ক্যান্সারের সব চিকিৎসা এক ছাতার নিচে

ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। গত দুই বছরের মতো এবারও আমাদের প্রতিপাদ্য ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ ক্যান্সার চিকিৎসা একটি ব্যাপক চিকিৎসা। এর মধ্যে সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, ইমিউনো থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, হরমোন থেরাপিসহ অনেক অংশ আছে। সেজন্য একটা সমন্বিত জায়গা দরকার, যেখানে ক্যান্সারের সমন্বিত চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব। অন্যথায় মানুষ বিভ্রান্ত হয়, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দৌড়ায়। চিকিৎসায় গ্যাপ পড়ে যাওয়া, বিলম্বিত হওয়ার কারণে ফলটাও আশানুরূপ হয় না। তাই আমাদের যেসব চিকিৎসা রয়েছে, সেগুলোকে একই ছাতার নিচে নিয়ে এসে মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্যই গড়ে তোলা হয় ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল।

হাসপাতালে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপির একদম অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা খুব সহজেই বলতে পারি, আমাদের হাসপাতালে ক্যান্সারের সব চিকিৎসা রোগীরা এক ছাতার নিচে পেতে পারেন। এটাই হচ্ছে চিকিৎসায় সফলতা পাওয়ার মূলমন্ত্র, যা বাংলাদেশে একমাত্র ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালেই দেয়া সম্ভব হচ্ছে।

সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাবে আমাদের দেশের রোগীরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতেন। এর ফলে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হতো। এখন আমরা সেই পরিস্থিতি থেকে সরে আসতে পারছি। এমনকি শহর থেকে দূরের রোগীরা, যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা থেকে যদি আসেন, দিনাজপুর থেকে আসেন, তার জন্য এখানে থাকারও ব্যবস্থা রয়েছে। রেডিওথেরাপি দেয়ার কারণে দেড় থেকে দুই মাস থাকতে হয়। সময়টায় বিদেশে থাকতে গেলে কী পরিমাণ খরচ করতে হতো! সে সঙ্গে যাতায়াতের খরচও রয়েছে। রেডিওথেরাপি দিতে ছয়-আট সপ্তাহ সময় লাগে, কেমোথেরাপি দিতে চার মাস সময় লাগে। এতদিন ধরে জনের পক্ষে বিদেশে গিয়ে থাকা সম্ভব? আমরা লক্ষ করছি, সে যাওয়ার হারটা কমেছে। আমাদের কাছে অনেকেই আসছেন। আমাদের এখানে চিকিৎসা নিয়ে যেমন তারা সন্তুষ্ট, তেমনি আমরা চিকিৎসা দিয়েও সন্তুষ্ট।

অনেক সময় দেখা যায়, একজন রোগী ভারতে বা সিঙ্গাপুর গেল। ফিরে এসে তার একটা গ্যাপ পড়ে গেল, ফলে চিকিৎসা ব্যাহত হলো। সেই রোগী যদি ছয় মাস পরে আমার বা আমার কোনো সহকর্মীর কাছে আসেন, তখন আমাদের পক্ষে তার একটা ফলপ্রসূ চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। ক্যান্সারের চিকিৎসা সমন্বিতভাবে, একটার পর একটা সময় মেনে করতে হয়। আবার দেখা গেল, চিকিৎসা শেষ হয়ে গেল। কিন্তু তার পরও তাকে ফলোআপে থাকতে হবে। প্রথম দুই বছর রোগটা আবার ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে। তাই সময়টা একটু ঘন ঘন ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। এরপর ধীরে ধীরে ডাক্তারের চেকআপ কমে আসে। পরবর্তী সময়ে পাঁচ বছরের মধ্যে যদি রোগটা আর ফিরে না আসে, তাহলে আমরা বলি মোটামুটি ভালো হয়ে গেছেন। কিন্তু তার পরও তাকে বছরে একবার চেকআপ করতে হবে।

ক্যান্সারের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। অনেকের পক্ষেই তা বিদেশে গিয়ে করা সম্ভব নয়। সামর্থ্যবান অনেকেই বিদেশে যান। যাদের সামর্থ্য নেই, এমন অনেকেও যান। কিন্তু গিয়ে কোনো লাভ হয় না, বরং ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েন। দেশে এখন চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে এবং তা আরো বিস্তৃত হবে আগামীতে, আমরা চাই মানুষ এখানেই চিকিৎসা নিতে পারবে এবং নেবে। আমি আশা করছি, এখানে আগামীতে চিকিৎসার সুযোগ আরো সম্প্রসারিত হবে। মানুষের দোরগোড়ায় আমরা চিকিৎসা পৌঁছে দিতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন