স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে দ. কোরিয়া-জার্মানির জনজীবন

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) প্রতিরোধে সফল দেশ হিসেবে এরই মধ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। মরণঘাতী ভাইরাসটিতে সংক্রমিতের সংখ্যা নিম্নমুখী থাকায় দেশটিতে শিথিল করা হয়েছে সামাজিত দূরত্ব মেনে চলার কঠোরতা। সিউলের এমন অবস্থানে ধীরে ধীরে দোকানপাট-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে। কাজে ফিরতে শুরু করেছে নাগরিকরা। জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করায় শপিং মল, পার্ক, গলফ কোর্স রেস্টুরেন্টগুলোতে আবার জড়ো হতে শুরু করেছে মানুষ। একই পথে হাঁটছে ইউরোপের দেশ জার্মানিও। মহাদেশটির বিভিন্ন দেশ মৃত্যুপুরীতে রূপ নিলেও প্রাণহানি ঠেকানোর পাশাপাশি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখিয়েছে দেশটি। এমন সাফল্যে ভর করে ধাপে ধাপে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার পথে হাঁটতে শুরু করেছে অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের সরকার। এরই অংশ হিসেবে গতকাল থেকে জার্মানিতে কিছু দোকান খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স এএফপি।

কভিড-১৯ মহামারী ঠেকাতে শুরুতে উদ্যোগ নেয়া দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একই দিনে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হলেও দেশটিতে এরই মধ্যে এটি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখন ভাইরাসটির সংক্রমিত মৃতের দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। মরণঘাতী ভাইরাসটি প্রতিরোধে শুরু থেকেই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে কঠোর অবস্থান নেয় সিউল। পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত শনাক্তে পরীক্ষার ওপর জোর দেয় দেশটি। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

তবে এখন এসব প্রতিষ্ঠান চালু হলেও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে দেশটির নাগরিকরা। এসকে ইনোভিশন এবং নাভেরার মতো দক্ষিণ কোরিয়ার উদীয়মান অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারের ঘোষিত কর্মসূচি মেনে বাসা থেকে অফিস পরিচালনা করেছে। তবে কঠোরতা শিথিলের ফলে আবার অফিসের কার্যক্রমে ফিরতে শুরু করেছে তারা। কিন্তু এখনো কর্মঘণ্টা শিথিল করা, কর্মীদের বাইরে বেশি যাতায়াত বন্ধ করা এবং মুখোমুখি আলাপচারিতা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করছে তারা।


দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করলেও সেটি কেমন চলছে তা জানতে চাইলে ব্যাটারি তৈরি প্রতিষ্ঠান এসকে ইনোভিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের ৮০ শতাংশ কর্মীই সপ্তাহে কাজে যোগ দেবেন। অফিসে প্রবেশের আগেই তাদের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হবে। এছাড়া অফিসের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার চতুর্থ বৃহৎ ওয়েবপোর্টাল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নাভের করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি তাদের অর্ধেকেরও কম কর্মীকে অফিসে আসার অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া মোবাইল গেমিং ফার্ম নেটমার্বেল তাদের কর্মীদের সপ্তাহে তিনদিন অফিস করার বিষয়ে অনুমতি দিচ্ছে। নাভেরার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা থার্মাল ক্যামেরা চালু করেছে। এছাড়া পুরো শরীর জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

কোরিয়া সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (কেসিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গতকাল দেশে নতুন করে কভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে ১৩ জন। এর আগের দিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল মাত্র জন। আর পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৩৬ জনের। তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন মাত্র দুজন। তবে এখনো করোনা শনাক্তে পরীক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে দেশটি। সর্বশেষ গতকালও দেশটিতে হাজার ৯২৬ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে লাখ ৬৩ হাজার ৩৫ জনের। যা থেকে শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৬৭৪ জন।


সব মিলিয়ে কভিড-১৯-এর ভয়াবহতা কমে আসার প্রত্যাশায় এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে কঠোরতা আরোপ করা হয়েছিল সেটি শিথিল করা হচ্ছে। তবে এখনই পুরো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হচ্ছে না। গত শনিবার থেকে নতুন করে আরো ১৬ দিনের জন্য নির্দেশনা বাড়ানো হয়েছে। ধর্মীয় খেলাধুলার বিষয়টিতে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছে। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনই না খুলে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।

এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তর অথর্নীতির দেশটি সবকিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সতর্ক অবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে সিউল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সেনাবাহিনী তাদের স্ক্রিনিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। এছাড়া দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। যেকোনো সময় নতুন করে ক্লাস্টার সংক্রমণ তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। মহামারী ভাইরাস মোকাবেলার মধ্যেই সম্প্রতি দেশটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় নির্বাচন এবং আসন্ন দীর্ঘ ছুটিতে নতুন করে ধরনের সংক্রমণের আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

আর আশঙ্কার অন্যতম কারণ হলো দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর বুসানে গত শনিবার ৫৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হওয়া। এর পর পরই নড়েচড়ে বসছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। কারণ ওই ব্যক্তি ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার আগে উপসর্গ লক্ষণ নিয়েই ভোট দিতে গেছেন। ইস্টার উপলক্ষে গির্জায় অংশগ্রহণ এবং কয়েকটি রেস্টুরেন্টে ভ্রমণ করেছেন। মনে রাখতে হবে, দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণ ব্যাপক হওয়ার শুরুটাও হয়েছিল গির্জায় অংশগ্রহণকারী এক ব্যক্তি থেকে। সে কারণে সফলতার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে দেশকে নতুন করে বিপদে ফেলতে মোটেই রাজি নয় সিউল।

অন্যদিকে ভাইরাসটিতে পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মৃতের দুই-তৃতীয়াংশই ইউরোপের। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ইউরোপে পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে। আর জার্মানি পুরো ইউরোপের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সফল দেশগুলোর একটি। দেশটিতে সরকারিভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে গতকাল থেকে কিছু এলাকায় ছোট ছোট দোকান খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ধীরে ধীরে বড় দোকান এবং বড় শহরগুলো চালু করার পথে হাঁটছে বার্লিন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন