কভিড-১৯ ও ঘূর্ণিঝড়ে সংকটে চিংড়ি খাত

খামার ও হ্যাচারিগুলোর জন্য বিশেষ প্রণোদনার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের দেশজ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান রফতানি আয়যোগ্য পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী চিংড়ি খাত নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) ফলে সৃষ্ট মহামারীতে খাদ্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংকটে রয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে চিংড়িঘের খামারগুলো প্লাবিত হয়ে যাওয়াসহ উৎপাদন অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবস্থায় বিকল্প উৎস থেকে খাতের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ খাদ্য আমদানিসহ সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি খামার হ্যাচারিগুলোর জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রিম্প অ্যান্ড ফিশ ফাউন্ডেশন (বিএসএফএফ) কভিড-১৯ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন খাতের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা এবং করণীয় বিষয় ঠিক করতে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী বোর্ডের একটি জরুরি সভা থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানিয়েছে বিএসএফএফ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বাংলাদেশের চিংড়ি খাত গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে চিংড়ি হ্যাচারিসমূহ এবং মাঠ পর্যায়ের চিংড়ি খামারিরা খামারে কার্যরত কর্মচারীরা নানাবিধ গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে সমস্যাগুলো এখনই মোকাবেলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে একদিকে যেমন হ্যাচারি পর্যায়ে পিএল উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং অন্যদিকে পিএলের অভাবে খামার পর্যায়ে উৎপাদন হ্রাস পাবে। আর চিংড়ি উৎপাদন হ্রাস পেলে প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাবে না। ফলে চিংড়ি রফতানির পরিমাণ রফতানি আয় কমে যাবে। এছাড়া সামগ্রিকভাবে খাতের কর্মসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

কভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণে উদ্ভূত সমস্যার প্রেক্ষাপটে চিংড়ি খাদ্য প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানি বিপণনে গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে উল্লেখ করে বিএসএফএফ বলছে, অতিসত্বর আমদানি ত্বরান্বিত করা এবং দ্রুত বিপণনের মাধ্যমে খামারি পর্যায়ে পৌঁছতে না পারলে বাংলাদেশের চিংড়ি খাত গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হবে, যা খাতের স্বল্প, মধ্য দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। এজন্য অতিসত্বর সরকারি পর্যায়ে সমস্যাগুলো সমাধানে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

কভিড-১৯ উদ্ভূত সমস্যা ছাড়াও সাম্প্রতিক প্রলয়ংকরী আম্পান ঝড়ের কারণেও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চিংড়ি খাত চিংড়ি খামারিরা গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং এলাকার চিংড়িঘের খামারগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে খামারিদের প্রস্তুতকৃত ঘের পুকুরগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যার ফলে খামারিদের বিনিয়োগ উৎপাদন অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবং ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের এখনই জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করছে বিএসএফএফ।

বর্তমানে বাংলাদেশের চিংড়ি খাত যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রেক্ষাপটে চিংড়ি খাতের খামারি হ্যাচারিগুলোকে স্বল্পসুদে ঋণ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহের জন্য উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি খাতসংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছে বিএসএফএফ। এছাড়া আমদানির জন্য ব্যবহূত বন্দরগুলোয় শুল্ক ছাড়পত্র সহজীকরণ, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে চিংড়ি খাতবান্ধব শুল্কনীতি গ্রহণ, চিংড়ির জন্য বর্তমান বিকল্প বাজারগুলোতে চিংড়ি রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিএসএফএফের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হকের সভাপতিত্বে বোর্ড মিটিংয়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসএফএফের পরিচালক এমএম ইস্পাহানী গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান ইস্পাহানী, বিশিষ্ট উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ শিক্ষাবিদ . সুলতান হাফিজ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সাবেক মুখ্য সচিব আব্দুল করিম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম হুসেন, নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক রাষ্ট্রদূত লিয়াকত আলী চৌধুরী, যুক্তরাজ্য মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক রাষ্ট্রদূত শফি ইউ আহমেদ, এনসিসি ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. নুরুল আমিন, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া কৃষি পল্লী উন্নয়ন (সাসার্ড) বিভাগের সাবেক সিনিয়র সেক্টর অপারেশনাল অফিসার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) অপারেশনস ডিরেক্টর বিশ্বব্যাংকের সাবেক সিনিয়র সেক্টর ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট . জিএম খুরশিদ আলম, প্রাগ্রশোর (একটি লিঙ্গ নারীবাদী প্রশিক্ষণ সংস্থানকেন্দ্র) নির্বাহী পরিচালক ফউজিয়া খন্দকার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন