পশ্চিমবঙ্গেও বাংলাদেশের ওটিটি কনটেন্টের জয়যাত্রা

ফিচার ডেস্ক

মহানগর সিরিজের দৃশ্যে শ্যামল মাওলা ও মোশাররফ করিম

সময়টা এখন ওয়েব কনটেন্টের। কয়েক বছর ধরে ওটিটিতে ভিন্ন ধারার কাজ হচ্ছে। থ্রিলার, ড্রামা, অ্যান্থোলজি কোনো কিছুই বাদ নেই। এর মধ্যে এগিয়ে ছিল কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ। বিশেষত ওটিটি প্লাটফর্ম হইচই পশ্চিমবঙ্গের ওটিটিতে প্রাথমিকভাবে বেশকিছু সিরিজ সিনেমার মাধ্যমে ওটিটিতে সাড়া ফেলে বাংলা কনটেন্ট। এরপর জি ফাইভ অন্যান্য প্লাটফর্মে নতুন ধারার কাজ করার চেষ্টা চলে। ধারায় যুক্ত হয় বাংলাদেশের কনটেন্ট। বাংলাদেশের নির্মাতাদের সংযুক্ত করে পশ্চিমবঙ্গের ওটিটি। আর বাংলাদেশের নির্মাতারা সংযুক্ত হতে না হতেই শুরু হয় চমক। ২০২২ সালে এসে কলকাতার পথে-ঘাটে আড্ডায় চর্চিত হয় বাংলাদেশের নির্মাতাদের ওয়েব কনটেন্ট। তাকদীর, মহানগর, কারাগার, সাবরিনা, বলি, লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলমেন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দর্শক নির্মাতারাও ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

হইচইকে কেবল পশ্চিমবঙ্গের ওটিটি প্লাটফর্ম বলা যায় না। হইচইয়ের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশে। পশ্চিমবঙ্গের টিভি সিরিয়ালের যেমন একটি দর্শকশ্রেণী আছে, তেমনি ওটিটি কনটেন্টের আলাদা একটি দর্শকশ্রেণী তৈরি হয়। দর্শক টানা কিংবা কনটেন্টে বৈচিত্র্য আনার জন্যই যুক্ত করা হয় বাংলাদেশের কনটেন্ট। শুরুটা হয়েছিল বলা চলে অমিতাভ রেজা চৌধুরীকে দিয়ে। ম্যাজিক রিয়ালিজম আর বাস্তবতার মিশেলে তৈরি করেছিলেন ঢাকা মেট্রো। শহর উপশহরের গল্প মিলিয়েছিলেন তিনি। তবে সেটা বেশ অনেকদিন আগের কথা। পশ্চিমবঙ্গের ওটিটিতে চলছিল ব্যোমকেশ, একেনবাবু থেকে হ্যালো, মন্টু পাইলটের মতো সিরিজ। সিরিজগুলো সে সময় জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কলকাতার পূজামণ্ডপেও ওসি হারুনের ছবি।

আশফাক নিপুণের মহানগর এসেই অনেক হিসাবনিকাশ বদলে দিয়েছিল। শহুরে বাস্তবতার গল্প তিনি বলেছেন। কলকাতার সিরিজে শহর দেখানোর চেয়ে থ্রিল আর জটিলতাই প্রধান। সেখানে মহানগরের গল্পটা কঠিন হলেও সত্য, বাস্তব আর জীবনঘনিষ্ঠ। একই ঘটনা ঘটেছে সাবরিনা, তাকদীরের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের সিরিজ ভালো করার পেছনে এসব কারণের কথাই বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা অতনু ঘোষ। আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ওপারের সিরিজ পরিচালকরা এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন। বিষয়গত অভিনবত্ব না থাকলেও দেখা দেখানোর প্রচেষ্টায় এমন কিছু রয়েছে, যা বাংলার সিরিজে পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়ত, ওপারের সিরিজে নির্মাণগত জায়গাটি নাটক বা সিরিয়ালের মতো নয়। তা একান্তভাবেই সিনেমাটিক। বড় পর্দার ভাষাকেই মুঠো পর্দায় নিয়ে আসছে তকদীর বা কারাগার।

বাংলাদেশের ওয়েব কনটেন্ট অভিনেতাদের প্রশংসা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি। কেবল ভারতভিত্তিক ওটিটিই নয়, বাংলাদেশের ওটিটি প্লাটফর্মের কনটেন্টও পশ্চিমবঙ্গে পরিচিতি পাওয়ার পাশাপাশি প্রশংসিত হচ্ছে নির্মাণ, গল্প অভিনয়ের জন্য। আনন্দবাজার পত্রিকার অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়ের মতে, চিত্রনাট্য লেখার গুণও একটি কারণ। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে অতনু বলেছেন, বাংলাদেশের ওয়েব কনটেন্টের একটি গুণ হলো এর উপাদানগুলো আরোপিত মনে হয় না। হইচইয়ের ভূতপূর্ব কনটেন্ট চিফ অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, পশ্চিমবঙ্গের কনটেন্ট নির্মাতাদের জীবিকা এর ওপরেই নির্ভর করে। তারা অন্য কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত নন। তাই প্রযোজকদের দেয়া কিছু রীতিনীতি মেনেই কাজ করতে হয় তাদের। বাংলাদেশের অনেক নির্মাতার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তা নয়।

মূলত কনটেন্ট নির্মাতার স্বাধীন মতের কথা বলতে চান। তবে সত্যি বলতে সে স্বাধীনতা নির্মাতাদের সব ক্ষেত্রে থাকে এমন নয়। কিন্তু সেই বাধ্যবাধকতার মধ্যেও বাংলাদেশের লেখক, নির্মাতারা নিজস্বতা বজায় রাখতে পারছেন। ক্লিশে হয়ে যাননি। চিত্রনাট্য অভিনয়েও তারা নিরীক্ষা করছেন। পুরো ব্যাপারটি সম্ভব হচ্ছে নির্মাতাদের এই টিমওয়ার্কের কারণে। তাই তৈরি হচ্ছে কাইজার, কারাগারের মতো সিরিজ। পশ্চিমবঙ্গের প্লাটফর্মগুলোও তাই বাংলাদেশের নির্মাতাদের কাছ থেকে নতুন কাজ চাইছেন। কেননা একেনবাবু বা ব্যোমকেশের পাশাপাশি ওসি হারুন, কাইজারও তাদের প্রিয়। ইন্দুর মতো তারা সাবরিনাকেও ভালোবাসে। তাই পূজামণ্ডপের তোরণে দেখা যায় ওসি হারুন কাইজারকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন