ঘাটতি ও সরবরাহ চেইনে বাধা

ব্যাপক মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে বিশ্ব অর্থনীতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মহামারীতে গত বছরের বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসছে বিশ্ব অর্থনীতি। তবে পুনরুদ্ধারের সময়ে তীব্র চাহিদার মুখোমুখি হয়েছেন পণ্য প্রস্তুতকারক সরবরাহকারীরা। চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে ম্যাট্রেস প্রস্তুতকারক থেকে গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলোর প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্রয় মজুদের প্রবণতা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে বাধার সৃষ্টি করেছে। সব মিলিয়ে পণ্যের ঘাটতি, সরবরাহ চেইনে বাধা দামের বৃদ্ধি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি করেছে। খবর ব্লুমবার্গ।

তামা, আকরিক লোহা থেকে ভুট্টা, কফি, গম, সয়াবিনের পাশাপাশি প্যাকেজিংয়ের জন্য কার্ডবোর্ড, সেমিকন্ডাক্টর প্লাস্টিক পর্যন্ত প্রায় সবকিছুতে ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। ইঞ্জিন জেনারেটর প্রস্তুতকারক সংস্থা কামিন্স ইনকরপোরেটেডের চেয়ারম্যান প্রধান নির্বাহী টম লাইনবার্গার বলেন, আপনি পরিস্থিতির একটি নাম দিন এবং আমাদের এগুলোর ঘাটতি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানাভিত্তিক একটি সংস্থার প্রেসিডেন্ট জেনিফার রামসে বলেন, আমাদের গ্রাহকরা যতটা পারেন সবকিছু পাওয়ার চেষ্টা করছেন। কারণ তারা মনে করছেন সংকট আগামী বছরও অব্যাহত থাকবে।

বিশ্ব অর্থনীতি এর আগেও বহুবার সংকট সরবরাহ চেইনে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। তবে এবারের সঙ্গে সেগুলোর পার্থক্য হলো, চলতি বছরের সংকটের বিশাল ব্যাপ্তি এবং এটার শেষ কবে তা কেউ বলতে পারে না। বড় কিংবা ছোট খুব কম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই সংকটের বাইরে আছে।

ইউরোপের বৃহত্তম ট্রাক ভাড়া দেয়া সংস্থা গারটেকা লজিস্টিকস জানিয়েছে, তারা তাদের পর্যাপ্ত সক্ষমতার জন্য লড়াই করছে। ক্যালিফোর্নিয়ার মনস্টার বেভারেজ করপোরেডেট অব করোনা অ্যালুমিনিয়াম ক্যান সংকট মোকাবেলায় কাজ করছে। হংকংয়ের মোমাক্স টেকনোলজি লিমিডেট চিপ-স্বল্পতার কারণে নতুন পণ্য উৎপাদনে যেতে দেরি করছে।

পরিস্থিতি আরো তীব্র করে তুলেছে গত কয়েক মাসে বিশ্ববাণিজ্য বাধাগ্রস্ত করা দুর্যোগগুলো অস্বাভাবিক দীর্ঘ হওয়া ক্রমবর্ধমান তালিকা। মার্চে এক সপ্তাহ ধরে সুয়েজ খাল বন্ধ থাকা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে বড় ধাক্কার সৃষ্টি করে। ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্ল্যাকআউট জ্বালানি পেট্রোকেমিক্যাল কার্যক্রম স্তব্ধ করে দিয়েছিল। দুই সপ্তাহেরও কম সময় আগে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম জ্বালানি তেলের পাইপলাইনে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পাইপলাইনটি বন্ধ থাকায় ২০১৪ সালের পর প্রথমবারের মতো পেট্রলের দাম প্রতি গ্যালন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে কভিড-১৯-এর ব্যাপক সংক্রমণ দেশটির বৃহত্তম বন্দরগুলোকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

যে কেউ মনে করতে পারেন, সংকটগুলো কয়েক মাসের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের লজিস্টক ম্যানেজারস ইনডেক্স তেমনটা বলছে না। করপোরেট সরবরাহের মাসিক সমীক্ষায় সরবরাহ চেইনের তিনটি মূল উপাদান মজুদ, পরিবহন গুদামে ব্যয় বৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে। বর্তমানের সূচকটি ২০১৬ সালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। ভবিষ্যতে সূচক কমারও ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না।

সূচক সংকলনে সহায়তা করা কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির কলেজ অব বিজনেসের সহাকারী অধ্যাপক জ্যাক রজার্স বলেন, মজুদ গুদামের তুলনায় পরিবহনের ব্যয় আরো বেশি বাড়তি। চাহিদা না কমা পর্যন্ত পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না। তীব্র চাহিদা মোকাবেলায় সরবরাহ আরো কঠিন হয়ে উঠছে। ফলে আমরা আগামী ১২ মাসে আরো  দাম বাড়তে দেখব। সুপরিচিত ব্যারোমিটারগুলো গৃহস্থালি সংস্থাগুলোর জন্য উচ্চ ব্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। খাদ্য জ্বালানি বাদ দিয়ে মার্কিন ভোক্তাদের দামের সূচক এপ্রিলে আগের মাসের তুলনায় ১৯৮২ সালের পর সর্বোচ্চ বেড়েছে। সংস্থাগুলো যদি বাড়তি ব্যয় গ্রাহকদের ওপর না দেয় এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে না পারে তাহলে এটি তাদের মুনাফায় প্রভাব ফেলবে।

খাদ্যের পেছনে ব্যয়ও ব্যাপকভাবে বাড়ছে। ভোজ্যতেলের জন্য পাম গাছের ফল প্রক্রিয়াজাত করা গত বছরের তুলনায় ১৩৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো সয়াবিনের দাম প্রতি বুশেল ১৬ ডলারে পৌঁছেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত মাসে বৈশ্বিক খাদ্য ব্যয় টানা ১১তম মাসে বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে। আর এটা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন