কভিড-১৯

কর্মকর্তাদের আক্রান্তের তথ্য নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ১২ জন ব্যাংকার। মহামারী যখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র, তখনো করোনা আক্রান্ত নিজ কর্মীদের সংখ্যা জানে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ বলছে, এখন পর্যন্ত ঠিক কতজন কর্মকর্তা নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তার পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল দাবি করেছে, ৫০ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আরো অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি জানিয়ে গভর্নর ফজলে কবিরকে চিঠিও দিয়েছেন তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনাম রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনাও চমত্কার। অথচ করোনা সংক্রমণ ঠেকানো, আক্রান্ত কর্মীদের চিকিৎসা জনশক্তির ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের তত্পরতা যথেষ্ট নয়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিভাগ লকডাউন হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতি ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলায় বিপর্যয় নেমে আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বে আছেন নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্রের ভূমিকাও পালন করেন। বিষয়ে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ঠিক কতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তার তথ্য আমাদের কাছে নেই। বিচ্ছিন্নভাবে আমরা দু-চারজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে শুনেছি। তাদের মধ্যেও দু-একজন সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন।

করোনা আক্রান্ত কর্মীদের সুনির্দিষ্ট তথ্য পরিসংখ্যান কেন নেই? এমন প্রশ্নের উত্তরে মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানবসম্পদ বিভাগে নোটিস করার কথা। কিন্তু এমন নোটিসের সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা। কর্মীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ রোধ এবং ঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক শুরু থেকেই নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। শারীরিকভাবে দুর্বল, বয়স্ক, গর্ভবতী প্রসূতি নারী এবং উপসর্গ দেখা দিয়েছে এমন কর্মীদের অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। সব বিভাগীয় প্রধান নিজ কর্মীদের তদারকি করছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল দাবি করেছে, অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু দাবির কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তথ্য তারা আমাকে দিতে পারেনি।

নিজেদের দাবির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বণিক বার্তাকে বলেন, কর্মকর্তারা নিজেদের সুখ-দুঃখের কথা আমাদের জানান। তার ভিত্তিতেই আমরা অর্ধশতাধিক আক্রান্তের কথা বলেছি। তবে আক্রান্তদের সবাই কর্মকর্তা-কর্মচারী নয়, বরং তাদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। কর্মকর্তাদের পিতা, মাতা, স্ত্রী, ভাই-বোনও আক্রান্তদের মধ্যে থাকতে পারেন।

তিনি জানান, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি আছে। তার ভিত্তিতে ওই হাসপাতালে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা করোনার পরীক্ষা করাচ্ছেন। অনেক কর্মকর্তা ছুটিতে থাকা অবস্থায় করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। এজন্য হয়তো দাপ্তরিকভাবে সেটি জানাননি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক পুরোদমে চালু হয়েছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়বে। সংক্রমিত কর্মীরা যাতে যথাযথ চিকিৎসা পান, আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে সে দাবি জানিয়েছি।

দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ধরে রাখার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। নভেল করোনাভাইরাস সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যেও এখন পর্যন্ত সে দায়িত্ব সফলতার সঙ্গেই পালন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীর সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। ৫৩টি বিভাগ ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সচল থাকতে হবে। এজন্য নিজেদের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও সবার আগে ভাবতে হবে।

সব কর্মকর্তাকে একসঙ্গে অফিস না করিয়ে দুই থেকে তিন ভাগ করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালনের দাবি জানিয়ে জুন গভর্নর ফজলে কবিরকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল। ওই চিঠিতে বলা হয়, করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত দীর্ঘ সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে অফিস কার্যক্রম পুরো মাত্রায় চালু করা হয়েছে। লক্ষণীয় যে অফিস চালু হওয়ার পর অফিসের প্রধান ফটক, ভবনের ফটক, লিফট, করিডোরে মানবজট তৈরি হচ্ছে। স্টাফ বাসে পাশাপাশি বসে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিসে যাতায়াত করতে হচ্ছে। করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাসে করে যাতায়াতের দীর্ঘ সময় ভ্রমণে কর্মকর্তাদের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে। অনেক বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসন চেম্বার না থাকায় একই কম্পিউটারে একাধিক কর্মকর্তাকে কাজ করতে হচ্ছে। পরিস্থিতিতে অফিসের কাজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক গুরুত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আরো অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার উপসর্গ দেখা দিয়েছে। যারা করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন, ফলাফল এখনো তাদের হাতে পৌঁছেনি। অবস্থায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুই বা তিন ভাগ করে সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক ভিত্তিতে পালা করে দায়িত্ব পালনের দাবি জানিয়েছে অফিসার্স কাউন্সিল।

কোনো বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কেউ আক্রান্ত হলে ওই বিভাগের একাধিক কর্মকর্তাকে আইসোলেশনে যেতে হবে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এক্ষেত্রে বিকল্প কর্মকর্তা না থাকলে ওই বিভাগ অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়বে। কর্মকর্তাদের নভেল করোনাভাইরাসমুক্ত রেখে আর্থিক খাত নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখার জন্য ১৯ মার্চ থেকে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তাদের ১৫০ জন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটিকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন