তদারকি না থাকায় বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন নদ-নদীতে অবাধে চলছে অবৈধ নৌযান। এসব অবৈধ
নৌযানের কারণে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। গত আট মাসে বিভাগের বিভিন্ন নদীতে ঘটা
চারটি নৌ-দুর্ঘটনায় অধিকাংশের
জন্য দায়ী এসব অবৈধ নৌযান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরিশালের নদীতে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে, তার জন্য অবৈধ বাল্কহেড ও কার্গোই দায়ী। কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায়
দিনের পর দিন বাড়ছে এসব নৌযানের সংখ্যা। তবে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর বরিশালের কর্মকর্তাদের দাবি, অনুমোদনবিহীন ও অবৈধ
জলযানের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর
বরিশাল কার্যালয় ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মাসে (জুলাই ২০১৯ থেকে
ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত) বরিশাল বিভাগে চারটি
বড় নৌ দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে মেঘনা নদীর হিজলার মাঝেরচরে ঢাকা-বরিশাল রুটের যাত্রীবাহী কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের মাঝ বরাবর ধাক্কা দেয় ঢাকা-হুলারহাটগামী ফারহান-৯ লঞ্চ নামের আরেকটি লঞ্চ। এতে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের যাত্রী মাহমুদা (২৪) ও তার ছেলে
মুমিন খান (৭) ঘটনাস্থলেই নিহত
হন। গুরুতর আহত হন উভয় লঞ্চের আরো ১০ যাত্রী। এর আগে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর
কীর্তনখোলা নদীতে লঞ্চের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ১২০০ টন ক্লিংকারসহ এমভি হাজি
মোহাম্মদ দুদু মিয়া-১ কার্গোডুবিসহ
বরিশাল-ঢাকা রুটে প্রায়
১০টির মতো নৌযানডুবির ঘটনা ঘটে। গত বছরের ১৭ জুলাই রাতে মিয়ারচর এলাকায় ঢাকা থেকে
বরিশালগামী সুন্দরবন-১০ ও পারাবত-১১ লঞ্চ একে অপরকে ধাক্কা দিলে যাত্রীদের
মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন সময় ছোটখাটো আরো কয়েকটি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটলেও সেগুলোর কোনো তথ্য নেই
অধিদপ্তরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,
জনবল সংকট
ও তদারকির অভাবে অবৈধ বাল্কহেডের পাশাপাশি কার্গোসহ ছোট-বড় বিভিন্ন পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করছে
বরিশালের নদীগুলোয়। এর মধ্যে সন্ধ্যা,
সুগন্ধা, আড়িয়াল খাঁ, পায়রা, ইলিশা, কীর্তনখোলা, মেঘনা, লোহালিয়া, তেঁতুলিয়া, আগুনমুখা, বিষখালীসহ বিভিন্ন
নদীতে অবৈধ নৌযানগুলোর যাতায়াত বেশি।
অভিযোগ রয়েছে, রাতের পাশাপাশি অনেক
সময় দিনেও কৌশলে অবৈধ (সার্ভে সনদবিহীন) কার্গো ও বাল্কহেড
চলাচল করে বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদীতে। নাম প্রকাশ
না করার শর্তে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের
কর্মকর্তারা জানান, অধিকাংশ সময় দিনেই
অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু অবৈধ এসব নৌযান বেশির ভাগ সময় রাতে চলাচল করে।
এজন্য অবৈধ নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, নৌ-মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা অবৈধ নৌযানের
বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার রয়েছে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের। এ অধিপ্তরের একটি কার্যালয় বরিশাল নদীবন্দর সংলগ্ন
এলাকায়। যেখানে বিআইডব্লিউটিসির ভবনের একটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে আঞ্চলিক কার্যালয়ের
কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর বরিশাল সদর ছাড়া বিভাগের অন্য কোনো জেলায় অভিযান
পরিচালনা করতে হলে এখান থেকেই কর্মকর্তাদের যেতে হয়। এছাড়া নদীবেষ্টিত বরিশালের এ
দপ্তরটিতে ইন্সপেক্টর রয়েছেন মাত্র দুজন। তাদের পক্ষে সব সময় অভিযান পরিচালনা করাও
অসম্ভব।
নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের
আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান,
গত এক
বছরে বরিশাল বিভাগে আটটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বছরব্যাপী পরিচালিত এসব
অভিযানে ১৮০টি মামলা ও ২২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানকালে অবৈধ ১০০টি
কার্গো ও বাল্কহেড জব্দ করা হয়।
নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর বরিশালের ইঞ্জিনিয়ার ও শিপ সার্ভেয়ার আবু হেলাল সিদ্দিকী বণিক বার্তাকে বলেন, হয়তো সড়কের মতো নদীপথে এক সঙ্গে অনেক জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিভাগজুড়ে অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ বাল্কহেড ও কার্গোকে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হচ্ছে না। বরিশাল অঞ্চলে চলাচলকারী বৈধ ও অবৈধ নৌযানের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ তথ্য বরিশাল কার্যালয়ে নেই।তবে ঢাকা কার্যালয়ে পাওয়া যাবে।