বছরের দ্বিতীয়ার্ধ

স্মার্টফোন বাজারের জন্য কেমন যাবে?

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা। উত্পত্তিস্থল চীনের উহান হলেও ইউরোপ-আমেরিকায় বিপুলসংখ্যক প্রাণহানি ঘটিয়েছে ভাইরাসটির সংক্রমণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারী। শুধু প্রাণহানি নয়; স্থবির হয়ে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতির চাকা। বিভিন্ন শিল্প খাতের মতো কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব পড়েছে স্মার্টফোন বাজারে, যা চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) ডিভাইস সরবরাহ খতিয়ানে স্পষ্ট হয়েছে। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের জন্য চলতি বছর পুরোটাই খারাপ যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বুধবার বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কা তুলে ধরা হয়েছে। খবর ইটি টেলিকম।

আইডিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরজুড়ে স্মার্টফোন সরবরাহ ১২০ কোটি ইউনিটে দাঁড়াবে, যা গত বছর সরবরাহ হওয়া স্মার্টফোনের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ কম। কভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ছে সবার ওপর। যে কারণে স্মার্টফোন ডিভাইস বাবদ ভোক্তা ব্যয় উল্লেখযোগ্য কমেছে, যা সরবরাহ কমার প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারী শুধু ব্যবসায় সরবরাহ চেইনে বিভ্রাট সৃষ্টি করেনি। স্যামসাং এবং অ্যাপলের মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্মার্টফোন নির্মাতারা ডিভাইস উৎপাদন বিভ্রাটের মুখে পড়েছে। ডিভাইস নির্মাতা বড় অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

আইডিসির জ্যেষ্ঠ গবেষণা বিশ্লেষক সংগীতিকা শ্রীবাস্তব বলেন, বিশ্বের সিংহভাগ দেশে কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলার অংশ হিসেবে লকডাউন এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব গ্রাহকদের আস্থা হ্রাস করেছে। অনেকটা বাধ্য হয়ে মানুষ এখন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করছে, যা স্বল্প মেয়াদের জন্য হলেও স্মার্টফোন বাজারকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।

চীন স্মার্টফোনের বৃহৎ বাজার। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে দেশটির উহানে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে দেশটিতে সব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছিল অ্যাপল। পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে চীনে অ্যাপলের চুক্তিভিত্তিক ডিভাইস নির্মাতা ফক্সকন কারখানা কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে। অবশ্য চীন খুব দ্রুত নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সক্ষম হলেও তা ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা কল্পনাতীত বাড়তে থাকায় বিশ্বব্যাপী সব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে অ্যাপল। কভিড-১৯ মহামারীর আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চীনে সর্বশেষ আইফোন ১১ সিরিজের দাম উল্লেখযোগ্য কমানো হয়। এছাড়া সাশ্রয়ী আইফোন এসই ২০২০ উন্মোচন করা হয়। এসব উদ্যোগ আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে না বলে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছে অ্যাপল।

আরেক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেন্ডফোর্সের এক প্রতিবেদনে আগেই বলা হয়েছে, চলতি প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) স্মার্টফোন উৎপাদন এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে রেকর্ড ১৬ দশমিক শতাংশ কমবে। কারণ চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন উৎপাদন ১০ শতাংশ কমতে দেখা গেছে। ইতিবাচক হলো গত এপ্রিলে চীনা ডিভাইস উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাছে ডিভাইস সরবরাহ এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেড়েছে। বিষয়টিকে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে কিছুটা হলেও ডিভাইসের চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গত মার্চে ইউরোপের দেশগুলোয় কভিড-১৯ আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে বিক্রি হ্রাসের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল স্যামসাং। তবে নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার কারণে স্মার্টফোন বিক্রি কমলেও ফ্ল্যাগশিপ চিপ বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রতিষ্ঠানটি।

ওই সময় স্যামসাংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কিম কি-নাম বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে টানা কয়েক প্রান্তিক ধরেই চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। এতে বাড়তি জটিলতা সৃষ্টি করেছে নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা। আমরা বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে আধিপত্য ধরে রাখতে গ্যালাক্সি সিরিজের ডিভাইস দিয়ে অ্যাপলের আইফোনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আসছি। মোবাইল ডিভাইস; বিশেষ করে স্মার্টফোনের উৎপাদন হাব খ্যাত চীনে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ডিভাইস উৎপাদনে বিভ্রাট সৃষ্টি হয়। এখন উৎপাদন স্বাভাবিক হলেও নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে মানুষ শৌখিন পণ্য ক্রয়ে সাবধানতা অবলম্বন করছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার সংকুচিত হলেও চিপ বাজারে চাহিদা বাড়বে। স্যামসাংয়ের পরিচালন মুনাফার প্রায় অর্ধেকই চিপ ব্যবসা বিভাগ থেকে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে গত বছর স্যামসাংয়ের চিপ ব্যবসা বিভাগের প্রবৃদ্ধিতেও শ্লথগতি দেখা দিয়েছিল।

স্যামসাংয়ের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবসায় বিভাগের প্রেসিডেন্ট কোহ ডং-জিন বলেন, চলতি বছর স্মার্টফোন বাজার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরার পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সে সম্ভাবনা মুছে গেছে। এখন বাজারটি সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেহেতু পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। কাজেই সাধারণ স্মার্টফোন বাজার সংকুচিত হলেও ফাইভজি ডিভাইসের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন