সাপ্তাহিক পুঁজিবাজার

পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন ৩০২০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে সার্বিকভাবে নিম্নমুখিতা পরিলক্ষিত হয়েছে। সময়ে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। আলোচ্য সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির ব্যাংক, বীমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অধিকাংশ খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গত সপ্তাহে সূচকের পাশাপাশি লেনদেন কমেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ডলার সংকটের কারণে ব্যবসা পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং এতে অধিকাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানির মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তার ওপর দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। সাধারণত বাজার যখন নিম্নমুখী থাকে তখন শেয়ার কেনার চাপ, আর ঊর্ধ্বমুখী থাকলে বিক্রির চাপ থাকে। কিন্তু ফ্লোর প্রাইসের কারণে এখন ক্রয় কিংবা বিক্রয় সবকিছুতেই আগ্রহ হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে ১০ শতাংশ কমে ব্লক মার্কেটে লেনদেনের সুযোগ দিয়ে জারি করা বিএসইসির নির্দেশনাও গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াতে পারেনি। 

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ৮৭ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৮ শতাংশ কমেছে। সূচকটির বর্তমান অবস্থান হাজার ২৬৬ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল হাজার ৩৫৪ পয়েন্টে। সূচকের পতনে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, জেমিনি সি ফুড জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস লিমিটেডের শেয়ারের।

ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৬ দশমিক শূন্য পয়েন্ট বা দশমিক ৬১ শতাংশ কমে হাজার ২০০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল হাজার ২৩৬ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ২০ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৫১ শতাংশ কমে হাজার ৩৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে। ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৯৯টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৪টির, কমেছে ৭৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৬৫টির। এছাড়া লেনদেন হয়নি ১৪টির।

ডিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে হাজার ২০ কোটি লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন ছিল হাজার ৮২২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক্সচেঞ্জটিতে সাপ্তাহিক লেনদেন কমেছে হাজার ৮০২ কোটি ২৯ লাখ টাকার বেশি বা ৪৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে দৈনিক গড়ে ৬০৪ কোটি লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল হাজার ১৬৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির খাতভিত্তিক লেনদেনে শীর্ষে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। ডিএসইর মোট লেনদেনের ২১ শতাংশই ছিল খাতটির দখলে। ১৯ শতাংশ লেনদেন নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ রসায়ন খাত। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিবিধ খাত। খাতের দখলে রয়েছে মোট লেনদেনের ১০ শতাংশ। শতাংশ লেনদেন নিয়ে তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে কাগজ মুদ্রণ খাত। পরের অবস্থানে থাকা সেবা আবাসন খাতের দখলে রয়েছে মোট লেনদেনের শতাংশ।

গত সপ্তাহে ডিএসইর অধিকাংশ খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে পাট খাতে, শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চামড়া খাতে এসেছে দশমিক ৮৭ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা বিবিধ খাতে এসেছে দশমিক ৩৩ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন। এছাড়া প্রধান খাতগুলোর মধ্যে ব্যাংক খাতে দশমিক ২৭ শতাংশ, জীবন বীমা খাতে দশমিক ১৩ শতাংশ, ওষুধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে দশমিক শূন্য শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে গত সপ্তাহে। অন্যদিকে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে ভ্রমণ অবকাশ খাতে, ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কাগজ মুদ্রণ খাতে এসেছে দশমিক ৫৬ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন। এছাড়া ভ্রমণ অবকাশ খাতে এসেছে দশমিক ৫৫ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন।

গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে লাখ ৬৭ হাজার ৭৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকায়। যেখানে সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল লাখ ৭১ হাজার ৫৫৬ কোটি লাখ টাকায়। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন কমেছে হাজার ৪৭৬ কোটি লাখ টাকা বা দশমিক ৫৮ শতাংশ।

অন্যদিকে সিএসইতে গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে ১৮ হাজার ৪৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৮ হাজার ৭৬৩ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে ১১ হাজার ৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে। সিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ৫৬ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে যেখানে লেনদেন হয়েছিল ১১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭৮টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩২টির, কমেছে ৭৪টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭২টির।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন