অসংক্রামক রোগের বৃদ্ধি স্বাস্থ্য খাতের নতুন চ্যালেঞ্জ

ডা. মো. আবুল ফয়েজ

দরিদ্র  মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে এতদিন সংক্রামক ব্যাধির কথা প্রাধান্য পেত। সাম্প্রতিক সময়ের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশসহ এসব দেশে অসংক্রামক ব্যাধি অন্যতম প্রধান সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অসংক্রামক ব্যাধির (নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস এনসিডি) মধ্যে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত মৃত্যুর ৮০ ভাগ দরিদ্র এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে অর্থাৎ ধনী দেশের চেয়েও বেশি।

উল্লেখ্য, এসব দেশে ধরনের ব্যাধি তুলনামূলক কম বয়সে হয় মৃত্যুঝুঁকি বেশি। অধিকন্তু এসব রোগে জনগণ অপেক্ষাকৃত কম বয়সে অসমর্থ অক্ষম হয়ে পড়ে। কাজেই সার্বিকভাবে দরিদ্র পরিবারগুলো এসব দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ে রোগ নিরাময় চিকিৎসার কারণে অধিকতর দরিদ্র হয়ে যেতে পারে।

অসংক্রামক রোগের প্রধান ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের তামাকের ব্যবহার, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অপর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম মদের ক্ষতিকর ব্যবহার। হৃদরোগ স্ট্রোকের বেশির ভাগ রোগীর কমবেশি ঝুঁকির অন্তর্বর্তী বিপাকীয় নিয়ামকগুলো ইন্টারমিডিয়েট রিস্ক ফ্যাক্টরস উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকা কিংবা ওজন বেশি বা স্থূলতা থাকতে পারে। একই সঙ্গে কম শারীরিক পরিশ্রম ধূমপান রোগগুলোর ক্ষেত্রে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

অসংক্রামক ব্যাধি নির্ণয়, চিকিৎসা পুনর্বাসন ব্যয়বহুল বিধায় এসব রোগ প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা করা অধিক অর্থ সাশ্রয়ী। রোগ নির্ণয়, ব্যবস্থাপনা জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য জ্ঞান বাড়ানোর মূল দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তবু অসংক্রামক রোগের প্রকোপ কমানোর জন্য স্বাস্থ্য ভিন্ন নন-হেলথ মন্ত্রণালয়গুলোর গৃহীত পদক্ষেপ বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, তামাক বা মদ ব্যবহারের বিষয়ে জনস্বাস্থ্য নীতি অন্যতম।

অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিমাণে উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিদ্যমান। ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে শতকরা ১৭ দশমিক ভাগ পুরুষ ২৪ দশমিক ভাগ মহিলা স্টেজ- উচ্চ রক্তচাপে এবং দশমিক ভাগ স্টেজ- উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে; শতকরা দশমিক ভাগ মানুষের ডায়াবেটিস দশমিক ভাগ মানুষের আইজিটি আছে। একই জরিপে যেকোনো ধরনের তামাক সেবনের হার আশঙ্কাজনক বেশি, পুরুষ শতকরা ৫৯ দশমিক , নারী ২৮ দশমিক লবণ গ্রহণের হার দৈনিক ১৬ দশমিক গ্রাম।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভিন্ন ধরনের পশ্চিমা রকমারি খাবার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যার অনেক চিনি, চর্বি, লবণ ক্যালরি, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

একশ্রেণীর জনগণ একদিকে যেমন অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে আগ্রহী, তেমনি কম শারীরিক পরিশ্রম করার কারণে অসংক্রামক ব্যাধির শিকার হন। সুস্বাস্থ্যের জন্য শারীরিক পরিশ্রম গুরুত্বপূর্ণ, শতকরা ১২ দশমিক ভাগ অপর্যাপ্ত পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম করে থাকে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির ফলন যথেষ্ট হলেও জনগণের মাঝে ফল শাকসবজি স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার হার আশাব্যঞ্জক নয়, শতকরা ৮৯ দশমিক ভাগ অপর্যাপ্ত পরিমাণে ফল বা সবজি গ্রহণ করে।

দেশের এক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তরুণ বিদেশে কর্মের অন্বেষণে পাড়ি দিচ্ছে। বিদেশে তাদের হাতে ক্যাশ টাকা থাকে, কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত খাবার জীবনযাপনের তথ্য এবং জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকেই স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরলসহ বিভিন্ন অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত এক জরিপে যুক্তরাজ্যে শতকরা ১৯ ভাগ বাংলাদেশী মহিলা ১০ ভাগ পুরুষ স্থূলতায় ভুগছে। বিদেশে কর্মসংস্থানে যাওয়ার আগে তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, পরামর্শ উপদেশ প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক।

সু-স্বাস্থ্যকে উন্নয়নের হাতিয়ার মনে করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যের আর্থিক দিক বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক রূপরেখা প্রণয়ন করেছে, যা তিনটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে স্থাপিতনজরদারি, প্রাথমিক প্রতিরোধ শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা। জাতিসংঘের ২০১১ সালের সাধারণ পরিষদের সভায় রাষ্ট্র সরকারপ্রধানরা ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করেছেন। ওই বৈঠকে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সমগ্র সরকার সমগ্র সমাজ প্রচেষ্টা মাধ্যমে স্বাস্থ্য প্রবর্ধনমূলক পরিবেশ তৈরির জন্য বহুমুখী জনস্বাস্থ্য নীতি বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। বৈশ্বিক নীতির সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশ সরকার ২০১৮-২৫ সাল পর্যন্ত একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, যা চতুর্থ স্বাস্থ্য পুষ্টি জনসংখ্যা খাত প্রোগ্রামের এইচএনপিএসপির সঙ্গে মিল রেখে প্রণীত। অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণের মতো কোনো টিকা নেই সত্যি কিন্তু অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস যেমননিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান না করা, ওজন না বাড়ানো, চিনি-চর্বি জাতীয় খাবার কম গ্রহণ, পরিমিত ফল শাক-সবজি গ্রহণ, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস সুনিয়ন্ত্রণে রাখা অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য তথ্যগুলো জাতীয় পর্যায়ে প্রণীত অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে উল্লেখ আছে। এনসিডির কর্মপরিকল্পনার রূপকল্প হচ্ছে অসংক্রামক রোগজনিত অক্ষমতা প্রতিরোধযোগ্য অকালমৃত্যু থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে অবদান রাখা; যার লক্ষ্য এনসিডি প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণের বহু খাতভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য অসংক্রামক রোগের কারণে অসুস্থতা, পরিহারযোগ্য অক্ষমতা অকাল মৃত্যু কমিয়ে আনার প্রধান মূল্যবোধ হচ্ছে: সমগ্র সরকার সমগ্র সমাজ দৃষ্টিভঙ্গি, সার্বজননী স্বাস্থ্যসেবা, সাংস্কৃতিক প্রাসঙ্গিকতা, অসমতা হ্রাসে মনোযোগ, জীবন-প্রণালি দৃষ্টিভঙ্গি। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০২৫ সালে লক্ষ্যগুলো অর্জন করবে বলে আশা করছে।

অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা সারা জীবনের জন্য বিধায় ব্যয়বহুল। হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস জটিলতা, ক্যান্সার, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ জেলা হাসপাতালে ব্যবস্থা আছে। এসব চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত ধনী দেশের জ্ঞান থেকে নেয়া। দরিদ্র নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে সম্পদের ঘাটতি আছে, যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধনী দেশের তুলনায় বেশ দুর্বল এবং প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য পেশাজীবীর মারাত্মক ঘাটতি আছে। অবস্থায় অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে জনস্বাস্থ্য পদ্ধতি গ্রহণ করা শ্রেয়, যেখানে সর্বাধিক ব্যক্তিগত পরিচর্যার চেয়ে চিকিৎসায় বড় আকারের অ্যাক্সেসকে অগ্রাধিকার দেয়া, উচ্চ আয়ের সেটিংসে দীর্ঘস্থায়ী রোগের যত্নের যা সাধারণ বৈশিষ্ট্য। পরিপ্রেক্ষিতে সফল জনস্বাস্থ্য পদ্ধতির মূলনীতিগুলো হচ্ছে সেবা প্রক্রিয়ার সরলীকরণ মানীকরণ, বিকেন্দ্রীকরণ, টাস্ক-শিফটিং, সহকর্মী এবং কার্যক্রমে কমিউনিটির অংশগ্রহণ নিজ ব্যবস্থাপনার জন্য সহায়তা প্রদান। দীর্ঘমেয়াদি রোগগুলো, অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অসংক্রামক ব্যাধির প্যাকেজ পিইএন জনস্বাস্থ্য পদ্ধতি বেছে নিয়েছে, যার ধারণাগত কাঠামো হলো সীমিত সম্পদ দিয়ে সমতা দক্ষতা প্রয়োগ করে প্রাথমিক স্বাস্থ্য প্রদান। প্যাকেজের মধ্যে অত্যাবশ্যক ওষুধ প্রযুক্তি, ঝুঁকি পূর্বাভাসের সরঞ্জাম, পরিকল্পনা করার সরঞ্জাম, বাস্তবায়ন ক্ষমতার মূল্যায়ন এবং কার্যাবলি কীভাবে প্রয়োগ করা উচিত সে সম্পর্কে নির্দেশিকা প্রোটোকল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অসংক্রামক ব্যাধির জন্য পিইএন হলো ন্যূনতম মানদণ্ড, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক, হৃদরোগ ঝুঁকি, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, দীর্ঘদিনের শ্বাসকষ্ট প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সীমিত সম্পদের মধ্যে একীভূত সেবা পরিচর্যা বাড়ানো জাতীয় সক্ষমতাকে জোরদার করে। উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস অপেক্ষাকৃত সহজে নির্ণয় চিকিৎসা করা যায়। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ৩৫-বছর-ঊর্ধ্ব আনুমানিক ১৪ দশমিক মিলিয়ন উচ্চরক্ত চাপ রোগীর মধ্যে অর্ধেকের কম (৪৯ শতাংশ) রোগী নির্ণীত, মাত্র ৫৯ ভাগ চিকিৎসা নিচ্ছেন কেবল ১৮ ভাগ রোগীর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে; ৩৫-ঊর্ধ্ব আনুমানিক দশমিক মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে (৫৯ শতাংশ) রোগী নির্ণীত, ৬৬ ভাগ চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং ১২ ভাগ রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে। অবস্থায় বাংলাদেশ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করার মডেল তৈরি করেছে। এতে কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটিতে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য সেবাকর্মী এবং স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবক (মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার)ভিত্তিক উচ্চ রক্তপচাপ ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ এবং উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য সিসির মাধ্যমে উপজেলায় প্রেরণ করে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দল দিয়ে রোগ সুনিশ্চিতকরণ ঝুঁকি-জীবনাচরণ বিষয়ক স্বাস্থ্য শিক্ষা, ওষুধ সরবরাহ কমিউিনিটি ক্লিনিক থেকে ওষুধ পুনর্ভরণ উল্লেখ্যযোগ্য। চিকিৎসা ব্যবস্থায় সমতা আনয়নে ধরনের ব্যবস্থা দেশের ৪৯৫ উপজেলায় সর্বত্র দ্রুত রাখার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এনসিডি রোগীর মধ্যে সবচেয়ে সহজে চিকিৎসা করা যায় এমন রোগী উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্য জ্ঞান এবং চিকিৎসা পাওয়া মৌলিক অধিকার। অন্যথায় অধিক সংখ্যক স্ট্রোক হৃদরোগ (হার্ট অ্যাটাক) হওয়া অবশ্যম্ভাবী। এদের যথাযথ রোগ নির্ণয় চিকিৎসা এখনো দেশে ব্যাপকভাবে শুরু হয়নি। একইভাবে ক্যান্সার স্ক্রিনিং (যেমনজরায়ু মুখ স্তন ক্যান্সার) সহজে করা যায়, যা ব্যাপকভাবে জনস্বাস্থ্যের আবশ্যিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে গ্রহণ করা প্রয়োজন।

যদিও জটিল রোগীদের বিশেষায়িত সেবার জন্য জেলা হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফারের ব্যবস্থার মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। এদের চিকিৎসা সরকারি পর্যায়ে বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে।

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বহুখাতভিত্তিক অসংক্রামক রোগ সমন্বয়, নজরদারি, পর্যবেক্ষণ মূল্যায়ন উল্লেখ্য। কর্মপরিকল্পনায় প্রথম পর্যায়ে সীমিত সংখ্যক উপজেলায় উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস সেবা কার্যক্রম শুরু হলেও সেবার আওতা ক্রমে বাড়ানো হবে বলে উল্লেখ আছে। দেশব্যাপী সেবা কার্যক্রম দ্রুত বিস্তৃত করা প্রয়োজন। অন্যান্য অসংক্রামক রোগ নির্ণয় চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনো উপজেলা পর্যায়ে অপ্রতুল। উপজেলা হাসপাতালের সঙ্গে মেডিকেল কলেজ জেলা হাসপাতালের ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে হাব-স্পোক মডেল চিকিৎসা উন্নয়ন সম্ভব, যার মডেল হচ্ছে জাতীয় চক্ষু সেবা কার্যক্রম এনইচি। বহু খাতভিত্তিক অসংক্রামক রোগের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় তুলনামূলক নতুন প্রবর্তিত বিষয়। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এনসিডি ব্যবস্থাপনায় সব সেক্রেটারিয়েট প্রতিষ্ঠাসহ প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি প্রশিক্ষিত জনবল ব্যবস্থা করা একান্তই আবশ্যক।

স্বাস্থ্য খাতে যুক্তিসংগত বাজেট বৃদ্ধি আবশ্যক। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ব্যয় কমাতে হলে বৃহৎ পরিসরে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। ধনী-দরিদ্র সবাই অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। দরিদ্ররা তুলনামূলক ভয়ংকর এই রোগ চক্রে আক্রান্ত হয়ে দারিদ্র্য অনুৎপাদনশীলতার মধ্যে পড়েন। বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীর পক্ষে অসংক্রামক রোগের অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয় মেটানো কষ্টসাধ্য। চক্র থেকে উত্তরণে শক্তিশালী বিনিয়োগসহ নীতিনির্ধারণ আশু প্রয়োজন। তবে জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ প্রথম দিককার ঝুঁকি উচ্চ রক্তচাপ-ডায়াবেটিস নির্ণয় চিকিৎসায় সচেতনতা সৃষ্টি রাষ্ট্রীয়ভাবে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে রূপান্তরের দাবি রাখে।

 

ডা. মো. আবুল ফয়েজ: অধ্যাপক, মেডিসিন সাবেক মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন