প্রথমবারের মতো ২ কোটি ২৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট জমা দিয়েছে সার্চ ইঞ্জিন গুগল। ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, অ্যাক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সূত্রে গতকাল এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ২৩ মে প্রথম অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গুগল ভ্যাটের নিবন্ধন নেয়। কিন্তু প্রস্তুতির জন্য মে ও জুনের রিটার্ন জমার জন্য সময় চেয়েছিল গুগল। ভ্যাট বিভাগ সেই আবেদনে সাড়া দেয়। এখন ওই দুই মাসের রিটার্ন জমা দিল গুগল। গুগলের মতো অ্যামাজনও ভ্যাট রিটার্ন দেয়ার সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। কর্তৃপক্ষ তাদের আবেদনে সাড়া দিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানও এ মাস থেকেই রিটার্ন দেবে বলে জানা গেছে।
ভ্যাট পরিশোধ ও ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয়াসহ সরাসরি ভ্যাট-সংক্রান্ত সেবা পেতে গত ২৫ মে ব্যবসায় শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) নেয় গুগল। এরপর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানটির লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে মে মাসের ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার ৭০৪ টাকা ও জুনের ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩৩ টাকার ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয়।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নিবন্ধিত অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গত ২৯ জুলাই সবার আগে প্রায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ভ্যাট জমা দেয়। যার মধ্যে ফেসবুক আয়ারল্যান্ড লিমিটেড ২ কোটি ৪৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৯৯ টাকা, ফেসবুক পেমেন্টস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ২৪ হাজার ৭০ টাকা ও ফেসবুক টেকনোলজিস আয়ারল্যান্ড লিমিটেড ২৫ হাজার ৬ টাকা জমা দেয়।
ভ্যাট আইন অনুসারে, ভ্যাট পরিশোধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ভ্যাট এজেন্টরা দায়বদ্ধ। ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন পেতে ও ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয়ার জন্য সংস্থাগুলো ২০১৯ সাল থেকে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এ কারণে ভ্যাট আইন অনুসারে সরাসরি এ সেবা পাওয়ার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে দাবি ছিল। ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’
অনুযায়ী ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানকে মূসক নিবন্ধন নিতে হবে। তাদের বাংলাদেশে অফিস স্থাপন অথবা মূসক এজেন্ট নিয়োগ দিতে হবে। এজন্য পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের প্রথম দিকে আলাদা ভ্যাট নিবন্ধন নম্বরের আওতায় আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর।
অন্যদিকে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক বিধিমালা ২০১৬ অনুসারে ভ্যাট নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাস শেষ হওয়ার অনধিক ১৫ দিনের মধ্যে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যথায় সুদ ও জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের মাসিক ভ্যাট দাখিলপত্র দাখিলে সহায়তা করা ও দাখিলপত্র গ্রহণের সুবিধার্থে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধকালে দেশের সব কাস্টমস, অ্যাক্সাইজ ও ভ্যাট দপ্তরগুলো খোলা রয়েছে।
অনাবাসী প্রতিষ্ঠান বলতে বোঝায় বাংলাদেশে ব্যবসা করে, কিন্তু এ দেশে কোনো কার্যালয় নেই। এ পর্যন্ত চারটি অনাবাসী প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের নিবন্ধন নিয়েছে। গুগল ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ফেসবুক, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফট।
অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ নিজেদের নানা ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এসব সেবা নিয়ে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড বা অন্য কোনো উপায়ে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করে থাকেন। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কেটে রাখে। ভ্যাট কেটে না রাখলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশে ওই প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাঠানোর অনুমতি দেয় না। ভ্যাট নিবন্ধন নেয়ার ফলে প্রতিষ্ঠান কত টাকার সেবা বিক্রি করেছে, সেই তথ্যসহ যাবতীয় আয়-ব্যয়ের তথ্য জানিয়ে ভ্যাট রিটার্ন দিতে হবে।
