চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সংস্কার জরুরি

ডা. কামরুল হাসান খান

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, রয়েছে বাজেট জনশক্তির স্বল্পতা। এর পরও সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটের গবেষণায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ মানসূচকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সার্কভুক্ত দেশেগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল আফগানিস্তানের ওপরে। গবেষণায় যে ১৯৫টি দেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩। ভারত, নেপাল পাকিস্তানের অবস্থান যথাক্রমে ১৪৫, ১৪৯ ১৫৪। মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস করে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে। ভারতের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন অনেকবার বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে এগিয়ে।

গত ১৩ বছরে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন হয়েছেবেড়েছে অবকাঠামো, জনশক্তি, বাজেট, চিকিৎসার সুযোগ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার আধুনিকায়ন উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ। এর পরও বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৭ কোটি মানুষের অর্ধেকের কাছাকাছি আধুনিক চিকিৎসা পাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য প্রয়োজন ১০ জন চিকিৎসক ৩০ জন নার্স। বর্তমানে বাংলাদেশে এর অবস্থান উল্টোচিকিৎসক রয়েছেন দশমিক নার্স দশমিক জন। বর্তমানে দেশে প্রয়োজন লাখ ৭০ হাজার চিকিৎসক লাখ ১০ হাজার নার্স। বর্তমানে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় এক লাখ (এমবিবিএস বিডিএস) গোটা বাংলাদেশে সরকারি চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার (মহাপরিচালক, অধ্যাপক থেকে মেডিকেল অফিসারসহ) এর মধ্যে বেশির ভাগ নগরকেন্দ্রিক। স্নাতকোত্তর হাসপাতাল ১৫টি, জেনারেল জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ৬৩, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৪২৪, অন্যান্য হাসপাতাল ৯৪টি। সরকারি শয্যা সংখ্যা ৪৯ হাজার ৪১৪, বেসরকারি শয্যা সংখ্যা ৮৭ হাজার ৬১০, নার্স সংখ্যা ৩৭ হাজার। গোটা দেশের বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা দেড়-দুই লাখ। মেডিকেল কলেজ ১১১টি (সরকারি, বেসরকারি ডেন্টালসহ) প্রতি বছর মেডিকেল কলেজগুলোতে ১০ হাজার ২২৩ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। নার্স, টেকনোলজিস্ট অন্যান্য সহকারী কর্মচারী অপ্রতুল এবং অদক্ষ। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রায় ১৮ হাজার। রয়েছে বাজেট অপ্রতুলতা, দক্ষ জনশক্তির অভাব, দুর্নীতি এবং সর্বোপরি সর্বস্তরে অব্যবস্থাপনা। বাজেট মাথাপিছু ৪১ ডলার। গভীরভাবে সবাইকে অনুভব করতে হবে সক্ষমতা দিয়ে ১৭ কোটি মানুষের সন্তোষজনক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব কিনা। চিকিৎসা ক্ষেত্রে কিছু বাস্তব চিত্র সবার অবগত হওয়া দরকার

বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থা তুলনা করা ঠিক হবে না। চিকিৎসা ব্যবস্থা চিকিৎসকদের সব মহলকেই ভিন্নভাবে দেখতে হবে, কারণ ব্যবস্থায় মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে কাজ করতে হয়।

দুবার স্বাধীন হওয়া দেশ, দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এখন স্বস্তিকর একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। একা চিকিৎসকের দায় নয়, বৃহৎ ব্যবস্থাপনা টিমের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। আমরা রাতারাতি পাল্টাতে পারব না। তবে পরিবর্তনের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে।

লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত দেশে আমরা সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকভাবে একটি লক্ষ্য স্থির করি—‘চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিদ্যমান সম্পদ জনশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে রোগীদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।

লক্ষ্যে প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো বিবেচনা করে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে জরুরিভাবে

() স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন কঠোর নিয়ন্ত্রণ: যেকোনো কাজ শুরুর আগে তার প্রশাসনিক ব্যবস্থা সঠিক করে নিতে হয়। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা খুবই নাজুক অকার্যকর। বাস্তবতা হলো স্বাস্থ্য সচিব থেকে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক খুবই ব্যস্ত। তাদের পুরনো দায়িত্ব বণ্টন এখন অবাস্তব। প্রতিটি কাজের যে মনিটরিং, সুপারভিশন এবং ফলোআপ করা দরকার ব্যবস্থায় সম্ভব নয় এবং এছাড়া কোনো কার্যক্রমই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। একই ব্যক্তিকে বহু দায়িত্ব দেয়ায় এবং ধরে রাখার প্রবণতার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। যেমন একটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, তিনিই ডিন, তিনিই বিভাগীয় প্রধান, তিনিই বিএমডিসির সদস্য এবং চিকিৎসক সমিতির নেতা। আবার রয়েছে প্রাইভেট প্র্যাকটিস ক্লিনিকে ভর্তি রোগী দেখাএকটি কাজের জন্য তাকে ২৪ ঘণ্টা ব্যয় করার কথা। কাজগুলোর সুষম বণ্টন হলে কাজের গতি আউটপুট বাড়বে। বহুবার ভাবা হয়েছে প্রশাসনিক পদগুলোকে নন-প্র্যাকটিসিং করার। স্বাস্থ্য প্রশাসকদের দক্ষতা প্রশিক্ষণেরও অভাব রয়েছে। লোকবলও পর্যাপ্ত নয়। প্রশাসকদের সহকর্মীবান্ধব হতে হবে। গ্রহণযোগ্য কর্মপরিবেশ এবং মানসিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

স্বাস্থ্য প্রশাসন কাঠামো পুনর্মূল্যায়ন করে বাস্তব দায়িত্ব বণ্টন এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

() স্বাস্থ্য জনশক্তি পরিকল্পনা গ্রহণ: ৫০ বছরের বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বলতে গেলে তেমন কোনো স্বাস্থ্য জনশক্তি পরিকল্পনা নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কখনো কখনো হয়েছে তবুও তা বাস্তবায়ন হয়নি। একটি সময়োপযোগী স্বাস্থ্য জনশক্তি পরিকল্পনা করা সময়ের দাবি। কারণ আমরা উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) কার্যক্রম শুরু করেছি।

() বাজেট: জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ১০ ভাগ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দিতে হবে। এতে ক্ষতি হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাজেটের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করেছে। সুস্থ জনবল দেশের উন্নয়নে বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বাজেট মাথাপিছু ৪১ ডলার, ভারতে ৭২, নেপালে ৫৭, ভিয়েতনামে ১৫১, মালদ্বীপে ৯৭৩ শ্রীলংকায় প্রায় ১৫৭ ডলার।

() নিয়োগ বদলি নীতিমালা: দেশে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়োগ বদলি নীতিমালা নেই। এটিই তরুণ চিকিৎসকদের হতাশার অন্যতম কারণ। তরুণ চিকিৎসকদের বদলির ধাপ উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগসংবলিত একটি কার্যকর ক্যারিয়ার প্ল্যানিং দরকার। তাহলেও কিছুটা হতাশা দূর হবে। দূরবর্তী বা দুর্গম চিকিৎসাকেন্দ্রের পদায়নের জন্য আলাদা আর্থিক ইনসেনটিভ যুক্ত করা প্রয়োজন।

() বিএমডিসিকে শক্তিশালী কার্যকর করতে হবে: প্রায় ১৫ বছর বিএমডিসি মামলাধীন অকার্যকর ছিল। বর্তমানে কিছুটা কার্যকর হয়েছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা নানা দুর্বলতায় নিমজ্জিত। চেয়ারম্যান পদে একজন সার্বক্ষণিক পেশার সিনিয়র অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দিলে যথাযথ কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হয় না। লোকবলের স্বল্পতাসহ রয়েছে নানা সমস্যা। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গুরুত্বের কথা বিবেচনায় রেখে এর সব সমস্যা দ্রুত সমাধান করে সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে দেশের স্বাস্থ্য মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রম অনেক সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রিত হবে।

() বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক পরিচালনা: দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থারও অনেক উন্নয়ন হয়েছে স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো কার্যকর নীতিমালা নেই। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, জনবল নিয়মিত বেতন কাঠামোসহ কার্যকর নীতিমালা থাকতে হবে যাতে চাকরিরত চিকিৎসক, নার্স অন্যান্য জনবল চাকরির নিশ্চয়তা পেতে পারে। বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন, পাশাপাশি নিয়মিত নজরদারিতে রাখতে হবে।

() নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: প্রতিটি হাসপাতাল স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশ ফাঁড়ি বা পুলিশের বিশেষ স্কোয়াডের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসক আক্রমণ হাসপাতালে ভাংচুরের জন্য দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

() আঞ্চলিক প্রশাসনিক বিন্যাস: কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা, যোগাযোগ করা বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্যা সমাধান বাস্তবমুখী নয়। প্রয়োজনীয় জনবল, অবকাঠামো ক্ষমতা প্রদান করে জেলা বা নির্দিষ্ট অঞ্চলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন।

() ওষুধের মূল্য: বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প অত্যন্ত গৌরবের। দেশের ৯৮ ভাগ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ১৪৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে আমাদের ওষুধ। ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে আরো কার্যকর কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় জনবল প্রয়োজন। ওষুধের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ওষুধের মূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

(১০) রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বাস্থ্য প্রশাসন: স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। সচিবালয় থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত প্রশাসন চিকিৎসক সংগঠনের প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে যাতে প্রশাসন নিরপেক্ষ, স্বাধীন আইনানুগ কাজ করতে পারে। বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে।

(১১) মেডিকেল ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস): একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য এমআইএস খুব প্রয়োজন। দুঃখজনক হলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের কাছে কোনো তথ্য বা সহযোগিতা অসংখ্যবার যোগাযোগ করেও পাওয়া কঠিন। চিকিৎসা, তথ্য উপাত্ত সবার জন্য পাওয়া সহজ এবং হালনাগাদ রাখতে হবে।

(১২) সুনির্দিষ্ট অভিযোগসুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা: ঢালাওভাবে অভিযোগ না করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, প্রশাসনকে সবসময়ই অ্যাকোমডেটিভ হতে হবে। সহকর্মীর মানসিক অবস্থা, ব্যক্তিগত সমস্যা বিবেচনায় রেখে সহকর্মীবান্ধব প্রশাসন সৃষ্টি করতে হবে। শুধু শাস্তি প্রদানের মধ্যে দিয়েই বন্ধুত্বপূর্ণ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আন্তরিক পরিবেশ গড়ে ওঠে না।

(১৩) অভ্যর্থনা তথ্যকেন্দ্র: বাংলাদেশের কিছু বেসরকারি বড় হাসপাতাল ছাড়া বিষয়টি একদমই গড়ে ওঠেনি। ফলে রোগীরা হাসপাতালে গিয়ে তার প্রয়োজনীয় স্থান খুঁজে পেতে অনেক ভোগান্তির শিকার হয়। এজন্য দেশের প্রতিটি হাসপাতালে প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অভ্যর্থনা তথ্যকেন্দ্র স্থাপন জরুরি। হাসপাতাল বা মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের খবরাখবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য একজন সুনির্দিষ্ট মুখপাত্র রাখা বাঞ্ছনীয়। শিক্ষক বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে যে কেউ মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করতে পারে কিন্তু বিষয়টি নির্ধারিত করে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে হবে।

(১৪) পেশাজীবীদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ: চিকিৎসকদের সঙ্গে সব পেশার মানুষের রয়েছে হূদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। সব পেশাজীবী চিকিৎসকের কাছে বন্ধুত্বের কারণেই বিশেষ সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। কিন্তু মাঝে মাঝে অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে। চিকিৎসা একটি জটিল এবং বিস্তৃত বিজ্ঞান। কষ্টসাধ্য পাঁচ বছর সর্বোচ্চ মেধা প্রয়োগ করে চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোর নলেজ রপ্ত করতে হয়। এছাড়া কেউ চিকিৎসাশাস্ত্র বা চিকিৎসার ধরন সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারবে না। করলে সঠিক হবে না বরং বিভ্রান্তিকর হবে। একজন চিকিৎসক চাইলে যেকোনো সাধারণ পেশায় যেতে পারেনযাচ্ছেন। কিন্তু অন্য যেকোনো সাধারণ বিষয়ের মানুষ কখনই চিকিৎসক হতে পারবে না। আমরা সবাই দেশের সন্তান, ভাই-বোন-আত্মীয়স্বজন। পরস্পরবিরোধী অবস্থান পরিহার করে কীভাবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং আস্থা অর্জন করে বোঝাপড়ার শক্ত ভিত স্থাপন করতে পারিসবার সেদিকেই মনোযোগী হওয়া দরকার, তাহলেই অনেক সংকট দূরীভূত হবে। আমরা কেউ কাউকে ছাড়া চলতে পারি না বা সম্ভব নয়। সেজন্য সুসম্পর্ক থাকুক অটুট কার্যকর। হাজার ২২৭ ডলারের মাথাপিছু আয়ের দেশে। অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে সবার সহযোগিতায় একটি স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। পারস্পরিক বৈরী এবং দোষারোপ পরিহার করে সমস্যা চিহ্নিত করে বাস্তব পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ হাসিমুখে সেবা দিতে হবে যেমন, তেমনি রোগী স্বজনদের থাকতে হবে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং সহনশীলতা।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বর্তমান কাঠামোতে দ্রুত উন্নয়ন সহজ হবে না। যেহেতু জনস্বাস্থ্য একটি জরুরি বিষয়, তাই দেশের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দেশের মানুষের গভীর আস্থা তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের অসংখ্য নজির রেখেছেন। বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন এখন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) মতো ব্যবস্থা, তাহলেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নজরে আনবেন।

 

ডা. কামরুল হাসান খান: অধ্যাপক সাবেক উপাচার্য

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন