেয়ে ওঠে সম্মিলিত সুরে গান। নীরব কাপ্তাই সড়কে চলতে থাকে বাস আর পেছনে সম্মিলিত গান। এ যেন সুরের মূর্ছনায় অন্য জগতে গমন। বাস সম্পর্কিত সবচেয়ে সুন্দর বিষয় হলো বাসের জন্য অপেক্ষা। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা বাসের জন্য নির্ধারিত স্টপেজগুলোতে জড়ো হতে থাকেন। সারা দিনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে চলতে থাকে ভরপুর আড্ডা। কার বিভাগে কী হয়েছিল, অনলাইনে কোন ঘটনাটা ভাইরাল হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ক্ষোভ-ভালোবাসা এসবই থাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। 

চুয়েট বাসে দুই সারিতে সিটগুলো বসানো রয়েছে। বাম সারিতে প্রতি সিটে দুজন করে বসতে পারে। আর ডান সারিতে প্রতি সিটে তিনজন। বাম পাশের সিটের জানালার পাশের অংশটি প্রিয়জনের জন্য ধরতে বেশ তোড়জোড় দেখা যায় অনেকের মধ্যে। বাসের সিট ধরা নিয়ে চুয়েট শিক্ষার্থীরা বেশ সৃজনশীলতার পরিচয় দেয়। ভিজিটিং কার্ড থেকে শুরু করে ব্যাগ, খাতা, ছাতা, এটিএম কার্ড, পানির বোতল, বিস্কুটের প্যাকেটসহ হাতের কাছে যা পায় তা দিয়ে সিট ধরার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে সেখানে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন