বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে ধ্বংস করাই ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার উদ্দেশ্য —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল কৃষক লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল একটাইবাংলাদেশের অভ্যুদয়কে ধ্বংস করা, বিজয়কে নস্যাৎ করা। তাই সে হত্যাকাণ্ডের পরপর বাংলাদেশের নাম মুক্তিযুদ্ধের সময় যেটা দেয়া হয়েছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশের নাম পাল্টে ইসলামিক রাষ্ট্র বাংলাদেশ করা হয়েছিল। যদিও সেটা টেকাতে পারেনি। রেডিওতে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয়নি। বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে রেডিও বাংলাদেশ, ঠিক পাকিস্তানে যেমন ছিল প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের নাম, সেভাবে করা হয়েছিল।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্ত প্লাজমাদান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। সময় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তও অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিল।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, শুধু যে রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছিল, তা নয়; একটি আদর্শকে হত্যা করা, একটি বিজয়কে নস্যাৎ করা এবং একটি জাতিকে জাতি হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার যে সুযোগ, সেটাকে ধ্বংস করে দেয়া। এটাই ছিল ঘাতকদের প্রচেষ্টা। ক্ষমতা দখলের জন্য শুধু রাষ্ট্রপতিকেই হত্যা করেনি, জাতির পিতার কেউ যেন কখনো আর দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে না পারে, তাই পরিবারের অন্যদেরও হত্যা করা হয়।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে আওয়ামী লীগের যারা ইন্ধন দিয়েছে, তারা কীভাবে এর সঙ্গে জড়িয়েছিল সে প্রসঙ্গেও আক্ষেপ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার এটিই অবাক লাগে, এর সঙ্গে আমাদের যারা, তারা কীভাবে জড়িত থাকে? হত্যার বিচার করেছি। কিন্তু ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা সেটা এখনো আবিষ্কার হয়নি। একদিন না একদিন আবিষ্কার হবে, এটা ঠিক।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, পাকিস্তানি শাসক চক্র বা দেশেরও কিছু দালাল চক্র বা তাদের তোষামোদকারী, পদলেহনকারী কিছু গোষ্ঠী কেন যেন বাঙালির বিজয় কখনই মেনে নিতে পারেনি। দুঃখজনক হলো নিজের দলের ভেতরে খন্দকার মোশতাক যেমন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, আবার অনেকেই তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। আর ঘটনা ঘটাতে সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্যকে ব্যবহার করা হয়েছিল। উচ্চ পর্যায়ের কেউ যদি তাদের সঙ্গে না থাকে, এটা কখনো সম্ভব ছিল না।

হত্যাকাণ্ডের পেছনে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায়ের আর কে ছিল, সেটা তো কর্নেল ফারুক আর রশীদ বিবিসিতে যে ইন্টারভিউ দিয়েছিল, সেখানেই তারা বলেছিল জিয়াউর রহমান যে উপসামরিক প্রধান ছিল, তার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল; সম্পর্ক ছিল এবং সফল হলে সে তাদের পাশে থাকবে কথাও দিয়েছিল। সহযোগিতাও করেছিল। কাজেই মোশতাক-জিয়ার যে সখ্যতা এবং তাদের যে সম্পৃক্ততা এটা তো স্পষ্ট।

হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আর আমার ছোট বোন আমরা তখন জার্মানিতে। ৩১ জুলাই আমরা জার্মানিতে পৌঁছাই। ১৫ আগস্ট যখন খবর পাই, আমরা তখন ভাবতেই পারিনি। আমার বাবার অগাধ বিশ্বাস ছিল দেশের মানুষের প্রতি। তিনি সব সময় বিশ্বাস করতেন বাঙালি কখনো তার গায়ে হাত দিতে পারবে না। পাকিস্তানিরা যখন তাকে হত্যার চেষ্টা করেও পারেনি, বাঙালিরা কেন মারবে।

ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করা হলেও তা বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করেননি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই অনেকভাবে তাকে খবর দিয়েছিলেন, বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি কখনই বিশ্বাস করেননি। যখনই কোনো সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন, তিনি একটি কথাই বলেছেন, এরা আমার সন্তানের মতো; আমাকে মারবে না। আর সেই বিশ্বাসে চরম আঘাত দিল যারা এবং তাকে নির্মমভাবে হত্যা করল, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমাদের কিন্তু বিচার পাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না।

অনুষ্ঠানে কৃষকদের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। কারণ তার লক্ষ্যই ছিল দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো। প্রতিটি মানুষের মাঝে খাদ্য তুলে দেয়া। তিনি বহুমুখী বাধ্যতামূলক গ্রাম সমবায় করে তার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করে চাষবাস করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন দুই গুণ, তিন গুণ বৃদ্ধি করে বাংলাদেশের মানুষকে খাদ্যনিরাপত্তা দেয়াএটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য।

তিনি বলেন, যার যার জমি থাকবে কিন্তু কৃষি উৎপাদনটা সমবায়ের মাধ্যমে হবে। উৎপাদিত পণ্যের একটি অংশ এবং লভ্যাংশ পাবে যারা জমির মালিক, যারা শ্রম দেবে এবং যারা সমবায়ের জন্য পাবে। রকম একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটাকে সার্বিক উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে।

জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নকেই এখন প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কাজ হলো দেশকে নিয়ে, মানুষকে নিয়ে জাতির পিতা শেখ মুজিব যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, দেশের মানুষের উন্নয়নে সেটাকেই আমি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। আমার প্রথম কাজ হচ্ছে এই ক্ষুধার্ত, দরিদ্র মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের জীবনমান উন্নত করা।

কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কৃষি সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মতিয়া চৌধুরী দুস্থ কৃষকদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করেন।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পরবর্তী কর্মসূচি: আগস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দলটি। উপলক্ষে ধানমন্ডির আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো এতে অংশ নেবে। এদিন ৯টা ১৫ মিনিটে বনানী কবরস্থানেও শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা-এর আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগের বন পরিবেশবিষয়ক উপকমিটি। আগস্ট থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ নগরের বিভিন্ন স্থানে মাসব্যাপী এতিম দুস্থদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পালন করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন