নিজেকে ক্ষমা করার পথ খুঁজছেন ট্রাম্প

বণিক বার্তা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হতে সময় বাকি দুই সপ্তাহেরও কম। ২০ জানুয়ারি অভিষিক্ত হচ্ছেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আশঙ্কা, ক্ষমতা ছাড়ার পর রাজনৈতিক আইনিভাবে অনেক ধরনের সংকটে পড়তে পারেন তিনি। অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ কয়েক দিনের মধ্যে নিজেই নিজের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করে যাওয়ার পথ খুঁজছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডব চালানোর ঘটনাটি ছিল মার্কিন ইতিহাসের নজিরবিহীন। বুধবারের ওই ঘটনা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য হিতে বিপরীত হয়ে দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে। ওই ঘটনার উসকানিদাতা হিসেবে তাকেই দায়ী করছেন সবাই। একে একে তার পাশ থেকে সরে যাচ্ছেন সহযোগী ঘনিষ্ঠজনরা। মার্কিন প্রশাসনে ট্রাম্পের সহযোগী হিসেবে পরিচিতদের মধ্যে পড়েছে পদত্যাগের হিড়িক। রিপাবলিকান পার্টির মধ্যেও একঘরে হয়ে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরিস্থিতি যে সঙিন হয়ে উঠেছে, সে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছেন তিনিও। এমনকি ক্ষমতা ছাড়ার পর নিয়ে রাজনৈতিক আইনিভাবে অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি।

হোয়াইট হাউজ-সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই নিজের জন্য ক্ষমা ঘোষণার কথা ভাবছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিয়ে নিজের উপদেষ্টাদের সঙ্গে কয়েকবার কথাও বলেছেন তিনি। এসব আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, ট্রাম্প যদি নিজের জন্য ক্ষমা ঘোষণার উদ্যোগ নেন, তাহলে তার ওপর রাজনৈতিক আইনি প্রভাব কেমন হতে পারে। তবে বুধবার ক্যাপিটল হিলের ঘটনাটি ঘটার পর থেকে ট্রাম্প নিজেও আশঙ্কা করছেন, তিনি আইনিভাবে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।

ক্ষমতা ছাড়ার আগে যদি তিনি কোনোভাবে নিজের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করে যান, তাহলে তার শাসনামলের অনেক ঘটনার মতো এটিও হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম। এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কখনই এমন অবস্থায় পড়তে হয়নি, যাতে তার নিজেকেই নিজের জন্য ক্ষমা ঘোষণার পথ খুঁজতে হয়।

শুধু নিজের জন্য ক্ষমা ঘোষণার কথা ভাবছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের পরিবার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও ক্ষমার আওতায় আনার কথা ভাবছেন তিনি। সেক্ষেত্রে তালিকায় রয়েছেন তার তিন সন্তান ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, এরিক ট্রাম্প, ইভাঙ্কা ট্রাম্প, জামাতা হোয়াইট হাউজের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার, ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডলফ ডব্লিউ গিলিয়ানি প্রমুখ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আশঙ্কা, বাইডেন প্রশাসনের আমলে তাদের সবাই মার্কিন বিচার বিভাগের তদন্তের মুখোমুখি হতে পারেন। সেক্ষেত্রে ক্ষমতায় থাকতে থাকতেই নিজেকেসহ তাদের সবাইকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষিত ক্ষমার ছত্রচ্ছায়ায় নিয়ে আসতে চাইছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন গণমাধ্যমগুলো বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনায় বারবার প্রকাশ পেয়েছে, ক্ষমা ঘোষণার ক্ষমতাটিকে রীতিমতো উপভোগ করছেন তিনি। কয়েক সপ্তাহ ধরে সহযোগী মিত্রদের মধ্যে কার কার জন্য ক্ষমা ঘোষণা করা যায়, সে বিষয়ে তালিকাও চেয়েছেন। এছাড়া উপদেষ্টা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নামেও আগে থেকে ক্ষমা ঘোষণা করে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি অবাক করেছে তাদের অনেককেই। কারণ তাদের মতে, তারা এমন কোনো পরিস্থিতিতে নেই, যাতে সামনের দিনগুলোয় তাদের আইনি ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। মার্কিন প্রশাসনের এসব কর্মকর্তার মতে, অবস্থায় ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে নেয়ার অর্থ হলো নিজেকে কোনো না কোনো দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত হিসেবে স্বীকার করে নেয়া।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমার আওতা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অঙ্গরাজ্যগুলোর স্থানীয় আইনে অভিযুক্তদের ক্ষমা করার ক্ষমতা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দেয়া হয়নি। সেক্ষেত্রে ম্যানহাটনে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের অর্থায়ন নিয়ে চলমান তদন্তের ক্ষেত্রে দোষী প্রমাণ হলে ট্রাম্পের বিশেষ ক্ষমার কোনো মূল্যই থাকবে না।

ট্রাম্প তার কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষমাসংক্রান্ত এসব আলোচনা এমন এক সময় সামনে এল, যখন জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তাদের ওপর নির্বাচনের ফল বদলানোর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ এবং মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গার উসকানিদাতা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কারণে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছেন। তার ঘনিষ্ঠজনদের মতে, দুটো ঘটনাই ট্রাম্পের সামনে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার মতো আশঙ্কা তৈরি করেছে। আশঙ্কা আরো জোরালো হয়ে ওঠে বৃহস্পতিবার মার্কিন বিচার বিভাগের এক বক্তব্য সামনে আসার পর। এতে বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, মার্কিন বিচার বিভাগ মুহূর্তে ট্রাম্পকে ওই ঘটনার জন্য দায়ী করে অভিযোগ গঠনের সম্ভাবনাটিও উড়িয়ে দিচ্ছে না।

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শীর্ষ ফেডারেল প্রসিকিউটর মাইকেল শেরউইন বলেন, যারা সেদিন ক্যাপিটল ভবনে ঢুকেছিল, শুধু তাদের নয়। আমরা ঘটনার সামনের-পেছনের সব কুশীলবকেই খুঁজছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন