পঞ্চাশের পর

বেশি রোগাক্রান্ত হন পুরুষরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

বয়স পঞ্চাশ পেরোলেই নানা রোগের আধিক্য দেখা দেয়। এ বয়সে এসব রোগ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পেছনে মূলত তিনটি কারণকে দায়ী করা যায়। সেগুলো হলো জিনগত কারণ, জীবনধারণগত কারণ এবং ছোটবেলায় পাওয়া কোনো আঘাত। 

জিনগত বা বংশগত কারণে মানুষ যেসব রোগে আক্রান্ত হয় সেগুলো প্রতিরোধ করা যায় না। তবে জীবনযাপনের ধরনের কারণে যেসব রোগ দেখা দেয় সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার নাটাই থাকে নিজের হাতেই। যদিও রোগে আক্রান্ত হওয়ার হারের ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা পার্থক্য দেখা যায় নারী ও পুরুষের মধ্যে। 

হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশিদিন বাঁচেন। সাধারণত পুরুষরা নারীদের তুলনায় কম সময় বেঁচে থাকেন এবং আরো আগে আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি হার্নিয়ায় আক্রান্ত হন। কিডনিতে পাথর হওয়ার মতো রোগেও নারীদের তুলনায় পুরুষরা তিন গুণ বেশি আক্রান্ত হন। এমনকি তাদের ব্ল্যাডার ক্যান্সারও বেশি হয়ে থাকে।  যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত গবেষণাটি বলছে, পুরুষরা গেঁটেবাতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও নারীদের তুলনায় চার গুণ বেশি। এমনকি আরো বলা যায় নারীরা পুরুষের তুলনায় ঘন ঘন ডাক্তারের কাছে গেলেও পুরুষদের জন্য চিকিৎসা ব্যয় হয় অনেক বেশি।

নারী ও পুরুষের এ বিভেদটার পেছনে মূলত জৈবিক, সামাজিক ও আচরণগত বিষয়গুলো বেশি প্রভাব ফেলে। সেক্স ক্রোমোজোম, হরমোন, বিপাক ক্রিয়াও এখানে অনেকখানি প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি কিছু সামাজিক বিষয় তো থাকেই। যেমন কাজের চাপ, সামাজিক নেটওয়ার্কের ঘাটতি ও সবার সমর্থন না পাওয়ার বিষয়টিও পুরুষকে খুব চাপে ফেলে দেয়। এছাড়া পুরুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে কিছু আচরণগত বিষয়ও। কোনো সহিংস বা আক্রমণাত্মক আচরণ, ধূমপান, মদ্যপান, ঠিকঠাক খাদ্য তালিকা মেনে না চলা, ব্যায়ামের অভাব, নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা তাদের পরবর্তী সময়ে আরো বেশি রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নাজুক করে তোলে। 

পুরুষের মধ্যে যে সেক্স ক্রোমোজোম থাকে সেটাকেও তার বেশি রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। নারী ও পুরুষ সবারই ২৩টি করে ক্রোমোজোম থাকে। তাতে ২০ থেকে ২৫ হাজার জিন থাকে। ২২টি ক্রোমোজোমই নারী পুরুষের ক্ষেত্রে একরকম হয়। একটা ক্রোমোজোম নারী পুরুষকে আলাদা করে। যেখানে পুরুষেরটায় থাকে এক্সওয়াই আর নারীরটায় থাকে এক্সএক্স। নারীর এক্স ক্রোমোজোম সাধারণত পুরুষের ওয়াই ক্রোমোজোম থেকে তিন গুণ বড় হয়। সেটাতে জিনও থাকে বেশি। এসব জিনেরই কোনোটি পুরুষের বেশি মৃত্যুহারের জন্য দায়ী। এমনকি পুরুষের টেস্টোস্টেরনকেও দ্রুত হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়ার কারণ হিসেবে দায়ী করা যায়। অন্যদিকে অ্যাস্ট্রোজেন হরমোন হৃদরোগকে অনেকটাই দূরে রাখে। তাই পুরুষের তুলনায় ১০ বছর পরে গিয়ে নারীরা এ রোগে আক্রান্ত হয়।

নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সেক্স হরমোন হাড় শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। তার পরও পুরুষরা একটু খাদের কিনারেই অবস্থান করে। পুরুষের বয়স বাড়লে টেস্টোস্টেরন ধীরে ধীরে কমতে থাকে, পরিমাণটা হয় বছরে ১ শতাংশ হারে, কিন্তু মেনোপজ হওয়ার পরে নারীর অ্যাস্ট্রোজেনের মাত্রা ব্যাপকভাবে কমতে থাকে। ফলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় নারীর। 

নিজের হরমোন বা জিন পরিবর্তন করা সম্ভব না। কিন্তু নিজের কিছু আচার-আচরণ পরিবর্তন করে সম্ভব নিজেকে সুস্থ রাখা। তাই নারী হোন বা পুরুষ নিজের শরীরের যত্ন নিন। যেন ৫০-এর পর মানসিকভাবে তো বটেই, শারীরিকভাবেও অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও সুস্থ থাকতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন