চলতি মৌসুমের জন্য মেহেপুরের গাংনীতে সরকারিভাবে গম সংগ্রহ শুরু হয় গত ৬ মে। কিন্তু সরবরাহকারীর তালিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পরদিনই গম সংগ্রহ স্থগিত করা হয়। এর প্রায় এক মাস পার হতে চললেও গম সংগ্রহ শুরু করা হয়নি। এদিকে ৩০ জুন সরকারিভাবে গম সংগ্রহ কর্মসূচি শেষ হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃত চাষীরা এরই মধ্যে গম খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে না।
জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল থেকে দেশে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে সরকারিভাবে গম সংগ্রহ শুরু হয়। এর আওতায় এবার গাংনীতে ১ হাজার ৮৪৭ টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই গাংনীতে গম সংগ্রহ শুরু হয় গত ৬ মে। এজন্য ২ হাজার ১৯৫ জন সরবরাহকারীর তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ তালিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় মাত্র ১৩ টন ক্রয় করার পরই উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ৭ মে গম সংগ্রহ স্থগিত করা হয়। নতুন তালিকা করে গম ক্রয় শুরুর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১ জুন ৬ হাজার ৪২ চাষীর নতুন তালিকা খাদ্য অফিসে জমা দিয়েছে কৃষি অফিস। এদিকে ৩০ জুনের মধ্যে গম সংগ্রহ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। তাছাড়া কৃষকরা গম বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন গম নিতে হলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই নিতে হবে। এতে কৃষকদের কোনো লাভ হবে না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, ১৫ এপ্রিল থেকে গম ক্রয় শুরু করার কথা। কিন্তু তারা নানা টালবাহানা করে ৬ মে গম ক্রয় শুরু করে। সেখানেও তালিকায় একটি চক্রকে প্রাধান্য দেয়া হয়। তাই প্রকৃত কৃষকদের তালিকা প্রণয়নের জন্য আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম।
ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ইয়ানুর রহমান বলেন, এরই মধ্যে কৃষক বাছাই শেষ হয়েছে। আশা করি গম ক্রয় তাড়াতাড়িই শুরু করা হবে।
উপজেলা খাদ্যগুদামের (এলএসডি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, কৃষি অফিস প্রথমে যে তালিকা দিয়েছিল সে অনুযায়ী প্রত্যেক কৃষকের কাছ থেকে সর্বোচ্চ তিন টন গম সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু ওই তালিকায় প্রকৃত কৃষকদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ কারণে উপজেলা প্রশাসন গম ক্রয় বন্ধ রাখে। পরে কৃষি অফিস তালিকা সংশোধন করে ১ জুন আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। তালিকা প্রস্তুত করতে দেরি হওয়ায় গম ক্রয় কার্যক্রম আবার শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ৩০ জুন গম সংগ্রহ শেষ হবে। এ সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম সাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, যারা গম বিক্রিতে আগ্রহী প্রথম তালিকায় শুধু তাদের নাম দেয়া হয়েছিল। পরে উপজেলা প্রশাসন থেকে সব গমচাষীর তালিকা দিতে বলা হলে নতুন করে তালিকা করা হয়। এজন্য একটু দেরি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাজারের দর আর সরকারি দর একই। ফলে অনেকেই সরকারি গুদামে গম বিক্রির অপেক্ষা না করেই বাইরে গম বিক্রি করছেন। এখন অনেক কৃষকেরই ঘরে গম নেই।