মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ আদালতে উপস্থাপনের সুযোগ আসছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ আদালতের বিবেচনায় নেয়ার বিধান রেখে এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২২-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে আদালতের রায়ে বাজেয়াপ্ত যুদ্ধাপরাধীর বাড়ি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হবেএমন বিধান রেখে পরিত্যক্ত সম্পত্তির বাড়ি (সম্পূরক বিধানাবলি) আইন, ২০২২-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব অনুমোদন দেয়া হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয় থেকে মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ আদালতের বিবেচনায় নেয়ার বিধান রেখে এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২২-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত কভিডের পর থেকে অনলাইনে মামলা-মোকদ্দমা চলছিল। এর ফলে সাক্ষ্যপ্রমাণ সবই অনলাইনে আসছিল। কিন্তু আমাদের এভিডেন্স অ্যাক্টে আবার রকম ডিজিটাল এভিডেন্সের সরাসরি কোনো বিধান ছিল না। কেউ যদি মামলায় হেরে যেত, সে যদি আবার আপিল করে ওপরের কোর্টে, সেক্ষেত্রে আইনি কিছু জটিলতা হওয়ার সুযোগ ছিল। এটা অনেকদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। এজন্য তারা এটা নিয়ে এসেছে। এখন থেকে ডিজিটাল যে এভিডেন্স, সেগুলোও গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে যাতে কেউ ফলস বা ম্যানিপুলেটেড এভিডেন্স পুটআপ করতে না পারে, এজন্য প্রয়োজনে কোর্ট যদি মনে করে আপত্তিজনক কিছু আছে বা কেউ আপত্তি করলে তারা এটাকে ফরেনসিক করে দেবে। এটা করলে বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে। কেউ একটা ম্যানিপুলেটেড এভিডেন্স দিল, এটা কিন্তু বাঁচার কোনো উপায় নেই। কারণ ফরেনসিক করলেই ধরা পড়ে যাবে। বিশেষ করে ডকুমেন্টের ফরেনসিক কিন্তু দুই-চার মিনিটেই করা যায়।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, একটু সময় লাগে ভিডিওর ক্ষেত্রে, তাও খুব বেশি সময় লাগে না। আমাদের পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি আছে দেশে। বিসিসির (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল) কাছেও খুব হাই টেকনোলজি আছে। এগুলো বিভিন্ন জায়গায় সরকার সুবিধামতো ছড়িয়ে দিয়ে যে ডিজিটাল সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে, সেগুলো যদি কোর্ট বা কোনো পক্ষ মনে করে আপত্তি আছে, তাহলে ফরেনসিক করে নেবে।

সুতরাং টুইস্ট করার কোনো উপায় নেই। কেউ যদি টুইস্ট করে তাহলে আমাদের পেনাল কোডের ২১১ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্যের বিষয় আছে। আর ডিজিটাল অ্যাক্টেরও ৫৭ ধারা আছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরিত্যক্ত সম্পত্তির বাড়ি (সম্পূরক বিধানাবলি) আইন, ২০২২-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৮৫ সালের অধ্যাদেশের ভিত্তিতে পরিত্যক্ত সম্পত্তির বিষয়টি পরিচালিত হয়ে আসছিল। ১৯৭১ সালে যারা দেশ ত্যাগ করে চলে গেছে, তাদের সম্পত্তি পরিত্যক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। আগে বিধিবিধান অনুসরণ করে পরিত্যক্ত সম্পত্তি পরিচালনা করা হতো। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৫ সালে একটি অধ্যাদেশ করা হয়। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশকে নতুন আইন হিসেবে আনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, নতুন আইনটি আগের মতোই হচ্ছে, ছোটখাটো দু-একটি সংশোধন আনা হয়েছে। পরিত্যক্ত সম্পত্তিগুলো দু-ভাগ করা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি ভাগে ছিল শতাংশ জমিসম্পন্ন বাড়ি, আরেকটি ভাগে শতাংশের বেশি জমির বাড়ি। শতাংশের বাড়িগুলোকে নিয়ে সেল লিস্ট করা হয়েছিল। শতাংশের বেশি জমির বাড়িগুলো ছিল রিটেইল লিস্টে। সেল লিস্টের বাড়িগুলো যুদ্ধাহত শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে অগ্রাধিকার অনুযায়ী ১৯৭২ সালের দাম অনুযায়ী দিয়ে দেয়া হয়েছে। আর রিটেইল লিস্টের বাড়িগুলো রয়েছে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায়। এসব জমিতে অনেক অফিস আছে। এগুলো সরকারি বাড়ি হিসেবে পূর্ত মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দপ্তরকে লিজ বা ভাড়া দিয়েছে।

নতুন আইনে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যুদ্ধাপরাধীর মামলায় যদি কেউ দণ্ডিত হতো, কোর্ট যদি তার জমিজমা-সম্পত্তি সিজ করে নেয়, তবে সেটাও পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে পড়বে, যেটা আগে ছিল না। আদালত কর্তৃক যুদ্ধাপরাধী হিসেবে প্রমাণিত বা ঘোষিত কোনো ব্যক্তির বাড়ি বা সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে সংযুক্ত বা বাজেয়াপ্ত করে তবে তা পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এখন বাড়িগুলোর যে মূল্য হয়েছে, মন্ত্রী-সচিবসহ বিভিন্ন বড় বড় অফিসার গুলশান-বনানীতে যেসব বাড়িতে থাকেন, এগুলো ৯৯ শতাংশই পরিত্যক্ত সম্পত্তি। এসব বাড়ির মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। এক-একটি বাড়ির দাম কয়েকশ কোটি টাকাও হবে।

তিনি বলেন, সেজন্য আইনে একটি সংশোধনী আনা হয়েছে। আগে ছিল সরকার (সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়) এই বাড়িগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে। এখন এখানে সংশোধনী আনা হয়েছে, সরকারপ্রধান এটা করবেন। এসব বাড়ির নিষ্পত্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন সরকারপ্রধান (প্রধানমন্ত্রী)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন