অস্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে কিছু লোকের কদর বাড়ে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ছবি: পিআইডি

দেশে অস্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে কিছু লোকের কদর বাড়ে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক শক্তি আছে, যাদের ধারাবাহিক গণতন্ত্র পছন্দ হয় না। আর আমাদের কিছু আঁতেল আছে, তাদের তো (ধারাবাহিক গণতন্ত্র) পছন্দই না। তারা মনে করে, একটা অস্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের কদর বাড়ে। কারণ যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসে, তাদের কিছু লোক হাতের লাঠি লাগে বা খুঁটি লাগে। সেই লাঠি হতে পারছে না বলেই তাদের মনে খুব দুঃখ।

গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বাধীনতা জাতীয় দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান প্রমুখ।

সময় স্বাধীনতার ৫৩ বছরের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ২১ বছর এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আট বছরসব মিলিয়ে ২৯ বছর বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায় বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই কালো মেঘ কেটে দেশের মানুষের জন্য আমরা একটা নতুন সূর্যের আলো নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ, সেই পথেই এগিয়ে যাবে।

দেশবাসী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যে আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়েই যেন তারা এগিয়ে চলে। কারো মিথ্যা কথায় যেন কেউ বিভ্রান্ত না হয়। সমালোচনাকারী ওই ব্যক্তিদের আঁতেল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা সবসময় দেশে বিদেশে বদনাম তো করবেই, আবার দেশের মধ্যেও আজেবাজে লিখে যাচ্ছে যে কিছুই নাকি হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের একেবারে তৃণমূল মানুষের কাছে যান, তাদের মধ্যে যে আস্থা বিশ্বাস আছে সেটাই আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। যে অবৈধ শক্তি ৭৫- জাতির পিতাকে হত্যা করে ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের কোনো প্রেতাত্মা যেন আবার দেশের মানুষের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে না পারে। আবার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে তার জন্য আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী দেশের জনগণকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থেকে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।

২০০৮ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ ২০১৮ সালে আবার সরকারে এসেছি। ধারাবাহিক গণতন্ত্র রয়েছে, ধারাবাহিক উন্নতি হয়েছে বলেই আজ বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। সারা বিশ্ব বলতে বাধ্য হয়, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এখান থেকে আর পিছে হাঁটবে না। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

সময় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বিদেশীদের কাছে নালিশ করে, তাদের ওপর নাকি খুব অত্যাচার করা হচ্ছে। অত্যাচার তো আমরা করিনি। অত্যাচার করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এর শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছেন। সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার, সৈনিক থেকে শুরু করে প্রায় হাজার মানুষকে নির্বিচারে ফাঁসি দিয়েছেন, গুলি করে হত্যা করেছেন। পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের লাশ পর্যন্ত পায়নি। সব লাশ গুম হয়ে গেছে।

বিএনপির জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে, প্রথমে লেবাস পরে রাজনীতিকে গালি দিয়ে ক্ষমতা দখল করে আবার সেই লেবাস খুলে নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে গেছে। ক্ষমতা উচ্ছিষ্টভোগীদের নিয়ে দল গঠন করার কালচার শুরু হয় বাংলাদেশে।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, অবৈধ দখলকারীদের হাতে তৈরি করা সংগঠন তারা নাকি এখন দেশে গণতন্ত্র চায়। যাদের জন্মই গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়নি। যাদের জন্ম মিলিটারি ডিক্টেটেডের মধ্য দিয়ে, তারা আবার গণতন্ত্র চায়। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র দেয়নি, তারা গণতন্ত্র দেবে। গণতন্ত্রের জন্য নাকি তারা লড়াই করে। ওদের জিজ্ঞেস করতে হয়, তাদের জন্মটা কোথায়? অবৈধ দখলদারি এটা তো আমাদের কথা না। আমাদের উচ্চ আদালত বলে দিয়েছে যে জিয়া-এরশাদ সম্পূর্ণ অবৈধ। তারপর তারাও নাকি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে।

মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধ একটি জনযুদ্ধ ছিল। যারা ট্রেনিং নিয়ে দেশে এসেছে, দেশের মানুষকে তৈরি করেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাধা দিয়েছে। ট্রেনিংপ্রাপ্ত শুধু তা নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও মাঠে নেমে গিয়েছিল। যে যেভাবে পেরেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছে।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটা গেরিলা যুদ্ধ। তাই গেরিলা যোদ্ধারা দেশে ঢুকলে মা-বোনেরা রান্না করে খাবার দেয়া, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের তথ্য দেয়ার কাজগুলো করেছে। একটা জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা দেশে স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন