পরিসংখ্যানের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে জনগণ —পরিকল্পনামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিসংখ্যানের যথার্থতা নিয়ে দেশের জনগণ প্রশ্ন তুলছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বলেছেন, আমরা যে বক্তব্যগুলো বলি, সেগুলোর যথার্থতা নিয়ে তারা প্রশ্ন করেন। এটা স্বাভাবিক, এটা করা উচিতও। সুতরাং পরিসংখ্যান নিখুঁত হওয়া বা সঠিক হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া প্রয়োজনীয় ব্যয় করতে এক সেকেন্ড সময় দেরি হবে না, কিন্তু কোনোভাবেই প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করা যাবে না।

গতকাল পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন দুর্যোগ পরিসংখ্যান শক্তিশালীকরণ (ইসিডিএসপ্রকল্পের দুদিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ভবনে কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর জেনারেটিং এসডিজিস ডাটা উইথ ফোকাস টু এনভায়রনমেন্ট, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের মোট খরচ ৩৬ কোটি লাখ ৭৪ হাজার টাকা। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে। প্রধান উদ্দেশ্য বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিঘাত প্রভৃতির অ্যাসেসমেন্ট পরিমাপের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পরিসংখ্যান প্রস্তুত প্রকাশ করা

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এবং অপচয় অবশ্যই রোধ করতে হবে। কাজ করতে গেলে অর্থের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে যা লাগবে তা খরচ করতে এক মিনিটও দেরি করবেন না। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করবেন না। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব যেভাবে অভিযোজন করছে আমরাও সেভাবেই অভিযোজন করেই চলব। কিন্তু কিছু বিষয় রয়েছে আমাদের নিজস্ব। যেমন শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই সবকিছু নয়। এর বাইরে আর্থিক বিষয়টিতে সাবধান হতে হবে। সারা বিশ্বই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সুতরাং ভয়ের ব্যাপার নয়। সারা বিশ্ব যেভাবে অ্যাডজাস্টমেন্ট করছে, আমরাও তা- করব। কিন্তু আমাদের ঘরের কিছু কাজ আছে, সেটা বিশ্বের সুইডেন করে দেবে না, নরওয়ে করে দেবে না। আমাদেরই করতে হবে।

সরকারি কর্মকর্তা, উপস্থিত পরিসংখ্যান তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব, বিবিএসের মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যয় করব। যথাসময়ে এক বিন্দু দেরি করব না, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় ব্যয় প্রতিরোধ করব। যাবতীয় বিষয়টিকে আমরা একটি শব্দের ওপর জোর দিতে চাই। অ্যাডাপ্টেশন ইংরেজিতে, বাংলায় অভিযোজন। অ্যাডাপ্টেশনের বাইরে আমরা বাস করতে পারব না।

পরিসংখ্যান তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেছেন, আমি পরিবেশ বন মন্ত্রণালয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি যে আমাদের বন কত শতাংশ আছে সেই তথ্যটা কিন্তু আমাদের বন বিভাগও সঠিকভাবে দিতে পারে না। একেকবার একেক তথ্য দেয়া হয়। প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আসে। বন কিন্তু বাড়ানোর সুুযোগ নেই। আমরা সেই তথ্য নিয়েও অনেকবার তাদের সঙ্গে সভা করেছি। তারা কিন্তু সঠিক তথ্য দিতে পারে না।

জলবায়ুর প্রভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলো লক্ষ করলে দেখি যে সেগুলোর ইনটেনসিটি কিন্তু দিনদিন বাড়ছে। একই প্রকারে সেগুলোর ফ্রিকোয়েন্সিও  অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এতে যে ক্ষয়ক্ষতি, সেটা নিরূপণও আমাদের সঠিক পদ্ধতিতে হয় না। বুলবুলের সময় ফসলের যে ক্ষতি হলো, কৃষি বিভাগ যে তথ্য দিল যে বরিশাল বিভাগের বড় অংশ ক্ষতির কবলে পড়েছে। সেটা আমার কাছে মনে হলো না। আমি নিজে প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরেছি। আমি বলেছি যে ১০ শতাংশ ক্ষতি হতে পারে। পরবর্তী সময়ে ফসল যখন ঘরে উঠল, কৃষি বিভাগের তথ্য হলো যে ফসল হারভেস্ট করেছে, তা তাদের টার্গেট অতিক্রম করে গেছে! যদি টার্গেটই অতিক্রম করে গিয়ে থাকে, তাহলে ড্যামেজটা কী হলো?

সময় আরো উপস্থিত ছিলেন এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, বিবিএস উপমহাপরিচালক ঘোষ সুব্রত প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন