সাতসতেরো

বয়সের শিক্ষা বনাম শিক্ষার বয়স

ড. মো. আব্দুল হামিদ

সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। এলাকার এক কোচিং সেন্টারের পরিচালক খুব করে ধরলেন যেন তার ওখানে পড়াই। একপর্যায়ে রাজি হলাম। কয়েকদিন পরেই ছিল নতুন ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম। সেখানে তিনি খুব গর্বভরে ঘোষণা করলেন যে, এখন থেকে আমি সেখানে ক্লাস নেব। খুব সম্ভবত এলাকায়ভালো ছাত্রহিসেবে পরিচিতি থাকায় তিনি সেদিন তেমনটা করেছিলেন।

সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় এক মুরব্বি। চুল-দাড়ি সবই সাদা, কথা বলতেন কম। অনুষ্ঠান শেষে বিদায়ের আগে হাতটা ধরে বললেনশোনো, আল্লাহর নবীকেও কিন্তু ৪০ বছরের আগে নবুওয়াত দেয়া হয়নি। শিক্ষক হওয়া মানে শুধু কোনো বিষয় ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা কিংবা সমস্যার সমাধান করতে পারা নয়। বরং শিক্ষকতাকে সর্বাঙ্গীণভাবে ধারণ করা ব্যক্তিজীবনে সেই ইন্টেগ্রিটি বজায় রাখা। সেদিন সবিনয়ে শুধু বলেছিলাম, আমার জন্য দোয়া করবেন।

সেই কোচিংয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও ছিল। অর্থাৎ বয়সের দিক থেকে মাত্র এক ব্যাচ জুনিয়রদের ক্লাস রুমে পড়াতে হবে। সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছাৎরীও ছিল। বিষয়গুলো বিবেচনা করেই হয়তো তিনি সেদিন আমায় উপদেশ দিয়েছিলেন। ২৭ বছর পরেও সেদিনের কথা শেয়ার করছি। তার মানে তার সেই উপদেশ কখনো ভুলিনি। নানা সীমাবদ্ধতায় সব মানতে পারি না। কিন্তু ভেতরে বোধটা কাজ করে।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের বছর তিনেকের মাথায় অন্য এক বিভাগের স্নেহভাজন এক ছাত্র জানালসে একটা বই লিখেছে। বলল, তার পাণ্ডুলিপিটি পড়ে মন্তব্য করলে তার বিশেষ উপকার হয়। সে তখন সম্ভবত অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ত। অর্থাৎ বয়স ২০ বছরের বেশি নয়। তাত্ক্ষণিক কিছু পাতা উল্টে দেখলাম। জীবনের নানা আঙ্গিক নিয়ে বইয়ের একেকটি অধ্যায়। একটির শিরোনাম ছিলনারী

সেটা দেখে একটু হেসে বললাম, বিয়ে করেছ? সরাসরি এমন প্রশ্নে সে খুব লজ্জা পেয়ে নেতিবাচক জবাব দিল। পর্যন্ত প্রেম করেছ কয়টা? বেচারা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বলল, একটাও না! তখন বললাম, তার মানে পর্যন্ত তুমি নারী বলতে গভীরভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছ তোমার মা বোনদের, তাই না? সে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। তখন বললাম, জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করেনারীসম্পর্কে উপসংহারে পৌঁছে গেলে?

দুনিয়ায় মা হলো সর্বংসহা। তুমি যেমন আচরণই করো না কেন, বিনিময়ে পাবে অকৃত্রিম ভালোবাসা আর দোয়া। অন্যদিকে বোনেরা হলো একেকটা আদরের ফ্যাক্টরি। তোমার শত অন্যায়, অগ্রহণযোগ্য আচরণকে উপেক্ষা করেও তারা শুধু তোমার ভালো দিকগুলো দেখতে পায়। সেটাকে বড় করে সবার সামনে উপস্থাপন করে তোমার পক্ষে সাফাই গায়। ফলে সেই অভিজ্ঞতায় ভর করে নারী বিষয়ে লেখা কি ঠিক হবে?

তাহলে প্রেমিকাকে দিয়ে কি বোঝা সম্ভব’—সে জানতে চাইল। একটু ভেবে বললামনা, সেটাও সম্ভব নয়। কারণ মানুষ প্রেম পর্যায়ে ঘোরের মধ্যে থাকে। আকাশ-নদী-ফুল-পাখির মতো সবকিছুই ভালো লাগে। খারাপ বা নেতিবাচক দিকগুলো তাদের কাছে পাত্তা পায় না। নর্দমার পাশে গাছের ছায়ায় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতে পারে! প্রেমিকের উশকোখুশকো চুল, পোশাকের উত্কট গন্ধও দামি পারফিউমের মতো লাগে। তাছাড়া সে সময় উভয় পক্ষ অতি দক্ষতায় নিজেদের ভালো দিকগুলো পরস্পরের কাছে উপস্থাপন করে। ফলে ভালোবাসার মানুষটির শুধু ভালো দিকগুলো চোখে পড়ে। তার হাজারো সীমাবদ্ধতাকেও অনায়াসে অবজ্ঞা করা যায়!

কিন্তু বন্ধু-সহপাঠীদের অনেকেরই প্রেমিকাকে বিয়ের স্বল্প দিনের মধ্যে অপ্রত্যাশিত মাত্রায় বদলে যেতে দেখেছি! তাই দাম্পত্য জীবনের অভিজ্ঞতা ছাড়া বিষয়ে তোমার ভাবনাগুলো প্রকাশ না করাই ভালো হবে। ব্যাপারে আমার অনুরোধ হলো অধ্যায় এখনই প্রকাশ করবে না। যত্ন করে সেটা সংরক্ষণ করবে। তোমার বিয়ের পাঁচ বছর পর লেখাটা আবার পড়বে। সেদিন তোমার মনে যে প্রতিক্রিয়া হয়, সম্ভব হলে আমাকে জানিও। সেই ঘটনার ১৫ বছর পার হলেও সে আমাকে কিছু জানায়নি!

জাপানি ব্যবস্থাপনায় এক চর্চা বেশ জনপ্রিয়। সেটা হলোএকই পদে সমযোগ্যতার দুজন আবেদন করলে তারা যার বয়স বেশি, তাকে সেই পদে নিয়োগ দেয়। তাদের সহজ যুক্তি হলোসেই মানুষটি একদিনের জন্য হলেও পৃথিবীকে বেশি দেখেছে। জীবন সম্পর্কে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা বোধ অন্যজনের থেকে পোক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে মেধা দিয়ে অভিজ্ঞতাকে অতিক্রম করা যায় না। হয়তো সে কারণেই জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো আকস্মিক দেউলিয়া হয়ে যায় না; যেটা ইউরোপ-আমেরিকায় অহরহ ঘটে থাকে।

প্রযুক্তির আশাতীত উন্নয়ন ব্যাপক বিস্তার পূর্ববর্তী বহু প্রজন্মের প্রচলিত রীতিনীতি, পদ্ধতি বিশ্বাসে আকস্মিক আঘাত হেনেছে। ফলে অনৎকেে যেভাবে খুশি সেভাবেই সফল হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তিপণ্য (ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ওয়েবসাইট প্রভৃতি) ব্যবহার করছে। মিডিয়ার বহুমুখী বিস্তারের প্রবণতা প্রতিষ্ঠিত বহু ধারণা পদ্ধতিকে বেশ দ্রুত অকার্যকর করে তুলছে।

তবে ব্যাপক সম্প্রচার ক্ষমতাসম্পন্ন শক্তিশালী হাতিয়ার হাতের মুঠোয় চলে আসায় অনেকে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন। ফলে স্বল্প সময়ে খ্যাতিলাভের আকাঙ্ক্ষায় যা তা করছেন। বড়দের পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি বা নিজেকে মহান করে উপস্থাপনের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে শিশুদের ব্যবহার করার প্রবণতা। এতে সেই শিশুদের ভয়ংকর ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা খুব সম্ভবত সেটা ধরতে পারছেন না। শিশু বক্তা, রিয়েলিটি শো বিজয়ী, স্পোকেন ইংলিশ টিচিং পেরিয়ে সেই আকাঙ্ক্ষা এখন হোয়াইট হাউজ পর্যন্ত পৌঁছেছে!

পৃথিবীর প্রত্যেক জীবের জন্ম বিকাশের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া রয়েছে। যেমন কোনো শিশু নির্ধারিত সময়ের আগে প্রসব হলে জন্মপরবর্তী নানা জটিলতা দেখা দেয়। কারণ তার পূর্ণতা লাভের কিছুটা সময় তখনো বাকি ছিল। আবার ভাবুন, পতিতালয়ে কিশোরীদের দেহে বিশেষ হরমোন ইনজেক্ট করে স্বাস্থ্যবান বানানো হয়। তাতে কিছুদিন তাদের হূষ্টপুষ্ট দেখালেও দীর্ঘমেয়াদে নানা জটিলতা বাড়ে। তাদের অধিকাংশই ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়। কিন্তু কেউ তাদের খবর রাখে না। কারণ সিস্টেমটাই এমনস্বার্থ আছে যতক্ষণ, আদর-আপ্যায়ন ততক্ষণ। প্রয়োজন শেষে জাস্ট ছুড়ে ফেলা হবে।

এক্ষেত্রে অতি আলোচিত কয়েকটি ঘটনায় আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করি। দেশের অধিকাংশ মানুষের ধর্মচর্চায় ঘাটতি থাকলেও তারা ধর্মভীরু। ফলে ইসলামী জলসাগুলোয় ব্যাপক লোকসমাগম হয়। প্রবণতা লক্ষ করে কিছু ব্যক্তি তাদের কম বয়সী শিশুকে স্টেজে বসিয়েশিশু বক্তা তকমা পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। স্পষ্ট করে কথা বলতে শেখেনি। টয়লেট শেষে নিজে পরিষ্কার হতে পারে না। এমনকি হয়তো সুন্নতে খত্না হয়নি। এমন শিশুদেরভাইরাল বক্তাবানিয়ে ফেলা হলো। তাদের কেউ কেউ নিজেকে অপ্রতিরোধ্য ভাবতে শুরু করল। প্রকাশ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংবিধানকে অসম্মান করে কথাও বলে ফেলল! নানা কারণে এখন সেই প্রবণতা কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছে।

আরেকটা ছিল রিয়েলিটি শোর মাধ্যমে রাতারাতি তারকা বানানোর প্রকল্প। তাদের অনেকের অভিভাবক রীতিমতো ক্রেজি হয়ে উঠেছিলেন। এসএমএসের টাকা জোগাতে তারা ভিটামাটি বিক্রি করে হলেও সন্তানকে চ্যাম্পিয়ন বানাতে হবে! এতে ফলাফল তো দৃশ্যমান। তবে সবচেয়ে ক্ষতিটা হয় সবার অলক্ষে। স্বল্প বয়সে প্রয়োজনীয় দক্ষতা গুণাবলি অর্জন ছাড়াই তারা নিজেদেরস্টারভেবে হাওয়ায় ভাসতে থাকে। কিন্তু সেই সিজন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভূপতিত হয়। তার পরও অনেকের হুঁশ হয় না। চলতে থাকে টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা। তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা কাজে লাগিয়ে নানা অনৈতিক কাজের পাশাপাশি বিদেশে পাচারের ঘটনাও মাঝেমধ্যে শোনা যায়।

আজকাল শক্তিশালী মিডিয়া হাতের মুঠোয় থাকায় অতি অল্প বয়সেই সেলিব্রিটির তকমা পেতে বহু মা-বাবা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। জ্ঞান দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় অপেক্ষা করতে তারা রাজি নন। কেউ প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই জ্ঞান বিতরণে বই লিখে ফেলছে। বইমেলায় এসেভক্তদের সঙ্গে নানা কায়দায় পোজ দিয়ে ছবি তুলছে। কেউ বা টক শো উপস্থাপনা করতে গিয়ে তার বয়সের অনুপযোগী বিষয়ে কথা বলছে। রিয়েলিটি শোতে ছয় বছরের শিশু গেয়ে উঠছেবুকে বড় জ্বালা’...!

বলতে পারেন প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া, প্রকাশক বা ইভেন্ট আয়োজকরা কেন তাদের সুযোগ দিচ্ছে? এটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কারণ তাদের দরকার কিছু আইটেম। একসময় আশরাফুলকে নিয়ে সর্বদা মাতামাতি করেছে। তার বিচ্যুতির পর রাতারাতি তারা সাকিবকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এতে কর্তৃপক্ষের কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু আশরাফুলরাই জানে লাইমলাইট থেকে ছিটকে পড়ার পরে তাদের কী দুঃসহ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়!

বহু বছর আগে এক নাটক দেখেছিলাম। আসাদুজ্জামান নূর তানিয়ার শিশুকন্যা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। দরিদ্র মা-বাবা সন্তানের চিকিৎসার অর্থ জোগাতে পাগলপ্রায়। তখন এক বাটপার লোভনীয় এক প্রস্তাব নিয়ে আসে। সেটা হলোতার সন্তানকে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রমোট করা হবে। দেশ-বিদেশে অবস্থানকারী বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চাওয়া হবে। সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থের একাংশ সেই লোক কমিশন বাবদ নেবে। বাকিটা পাবেন সন্তানের পিতা-মাতা।

তারা প্রস্তাবটা গ্রহণ করে। একপর্যায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আসতে থাকে। বাবা প্রাপ্ত অর্থের মোহে পড়ে যান। এখনই চিকিৎসা করালে মেয়ে সুস্থ হয়ে যাবে। তখন টাকা আসা বন্ধ হয়ে যাবে। এটা ভেবে সে ইচ্ছাকৃতভাবে সন্তানের চিকিৎসার পর্যাপ্ত অর্থ হাতে আসার পরেও গড়িমসি করতে থাকেন। একসময় বিনা চিকিৎসায় মেয়েটা মারা যায়!

আজকাল অনেক মা-বাবা (হয়তো না বুঝেই) নিজেদের সন্তানকে তেমন দাবার ঘুঁটিতে পরিণত করেছেন। নিজেদের যশ-খ্যাতি অর্জনের জন্য বড় নির্মমভাবে সন্তানদের শৈশব-কৈশোরকে ছিনতাই করছেন। যে সময়ে শিশুটির সমবয়সীদের সঙ্গে হেসে-খেলে বেড়ানোর কথা, শৈশব স্মৃতিকে সমৃদ্ধ করার কথা, তখন তাদের সঙ সাজিয়ে নানা জায়গায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় দুর্বোধ্য সব বিষয় মুখস্থ করিয়ে তাদের বিশেষ প্রতিভাবান হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু ঠিক কতদিন সেই শিশুরা এটা নিতে পারবে, ভেবেছেন কখনো?

গোটা দুনিয়ায় কোনো ডিগ্রি অর্জন বা পেশায় যাওয়ার জন্য নির্ধারিত কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। খুব সহজ দৃষ্টান্ত হলোডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি থিসিস উত্পন্ন করতে হবে এবং তা নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্বীকৃত হতে হবে। কোনো কারণে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলেজ্ঞানতাপসহওয়া গেলেও তাকে কিন্তুডক্টরবলা যায় না।

তবে হ্যাঁ, বিশেষ কোনো অবদানের জন্য অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়ার রীতি চালু আছে। কিন্তু সেটা ওই সমাবর্তন অনুষ্ঠান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। তারপর তিনি নিজেও কখনো সেই ডিগ্রির কথা গর্বভরে প্রচার করেন না। কারণ তিনি জানেন, এটা থিসিস লিখে, জ্ঞানের বিশেষ শাখায় অবদান রাখার মাধ্যমে অর্জিত হয়নি। এতে দাতা গ্রহীতা উভয় পক্ষের মর্যাদা বাড়ে বৈ কমে না।

ঠিক তেমনিভাবেপ্রফেসরশব্দটা বিশ্বব্যাপী শিক্ষকতা পেশার সর্বোচ্চ সম্মানিত পদ বলে গণ্য। একজন শিক্ষক লেকচারার থেকে ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপক হতে পারেন। আবার সরাসরি তাকে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান তাকে ওই পদে নিযুক্ত করতে হবে। এটা (তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি) কবি, গায়ক বা ম্যাজিশিয়ানের মতো নয়। শুধু চর্চা করতে করতে আপনি একজনস্বঘোষিত অধ্যাপক হতে পারেন না।

সম্প্রতি আলোচনায় আসা এমন এক ব্যক্তির কিছু ভিডিও পাঠিয়ে একজন মন্তব্য করতে বলেছেন। আমি তাকে বললাম, যে দেশে বসে দাবি করা হচ্ছে সেখানকার একজনপ্রফেসরএর সুদীর্ঘ শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, পাবলিকেশন অথবা পেটেন্ট সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনার ধারণা আছে। তাছাড়া সেই শিশু বর্তমানে কোন প্রতিষ্ঠানে কোন ক্লাসে পড়ছে, তথ্যও স্পষ্ট নয়! তার কোনো তৎৎব বা মতবাদ স্বীকৃত কোনো জার্নালে প্রকাশ হয়নি। কোনো প্রতিষ্ঠান তাকে কোনো কোর্স পড়ানোর দায়িত্ব দেয়নি।

তার মানে কী? সে কি প্রচলিত পদ্ধতির লেখাপড়ার ঊর্ধ্বে উঠে গেছে? সেটা হলে তাকেআধ্যাত্মিক গুরুহিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা সহজ হবে। কারণ তখন কেউ শিক্ষাগত যোগ্যতা বা প্রাতিষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তির প্রশ্ন তুলবে না। তাছাড়া নির্ধারিত প্রশিক্ষণ, দেশ-বিদেশে কোর্স সম্পন্ন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছাড়া আজ থেকে যদি সেই ভদ্রলোক নিজেকেজেনারেলবলে পরিচয় দিতে শুরু করেন, তবে কি বিষয়টা হাস্যকর হয়ে যায় না?

যুগে যুগে দুনিয়ায় অসামান্য প্রতিভার অধিকারী কিছু মানুষের জন্ম হয়েছে। আপনার সন্তানও তেমনটা হতেই পারে। কিন্তু তাকে এখনই মহামানবরূপে প্রতিষ্ঠায় আপনাদের কেন তর সইছে না? একটা ফুল বিকাশের সময়টুকু তো দিতে হবে। তার আগেই সেটা ছিঁড়ে দুনিয়ার সবচেয়ে দামি ফুলদানিতে রাখলেও স্বল্প দিনের মধ্যেই তা নেতিয়ে পড়বে। তেমনটা ঘটলে দিন শেষে ক্ষতিটা মা-বাবারই হবে। তাই আমরা সন্তানদের বয়সের শিক্ষার প্রতিও সমান গুরুত্ব দিই। তাতে লাভ না হলেও আখেরে ক্ষতির সম্ভাবনা কম।

 

. মো. আব্দুল হামিদ: শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষা স্বপ্ন ক্যারিয়ারবইয়ের লেখক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন