চলচ্চিত্র অধ্যয়ন

দেশে চলচ্চিত্র অধ্যয়নে উচ্চশিক্ষার পথিকৃৎ

আনিসুর রহমান

ঢাবির‌ টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের সামনে শিক্ষার্থীরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সিনেমা বা চলচ্চিত্র হলো গণশিক্ষার মাধ্যম। তবে সিনেমা শুধু নির্মাণ বা শিল্পকলাকেন্দ্রিক কাজই নয়; বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন ও গবেষণার সুযোগও রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেরিতে হলেও চলচ্চিত্র অধ্যয়নে গুরুত্ব দিয়েছে। শুরুটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত ধরে হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পথিকৃতের ভূমিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগ। ২০১২ সালে চালু হওয়া এই বিভাগে টেলিভিশন ও ফটোগ্রাফি অধ্যয়নের পাশাপাশি চলচ্চিত্র অধ্যয়ন নিয়ে চার বছর মেয়াদি স্নাতক, দুই বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর এবং এমফিল, পিএইচডি ও বিভিন্ন সার্টিফিকেট কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। এ বিভাগের আওতায় তথ্যচিত্র, টেলিভিশন প্রোডাকশন প্রোগ্রাম, ফিল্ম ডিরেকশন, চলচ্চিত্র সম্পাদনা, অ্যানিমেশন অ্যান্ড মোশন গ্রাফিক, ফটোগ্রাফি, টেলিভিশন নিউজ রিপোর্টিং, চলচ্চিত্রের ইতিহাস, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাসহ নানা ধরনের কোর্স পড়ানো হয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে নির্মাণ করেছেন প্রায় ২৫০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ ও পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে এমন চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে— দুই মুসাফির (২০১৬), পাপেট (২০১৭), রুলেট (২০১৭), পথ (২০১৭), স্বাদ (২০১৭), পোস্টার (২০১৮), কয়েকটি প্রাচীন গাছ (২০১৮), আইনের দরোজায় (২০১৯), বিলুপ্ত ঠিকানায় (২০১৯), ফ্লায়িং চাইল্ড (২০১৯), পুষ্প কথা (২০১৯), আলতা (২০১৯), জয়া (২০১৯), ঘোর (২০২০), ওয়াটার (২০২০), আশ্রয় (২০২০), খবর (২০২০) ইত্যাদি। 

এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অর্জন করা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মধ্যে রয়েছে— ফিলিপাইনের চিল ম্যানিলা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্ট অ্যাওয়ার্ড, আয়ারল্যান্ডের এলিভেশন অ্যান্ড ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, তুরস্কের হাকিস ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড, নাওয়াদা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল অ্যাওয়ার্ড, ঝাড়খন্ড ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ফেস্টিভ্যাল অব সিউল অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড রয়েছে তাদের। 

বিভাগটির চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক এসএম ইমরান হোসেন বলেন, ‘ঢাবিতে দেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়; যেটি টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফির মতো বিশেষায়িত বিভাগ চালু করেছে। যেখানে অত্যাধুনিক টিভি স্টুডিও, রিসোর্স সেন্টার এবং অ্যানিমেশন ল্যাব রয়েছে। ভালো এবং মানসম্মত সিনেমা তৈরির জন্য যে দক্ষ জনবল এবং পরিচালক তৈরির ব্যবস্থা আগে ছিল না, সেটির অভাবও বিভাগ পূর্ণ করেছে। এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের বানানো চলচ্চিত্র দেশে-বিদেশে পুরস্কার জিতছে এবং দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে। আমাদের বিভাগ এরই মধ্যে ১১ বছর পার করেছে। বিভাগের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী বতর্মানে বিদেশে একই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন