ফের অনিশ্চয়তার আভাস এশিয়ার এলএনজি বাজারে

ছবি: রয়টার্স

চলতি বছরও তীব্র অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে এশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বাজার। সামষ্টিক অর্থনীতি, ভূরাজনৈতিক আবহাওয়াজনিত বিভিন্ন বিষয় জ্বালানিটির সরবরাহ চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসের এক প্রতিবেদনে এমন আভাস মিলেছে।

সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাড়তে থাকা সুদের হার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রয়াস বেশির ভাগ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জ্বালানি চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিদ্যুতের ব্যবহার প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদায়ও এর প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এশিয়ার বেশির ভাগ অর্থনীতির এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে ভয়াবহ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনকি সরকারগুলো সম্ভাব্য মন্দা প্রতিরোধের জোর প্রচেষ্টা চালালেও উদ্বেগ অনিবার্য হয়ে উঠছে।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের প্রত্যাশা, নতুন বছরে বৈশ্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে দশমিক শতাংশ। বিদায়ী বছর যা ছিল দশমিক শতাংশ। বছর প্রবৃদ্ধি কমলেও ২০২৪ সালে তা দশমিক শতাংশে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের বৈশ্বিক প্রধান অর্থনীতিবিদ পল এফ গুয়েনওয়াল্ড বলেন, ২০২৩ সালে আমরা বুঝতে পারব মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রানীতি কতটা সংকোচনমুখী করতে হবে। অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব কতটা গভীর এবং করোনাপরবর্তী অর্থনীতির চিত্র কেমন হতে পারে। আমরা মনে করছি, কভিডপরবর্তী সময় কভিডপূর্ব সময়ের তুলনায় নানা দিক থেকে ভিন্নতর হবে।

চলতি বছর স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম একটি সীমার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ার মূল কারণ চীনের অর্থনীতিতে শ্লথগতি। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটের গ্যাস, পাওয়ার অ্যান্ড ক্লাইমেট সলিউশন বিভাগের পরিচালক ঝি জিং চং বলেন, চীন এরই মধ্যে করোনাসংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। এখন দেশটির অর্থনীতি কত দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় সেদিকেই নজর থাকবে বিশ্ব অর্থনীতির। ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মধ্যেই চাহিদা ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমরা আশাবাদী। তবে স্পট মার্কেটে এলএনজির অস্থিতিশীল বাজারদর এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনো চীনের এলএনজি চাহিদাকে নিম্নমুখী চাপে রেখেছে।

শুধু এশিয়ায় নয়, নতুন বছরে বৈশ্বিক সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরোল। বিনিয়োগস্বল্পতা, ঊর্ধ্বমুখী দামসহ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে থাকবে জ্বালানিটির বাজার।

পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানিতে রাশিয়ার ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আনার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইউরোপ। ব্লকটি এলএনজি আমদানি ব্যাপক হারে বাড়িয়েছে। বিদায়ী বছরের জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে রাশিয়ার চেয়েও বেশি পরিমাণে এলএনজি আমদানি করে। মস্কো ইউরোপে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার পরই আমদানিতে এমন পরিবর্তন দেখা দেয়।

রাশিয়া নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করে। কিন্তু বর্তমানে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ তলানিতে নেমেছে। এমনকি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইইউ বর্তমানে উত্তর আফ্রিকা নরওয়ে থেকে অতিরিক্ত পাইপলাইন সরবরাহের দিকে ঝুঁকছে। আর এসব গ্যাসের বেশির ভাগই আসবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গ্যাস আমদানিতে রাশিয়াকে স্থানান্তর করতেই বাজারে এমন পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট ইরসুলা ফন ডের লিয়েন বলেন, ২০২১ সালে ইউরোপ মোট গ্যাস আমদানির ৪০ শতাংশই ক্রয় করেছে রাশিয়া থেকে, কিন্তু বর্তমানে পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি শতাংশে নেমে এসেছে।

আগামী বছরগুলোয় ইউরোপের আরো বেশি পরিমাণে গ্যাস প্রয়োজন হবে। এতে এশিয়ার সঙ্গে অঞ্চলটির প্রতিযোগিতা বাড়বে। কারণেই সরবরাহ সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন