পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি আরএন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ব্যবসায়িকভাবে টিকে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কোম্পানিটির নিরীক্ষক। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এ মতামত দিয়েছে কোম্পানিটির নিরীক্ষক কাজী জহির খান অ্যান্ড কোম্পানি। পুঞ্জীভূত লোকসান, সম্পদের অপ্রতুলতা ও কোম্পানির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে প্রয়োজনীর অর্থসংস্থানের বিষয়ে অনিশ্চয়তার কারণে নিরীক্ষক এ সংশয় প্রকাশ করেছে।
নিরীক্ষক তার মতামতে জানিয়েছেন, এ বছরের ৩০ জুন শেষে আরএন স্পিনিং মিলসের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি টাকায়। কোম্পানিটির সম্পদের পরিমাণও অপর্যাপ্ত এবং এর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) মাত্র ৬ পয়সা। তাছাড়া কোম্পানির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা রয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে গত বছর কিছু যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এসবিএসি ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র (এলসি) খুলেছিল। যদিও এরই মধ্যে এ ঋণপত্র বাতিল করা হয়েছে। এতে অদূর ভবিষ্যতে কোম্পানির কার্যক্রম আবারো শুরু করা যাবে কি না এ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এসব কারণে কোম্পানিটির টিকে থাকা নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক।
নিরীক্ষক তার মতামতে আরো বলেছেন, কোম্পানিটির আগুনে পুড়ে যাওয়া সম্পদ ও মজুদ পণ্য ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের বীমার আওতায় ছিল, যার পরিমাণ ১৩২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানি জানিয়েছে যে বীমা দাবির অর্থের পরিমাণ চূড়ান্তের বিষয়টি এখনো পর্যন্ত বীমা কোম্পানির পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা হয়নি। পাশাপাশি ক্ষতির পরিমাণ এবং এর বিপরীতে কী পরিমাণ বীমা সুবিধা পাওয়া যাবে এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। যদিও আগুন লাগার পর থেকে তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। ফলে বীমার অর্থ কত সময়ের মধ্যে পাওয়া যাবে সে বিষয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে মনে করছেন নিরীক্ষক।
আরএন স্পিনিং মিলসের কারখানা চালুর উদ্যোগের বিষয়ে নিরীক্ষক তার মতামতে জানিয়েছেন, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বিনিয়োগকারীদের নেয়া সিদ্ধান্ত এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে এ বছরের ২৫ জানুয়ারি প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, কোম্পানি গাজীপুরের ভবানীপুরে ইজারা নেয়া জমিতে পুনরায় কারখানা স্থাপনের স্থান নির্বাচন করেছে। কোম্পানিটির পর্ষদ ইজারা নেয়া জমিতে কারখানা স্থাপনে পূর্ত কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। এ জমিটি সামিন ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের অধীনে রয়েছে। এ কোম্পানিটিকে আরএন স্পিনিং মিলসের একীভূতকরণের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যদিও সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির সময় পর্যন্ত এসব ঘোষণার কোনো ধরনের অগ্রগতি দেখতে পাননি নিরীক্ষক।
সামিন ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড টেক্সটাইল মিলস ও আরএন স্পিনিং মিলসের একীভূতকরণের বিষয়ে নিরীক্ষক তার মতামতে বলেছেন, একীভূতকরণের বিষয়টি হাইকোর্ট, বিনিয়োগকারী এবং ঋণদাতাদের সবাই অনুমোদন করেছেন। অন্যদিকে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিত কোম্পানির ১১তম বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) বিনিয়োগকারীরা বিদ্যমান প্রতি সাতটি শেয়ারের বিপরীতে একটি করে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন কমানোর সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। এ বিষয়টি আদালত, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করার কথা জানানো হয়। এর মধ্যেই সামিন ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড টেক্সটাইল মিলস ও আরএন স্পিনিং মিলসের একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অবশ্য মূলধন কমানোর সিদ্ধান্ত হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বাতিল করে বলা হয়, একীভূতকরণ ও মূলধন কমানোর প্রক্রিয়া যুগপত্ভাবে চলতে পারে না।
প্রসঙ্গত, সামিন ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড টেক্সটাইল মিলস ও আরএন স্পিনিং ফার গ্রুপের দুটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে সামিন ফুড। প্রতিষ্ঠানটির কারখানা গাজীপুর সদরের ভবানীপুরে। কারখানাটিতে ৭৯ হাজার ৮৪৮টি স্পিন্ডলের মাধ্যমে কটন, ভিসকস ও সিভিসি ইয়ার্ন স্পিনিং তৈরি করা হয়।
চার হিসাব বছর ধরেই লোকসানে রয়েছে আরএন স্পিনিং মিলস। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ৬০৭ কোটি, ২০১৯-২০ হিসাব বছরে ৩৪ কোটি, ২০২০-২১ হিসাব বছরে ৬ কোটি ৯৯ লাখ এবং সর্বশেষ ২০২১-২২ হিসাব বছরে ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির। লোকসানের কারণে গত চার হিসাব বছর ধরে কোনো লভ্যাংশ পাচ্ছেন না কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইতে গতকাল আরএন স্পিনিং মিলসের শেয়ার সর্বশেষ ৬ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৫ টাকা ৭০ পয়সা ও ৭ টাকা ৯০ পয়সা।