সংবাদ সম্মেলনে হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলে

একযোগে কাজ করলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ সফরে এসে সংস্থাটির প্রধান মিশেল ব্যাশেলে গতকাল তথ্য জানিয়েছেন। চারদিনের সফরের শেষদিন গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক, জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনৈতিক, সামাজিক মানবিকএসব নিয়ে সামনের দিনগুলোতে মানবাধিকার বিষয়ক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সবাই একযোগে কাজ করলে যা মোকাবেলা করা সম্ভব।

বাংলাদেশের প্রশংসা করে মিশেল ব্যাশেলে বলেন, সামাজিক অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশটি মানবাধিকার বিষয়ক অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিষয়ে আমার সঙ্গে সরকার সুশীল সমাজের কথা হয়েছে। সবাই একযোগে কাজ করলে মানবাধিকার বিষয়ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা স্বাধীনতা জোরদার এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশ করার অধিকার এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের রক্ষা নির্বাচনকালীন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

জাতীয় সংলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ইউএনএইচসিআর হাইকমিশনার বলেন, দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সমস্যা আগামী বছর হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কেও আমরা সরকারকে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছি। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে মিশেল বলেন, আলোচনায় আমি আহ্বান জানিয়েছি যেন অভিযোগ অস্বীকার না করে আমলে নেয়া হয়। স্বাধীন নিরপেক্ষ ম্যাকানিজমের মাধ্যমে সেগুলো তদন্ত করারও আহ্বান জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

মিশেল আরো বলেছেন, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের সময় সুনাম অর্জন করছে। তাই বাংলাদেশ সরকারের এমন একটা ব্যবস্থা করা উচিত যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানবাধিকার সমুন্নত রেখে কাজ করতে পারে। এখানে তাদের বিরুদ্ধে কেন এমন অভিযোগ আসবেএমন প্রশ্নও রাখেন ইউএনএইচসিআর প্রধান। তিনি বলেন, গুম, আইনবহির্ভূত হত্যা  অত্যাচারের অভিযোগ কয়েক বছর ধরে শোনা যাচ্ছে এবং এর অনেকগুলোই র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) করেছে বলে অভিযোগ। আমি মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্তের কথা জানিয়েছে।

গুমের বিষয়ে ঢিলেঢালা তদন্তের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে একটি স্বাধীন বিশেষায়িত ম্যাকানিজম প্রতিষ্ঠা করার। যেখানে সবার সঙ্গে কথা বলে তদন্ত করা হবে। আমার অফিস বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়েও সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মিশেল বলেন, আমার অফিস বিষয়ে প্রয়োজনীয় কয়েকটি সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিশেল ব্যাশেলে বলেন, আমি কক্সবাজার সফর করেছি। সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, তারা ফেরত যেতে চায়, যদি সেখানকার পরিস্থিতি ভালো থাকে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানকার পরিস্থিতি এখনো সহায়ক হয়নি। যদি এখন ফেরত পাঠানো হয় তবে তারা আবার ফেরত আসবে বলেও তিনি জানান।

মিশেল বলেন, আমি এমন এক সময় সফর করছি যখন কভিড সংকট শেষ হয়নি, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। আশা করি, সফরের মাধ্যমে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রক্ষার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের যে কার্যক্রম রয়েছে সেটি আরো জোরদার হবে।

সফরের শেষ দিন গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মিশেল ব্যাশেলে। এরপর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) আয়োজনে নিউ ফ্রন্টিয়ার্স অব হিউম্যান রাইটস: ক্লাইমেট জাস্টিস ইন পারসপেক্টিভ উইথ ইয়ং স্কলার্স শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন। সংবাদ সম্মেলনের পর বিএনপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন মিশেল ব্যাশেলে।

চারদিনের সফরে মিশেল পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পও পরিদর্শন করেন তিনি। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলের সম্মানে মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে টাউন হল মিটিং নৈশভোজের আয়োজন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেন। সেখানে মন্ত্রী, রাজনীতিক, কূটনীতিকসহ বিশিষ্টজনেরা ব্যাশেলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন