গৃহহীনদের ৩৯,৩৬৫ ঘর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী

দেশের কোনো মানুষ আর ঠিকানাবিহীন থাকবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীপুর থেকে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ভার্চুয়ালি চতুর্থ দফায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন ছবি: পিআইডি

দেশের সাত জেলা ১৫৯ উপজেলাকে ভূমিহীন গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধাপে ধাপে সব জেলা উপজেলাকেই ভূমিহীন গৃহহীনমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারপ্রধান। গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে গতকাল চতুর্থ ধাপে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনিই ভূমিহীন গৃহহীনদের আশ্রয় দিতে গুচ্ছগ্রাম করেন। বঙ্গবন্ধুর দেশে কোনো মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা মানুষ ঘর পাবে, আশ্রয় পাবে, তার জীবন-জীবিকা হবে। সে কখনো সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না। নিজের পায়ে সম্মানের সঙ্গে দাঁড়াবে, সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। একই সঙ্গে গৃহহীন ভূমিহীনমুক্ত জেলা-উপজেলায় যদি কোনো ভূমিহীন পরিবার থেকে যায় তাদেরও ঘর করে দেয়া হবে।

গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বানারীপাড়া পৌরসভায় উত্তরপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তাদের আবেগমাখা বক্তব্য মন দিয়ে শোনেন শেখ হাসিনা। নিজ দলের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের সংগঠন। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে, সেটা আজকে প্রমাণিত সত্য। আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাও পেয়েছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

দেশের মানুষের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভালোবাসা ত্যাগের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজকে সত্যি আমি খুব আনন্দিত। আবার আমরা আরো ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারকে স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছি এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিতে পারছি। ঘর পাওয়ার পর দুঃখী মানুষের মুখে যে হাসি, অন্তত সেই হাসিটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তিনি যেখানেই থাকুন নিশ্চয়ই তার আত্মা শান্তি পাবে বলে আমি মনে করি। তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। ইনশাআল্লাহ আমরা তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব।

মুজিববর্ষের অঙ্গীকারে ভূমিহীনদের মাঝে একক গৃহ উপহার দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরের অনগ্রসর মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। গৃহহীন ভূমিহীনমুক্ত করার যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা থেকে বাংলাদেশের একটি উপজেলাও বাকি থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী সময় ভূমিহীন-গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। গতকালের অনুষ্ঠান থেকে ঘোষিত ভূমিহীন গৃহহীনমুক্ত জেলাগুলো হচ্ছে নরসিংদী, গাজীপুর, মাদারীপুর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জয়পুরহাট। এর আগে পঞ্চগড় মাগুরাকে ভূমিহীন গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে এখন দেশের নয়টি জেলা ২১১টি উপজেলা ভূমিহীন গৃহহীনমুক্ত।

এদিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১০০ ঘর উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠান উপলক্ষে পুরো এলাকায় উত্সবের আমেজ বিরাজ করে। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও উপস্থিত ছিল বিপুলসংখ্যক মানুষ।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়ায় আট একর জমির ওপর ১৪২টি ঘর তৈরি করা হয়েছে। এখানে স্কুল, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, খেলার মাঠ কবরস্থানও রাখা হয়েছে। নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনুষ্ঠানে জেলা উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা উপকারভোগীদের পাশাপাশি সকাল থেকেই উপস্থিত ছিলেন যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, ইকবাল হোসেন সবুজ মেহের আফরোজ চুমকি। অংশের সঞ্চালনা করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপকারভোগী দুধজান বেগম মো. হানিফ কথা বলেন।

দুধজান বেগম বলেন, আমি ভাবছিলাম যে মারা গেলে আমারে কোনখানে মাটি দিব? আমার তো জায়গাবাড়ি নাই। বাপের ঘরে হইছিলাম, আমি গরিব বইলা ভাইয়েরা এখন পরিচয় দেয় না। আল্লাহ আমারে এখন দাঁড়ানোর শক্তি দিছে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে মো. হানিফ বলেন, মা, আপনার দয়ায় ঘর পেয়েছি, স্কুল পেয়েছি, মাদ্রাসা পেয়েছি, রাস্তা পেয়েছি। আমার আর কোনো চিন্তা নাই। এখন আমি আর ভিক্ষাও করব না। ছোট্ট একটা দোকান করে আপনার দয়ায় দিন কাটায়া দিব। আপনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া আমার আর কিছু দেয়ার নাই। আমি আপনার জন্য চিরকাল দোয়া করি মা। আমি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি, তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন