করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে যখন অক্সিজেন সংকটে রোগী মারা যাচ্ছে, তখন বাগেরহাটে বিনা মূল্যে বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে ‘চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংক’
নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
গত ১ মে শুরু করা এ সংগঠনটি অন্তত ১১ জন মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন দিয়েছে।
‘বিনা অক্সিজেনে ঝরে পড়বে না কোনো প্রাণ’—এ স্লোগান নিয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলার চুলকাঠি এলাকার আট যুবকের উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির যাত্রা হয়।
এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে তারা নিজেদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা চালান।
এক পর্যায়ে তাদের এ উদ্যোগের বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
নির্ধারিত নম্বরে ফোন বা অক্সিজেন ব্যাংকের ফেসবুক পেজে সহযোগিতা চাইলে স্বেচ্ছাসেবকরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন রোগীর বাড়ি।
শুধু বাগেরহাট জেলা নয়, পার্শ্ববর্তী খুলনার রূপসাতেও অক্সিজেন সরবরাহ করেছেন এ স্বেচ্ছাসেবকরা।
অক্সিজেন সরবরাহ করতে গিয়ে সংগঠনটির সদস্য সাকিব হাসান জনি, কাজী রেজোয়ান, চয়ন দেবনাথ করোনা আক্রান্তও হয়েছেন।
তবে তারা এখন সুস্থ রয়েছেন।
এ পর্যন্ত মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট সদর, ফকিরহাট, খুলনার রূপসাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ১১ জন মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন দিয়েছে সংগঠনটি।
এছাড়াও চারজন রোগীর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ফিরে এসেছেন তারা।
গভীর রাতেও অক্সিজেন নিয়ে রোগীর বাড়িতে যান স্বেচ্ছাসেবকরা।
ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে বিনা মূল্যে অক্সিজেন পেয়ে খুশি রোগীরা।
চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকের উদ্যোক্তা স্বেচ্ছাসেবক জনি ও রেজোয়ান বলেন, গত ১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে অক্সিজেন ব্যাংক চালু করি।
এরপর থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, মুমূর্ষু রোগীর অক্সিজেনের অভাব মেটাতে।
গভীর রাতেও মানুষের বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছি আমরা।
এর মধ্যে একদিন রাত ১১টার সময় পার্শ্ববর্তী ভট্টবালিয়াঘাটা এলাকা থেকে ফোন করেন মহসীন মোড়ল নামের এক ব্যক্তি।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ অক্সিজেন লাগবে।
ফোন পেয়ে অক্সিজেন নিয়ে ছুটে যাই আমরা।
অক্সিজেন দেয়া শুরু করি।
পরবর্তী সময়ে আমাদের অক্সিজেন দেয়া অবস্থায় বাগেরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ বকসীর পরামর্শে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকের সেবা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন রামপাল এলজিইডিতে কর্মরত শাকিল মাহমুদ।
তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
অনেকটা সুস্থতা অনুভব করছি।
ওই দিন (১৬ জুন) আল্লাহর ওসিলা হিসেবে চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকের মাধ্যমে অক্সিজেন সাপোর্ট পেয়েছিলাম।
আল্লাহ ভালো জানেন না পেলে কী হতো।
চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংক অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক জাকারিয়া হোসাইন শাওন বলেন, একজন মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন দেয়ার জন্য সিলিন্ডারের পাশাপাশি একটা ফুল সেটের প্রয়োজন হয়।
একটি সেট তৈরি করতে আমাদের প্রায় ১৭ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়।
আমাদের দুটি সেট রয়েছে।
একটি সেট রিফিল করা থাকলে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ১ হাজার ৫০০ মিনিট অক্সিজেন দেয়া যায়।
তবে যদি কারো অক্সিজেনের প্রয়োজন বেশি হয়, সেক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ ঘণ্টায়ই শেষ হয়ে যায়।
এ সিলিন্ডারগুলো বাগেরহাটে রিফিল করা যায় না।
খুলনা থেকে রিফিল করতে হয়।
একবার রিফিল করতে ১৫০ টাকা ব্যয় হয়।
রিফিলটা মূল নয়, মূল হচ্ছে সেট তৈরি করা।
বর্তমানে আমাদের দুটি সেট রয়েছে।
আমাদের যদি আরো কয়েকটি সেট থাকত, তাহলে আরো বেশি মানুষকে সেবা দিতে পারতাম।
এ ব্যাপারে বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন জাকারিয়া।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, করোনা মহামারীতে চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংক যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার।
আমি এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।