ইন্টারনেট থেকে আপত্তিকর ছবি সরাবে ‘‌টেক ইট ডাউন’

বণিক বার্তা ডেস্ক

পর্তুগালের লিসবনের তাগুস নদী তীরবর্তী কমার্সিও স্কয়ারে স্মার্টফোন হাতে এক তরুণ ছবি: এপি

প্রায়ই সতর্ক করা হয় উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একবার ছবি পাঠিয়ে ফেললে আর মুছে দেয়া সম্ভব হয় না। তার পরও নিয়মিত উপেক্ষা করা হয় বিষয়টি। নেহাত আবেগের ফাঁদে পড়ে অনেক টিনএজারই আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে ফেলে। অধিকাংশ তো বুঝতেই পারে না পরিণতি। ফলে পরবর্তী জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কেটে যায় হতাশায়। টিনএজ বয়সের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ দিতে উন্মোচিত হয়েছে নতুন টুল ‘‌ টেক ইট ডাউন’। প্রযুক্তিটিতে বিনিয়োগ করেছে জাকারবার্গের প্রতিষ্ঠান মেটা। ইন্টারনেটে আপলোড হয়ে যাওয়া আপত্তিকর ছবি সরিয়ে নেয়া যাবে এর মাধ্যমে। খবর দ্য গার্ডিয়ান। 

ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত শিশুনিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেন (এনসিএমইসি)। ‘‌ টেক ইট ডাউন’-এর পরিচালনার পেছনে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নির্মাণে ব্যয় হওয়া অর্থের বড় অংশের জোগান দিয়েছে মেটা। টুলের ওয়েবসাইটে যে কেউ অজ্ঞাত পরিচয়ে প্রবেশ করতে পারবে। নিজের সত্যিকার কোনো ছবি আপলোড না করেই তৈরি করা যাবে ছবিটির ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট। কয়েকটি সংখ্যার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ নম্বরই ফিঙ্গারপ্রিন্ট। ‘‌ টেক ইট ডাউন’-এর পরিভাষায় এর নাম হ্যাশ। এ হ্যাশ ব্যবহার করেই যে যে টেক কোম্পানি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত, তাদের ডাটাবেজ থেকে সরিয়ে ফেলা হবে ছবিটি। 

এর মধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউবো, অনলিফ্যানস ও পর্নহাব এই পরিষেবায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যদি ছবিটি অন্য কোনো ওয়েবসাইট বা হোয়াটসঅ্যাপের মতো এনক্রিপটেড প্লাটফর্মে থাকে, তাহলে সরিয়ে নেয়া হবে না। আবার কেউ যদি ছবিটিকে বিকৃত করে ফেলে, ক্রপ করে অন্য ছবিতে রূপান্তর করে ফেলে, তাতে ইমোজি যুক্ত করে কিংবা তা দিয়ে মিম তৈরি করে তখন ছবিটি মূলত নতুন ছবি হিসেবে গণ্য হয়। সেক্ষেত্রে ছবিটি সরিয়ে নিতে নতুন হ্যাশ তৈরি করতে হবে। ভিজুয়ালি একই রকম ছবি শুধু একটি হ্যাশের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। যেমন ইনস্টাগ্রামের ফিল্টার ব্যবহার করা ও না করা উভয় ছবিই একই হ্যাশের মধ্যে।

এনসিএমইসির মুখপাত্র গেবিন পোর্টনয় বলেন, ‘‌যদি কেউ মনে করে তার ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে গেছে, তাহলে তার জন্যই আবিষ্কৃত টুলটি। টিনএজ কেউ কারো সঙ্গে ছবি শেয়ার করে ফেলতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে শুধরে নিতে চায় কিংবা তার কোনো ছবি নিয়ে কেউ হয়রানি করতে পারে। সেদিক বিবেচন তাতেই টুলটির উদ্ভব।’ তার ভাষায় টিনএজাররা পুলিশের আশ্রয় নেয়ার চেয়ে একটা ওয়েবসাইটে বেশি স্বস্তি অনুভব করবে। এটা তার জন্য গোপনীয়তাও অটুট রাখবে। যারা কোনো কিছুতে জড়িত না হয়েই ছবিগুলো মুছে ফেলতে চায়, তারা উপকৃত হবে এখান থেকে। বাস্তব ছবির পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি ছবি ও ডিপফেক নিয়েও কাজ করছে। ডিপফেক হলো বাস্তবকে অনুকরণের প্রযুক্তি। যেখানে কোনো ব্যক্তিকে এমন কিছু বলতে বা করতে দেখা যায়, যা আসলে সে বলেনি বা করেনি।

এনসিএমইসি দীর্ঘদিন অনলাইনে শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে অভিযোগ পেয়ে আসছে। ২০২১ সালে ২ কোটি ৯৩ লাখ অভিযোগ জানানো হয়েছে। ২০২০ সালে জানানো অভিযোগের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি। এদিক বিবেচনায় ফেসবুক এর আগেও একটি টুল তৈরি করতে চেয়েছিল ২০১৭ সালে। তবে বিশ্বস্ততার সূত্রে বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেনি। খুব অল্প সময়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পরীক্ষামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হলেও বাকি দেশে শুরু হয়নি। ২০২১ সালে স্টপ এনসিআইআই নামে টুল উদ্ভাবনে সহযোগিতা করে যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান ইউকে রিভেঞ্জ পর্ন হেল্পলাইনকে। তবে সে উদ্যোগও প্রত্যাশিত সফলতার মুখ দেখেনি। নতুন টুলটির সফলতার জন্য বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান ও ওয়েবসাইটকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। আশার বিষয় হলো এখনো কেউ অস্বীকার করেনি। তবে টুইটার ও টিকটকের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি।    

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন