পদ্মার ভাঙনে দৌলতদিয়ায় বন্ধ হলো আরেক ফেরিঘাট

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী

ভাঙনের কবলে পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া দৌলতদিয়ার ৩ নম্বর ফেরিঘাট ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মার তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ঘাট এলাকার সিদ্দিক কাজীরপাড়া এলাকায় বুধবার গভীর রাত থেকে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এতে মুহূর্তের মধ্যে ১০টি বসতবাড়িসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ২০০ মিটার এলাকা। ভাঙনের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে দৌলতদিয়ার নম্বর ফেরিঘাট। ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে শতাধিক বসতবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

গতকাল সকালে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৪ সালে ভাঙনের পর থেকেই দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের নম্বর ঘাট দুটি বন্ধ রয়েছে। সেখানে নেই কোনো পন্টুন। শুধু সংযোগ সড়ক পড়ে আছে। নম্বর ঘাটটি গতকাল ভোর থেকে ভাঙনের কারণে বন্ধ রয়েছে। পন্টুনটি রশি দিয়ে উঁচু করে বেঁধে রাখা হয়েছে। নম্বর ঘাটসংলগ্ন সিদ্দিক কাজীর পাড়ায়ও দেখা দিয়েছে ভাঙন। বসতঘরের মালপত্র সরাতে ব্যস্ত বাসিন্দারা। আবার সেপ্টেম্বর থেকে ভাঙনের কারণে বন্ধ নম্বর ফেরি ঘাট। সচল রয়েছে , নম্বর ঘাট। সব মিলিয়ে দৌলতদিয়ার সাতটি ঘাটের মধ্যে তিনটি ঘাট দিয়ে চলছে যানবাহন পারাপার।

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সিদ্দিক কাজীর পাড়া এলাকার বাসিন্দা রুবিয়া বেগম বলেন, একসময় কুশাহাটা এলাকায় নিজ বাড়িতে স্বামী-সন্তান নিয়ে বাস করতেন। প্রথমে তার জমি, বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হলে অন্যের জমিতে ভাড়া নিয়ে বসতি গড়েন তিনি। সর্বনাশা পদ্মায় সাতবার ভেঙেছে তার বসতবাড়ি। ভাঙতে ভাঙতে তার ঘরের খুঁটি, টিনসহ আসবাব এখন আর ব্যবহার উপযোগী নেই। তাও ভেঙে গিয়েছে গতকালের ভাঙনে।

একই এলাকার বাসিন্দা হাসিনা খাতুন বলেন, ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা চাচি, খালা, ফুপু বলে ভোট নেন। কিন্তু পরের পাঁচ বছর তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় না। ভাঙনের কবলে পড়ে আমরা না খেয়ে আছি। অথচ একটু শুকনো খাবার নিয়েও কেউ আসেনি। একমুঠো চালও কেউ দেয়নি। কিছু না দিক পাশে এসে সান্ত্বনা দেবে সে মানুষটাও নেই।

খালেদা আক্তার নামে ৬০ বছর বয়সী এক নারী বলেন, পদ্মার ভাঙনে নিঃস্ব আমরা। একটু গরু-ছাগল পালন করি। চর থেকে ঘাস কেটে তাদের বাঁচিয়ে দু-একটি টাকা আয় করি সেটিও এখন মরণফাঁদ। ঘরের কোণে পদ্মা হওয়ায় রাতে ডাকাত আতঙ্কে পাহারা দিতে হয়। ট্রলার নিয়ে ডাকাতরা এসে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি সব নিয়ে যায়।

যে সিদ্দিক কাজীরপাড়া এলাকায় চলছে ভাঙন সে সিদ্দিক কাজী বলেন, একসময় তার পাড়ায় ছিল ৭০০ পরিবারের বসবাস। ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। প্রতি বছরই বাসিন্দারা ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র চলে যায়। বর্তমানে পাড়ায় ১০০ পরিবার বাস করছে। বছর মনে হয় তারা আর থাকতে পারবে না। এখন সরকার যদি একটু দৃষ্টি দেয় তবেই এখানে বসবাস সম্ভব। না হলে দৌলতদিয়া ঘাটের সব ঘাটই বিলীন হয়ে যেতে পারে।

এদিকে ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলতে শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিএর আরিচা সেক্টরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ পানি কমায় শুরু হয়েছে ভাঙন। এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে কারো হাত নেই। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন থেকে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। নদীভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব না যতটুকু পারা যায় সাধ্য অনুযায়ী প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন