অবশেষে নিজেদের মেরুদণ্ড দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলিউড। কারণ আগুন এবার তাদের ঘরে হাজির হয়ে গেছে। রাজনৈতিক সমর্থন, বছরখানেক আগের মোদি সেলফি আর কাজ করছে না। চুপ থাকার উপায়ও আর নেই। করণ জোহর, শাহরুখ খান, সালমান খান, আমির খান, অক্ষয় কুমার ও অজয় দেবগন রিপাবলিক টিভি ও টাইমস নাউয়ের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন। ভারতীয় দর্শক বলিউড নিয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন তা নিয়ে কৌতূহল আছে পর্যবেক্ষক মহলে।
কয়েক মাস ধরে মিডিয়ার একাংশ, তদন্তকারী সংস্থা, সরকার ও দর্শকরা বলিউডকে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। মূলত সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্যময় মৃত্যুর পর শুরু হয়েছে এ পরিস্থিতি। অবশেষে দুটো চ্যানেলকে আদালতে নিয়ে প্রথমবার শক্ত জবাব দিয়েছে বলিউড। বলিউডের প্রথম সারির ৩৪ জন প্রযোজক জোট বেঁধেছেন, যাদের মধ্যে আছেন অক্ষয় কুমার ও অজয় দেবগনও। অক্ষয় ও অজয় বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তার পরও তারা বলিউডের বিরুদ্ধে চলা প্রচারণার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
বহু বছর ধরেই এটা প্রতিষ্ঠিত যে বলিউডের বেশির ভাগ তারকাই রাজনৈতিক মত প্রকাশে আগ্রহী নন। এনজিও ঘরানার অ্যাক্টিভিজমের বাইরে তারা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না।
রাজনীতি থেকে দূরে থাকা বলিউডের জন্য কাজেও এসেছে। গত কয়েক বছরে তেমন কোনো বড় সমালোচনার মুখে পড়েনি এ ইন্ডাস্ট্রি। অনেকেই বিশ্বাস করছিলেন মোদির সেলফি ম্যাজিক কাজ করছে। তবে তারা হয়তো বোঝেননি যে মোদি ম্যাজিকের এক্সপায়ারি ডেট আছে। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ঘটনা ছিল সেই সময়সীমা। আচমকাই ঝড়ের মুখে পড়ে গেছে বলিউড। হঠাৎই সব নিউজ চ্যানেলের শিরোনাম হয়ে ওঠে ইন্ডাস্ট্রি; নেপোটিজম, বাইরে থেকে আসা তরুণদের সুযোগের অভাব নিয়ে শুরু হয় চ্যানেলগুলোর প্রাইম টাইম ডিবেট। সবারই জানা, পরিস্থিতি দ্রুতই ঘৃণা উদগীরণ ও কাদা ছোড়াছুড়িতে রূপ নেয়। এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় দীপিকা পাডুকোন ও শ্রদ্ধা কাপুরের মতো বড় তারকাদের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণের অভিযোগ। সুশান্তর প্রেমিকা ও অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান।
কিন্তু এত সবকিছুর পরও গত কয়েক মাসে বলিউডের কোনো তারকাই মুখ খোলেননি। কঙ্গনার মতো কয়েকজন শুধু নিজের ইচ্ছামতো কথা বলে গেছেন। তিনি সবকিছুকেই নিজের মতো করে নিতে পছন্দ করেন।
তবে এবার বলিউডের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগীরা বিষয়গুলোতে কথা বলতে শুরু করেছেন। অবশ্য এটা ঘটেছে তাদের রুটিরুজির উপায় ও স্থান আক্রমণের মুখে পড়ায়। তাদের আদালতে যাওয়ার ঘটনাটা ঠিক তাই। তারা কেউ রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণের আগেই চলা নেতিবাচক প্রচারণা নিয়ে কথা বলেননি। কিংবা কঙ্গনা যখন সবার বিরুদ্ধেই ঘৃণা ছড়াচ্ছিলেন, তখনো মুখ খোলেননি। কিন্তু পরিস্থিতি যখন তাদের সিনেমা ও ব্যবসাকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে তখন তারা সক্রিয় হয়েছেন।
ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক জয়নাব সিকান্দার টুইট করেছেন, ‘সবাই যখন তাদের বয়কট করতে চাচ্ছে, তাদের ব্যবসা ঝুঁকিতে পড়ছে, তখন তারা (বলিউড) মুখ খুলতে শুরু করেছে। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে আসা গালিগালাজ এতদিন তারা নীরবে সহ্য করে গেছেন।’
বলিউড তারকাদের আদালতে যাওয়ার সময়টাও কৌতূহল জাগিয়েছে। কভিডের কারণে সাত মাস সিনেমা হল বন্ধ থাকার পর হলগুলো খুলে দেয়ার তিনদিন আগে এ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সিনেমা হল খুলছে এবং বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের ছবি মুক্তি পাবে সামনে। তাই বলিউড সজাগ হয়ে উঠেছে।
বলিউডের এ সরব হয়ে ওঠার পাশাপাশি তাদের নীরবতাকেও স্মরণে রাখা প্রয়োজন। তাদের এ কণ্ঠ নিজেদের স্বার্থের, শুধু নিজেদের জন্যই।
সূত্র: দ্য প্রিন্ট