বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল আজ

যুবাদের শিরোপা জয়ের মিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাফল্যের স্বর্ণশিখরে উঠতে সামনে কেবল একটিই বাধা। আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে আজ শক্তিশালী ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। যুবারা জিতলেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন হবে এটি। গোটা দেশও উত্সবে মেতে ওঠার দারুণ একটি উপলক্ষ পাবে। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ২টায়।

যুব বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত বর্তমান শিরোপাধারীও। এবারো হট ফেভারিট দলটি। ফাইনালে ওঠার পথে দারুণ নৈপুণ্যও দেখিয়েছে তারা। সেমিফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দেয় প্রিয়ম গর্গের দল। বিপরীতে এটি বাংলাদেশের প্রথম ফাইনাল। কিন্তু প্রথম হলেও ম্যাচের আগে নিজেদের আন্ডারডগ ভাবার সুযোগও নেই বাংলাদেশের। গোটা টুর্নামেন্টে দাপুটে খেলে ফাইনালে উঠেছেন আকবর আলীরা। ভারতের মতো বাংলাদেশও ফাইনালে উঠেছে অপরাজিত থেকে। ফাইনালে ভারতকে হারানোর সামর্থ্যও বেশ ভালোভাবে রাখেন সাম্প্রতিক সময়ে ছন্দে থাকা টাইগার যুবারা। এখন নিজেদের সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে জ্বলে ওঠার অপেক্ষা।

গ্রুপ পর্বের শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে বাংলাদেশ। ফাইনালের আগে নিজেদের সাফল্য রহস্যের কথা জানালেন বিসিবির পরিচালক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ, আসল রহস্য হচ্ছে আমরা প্রচুর ক্রিকেট খেলেছি। বিসিবি প্রচুর ট্যুর আয়োজন করেছে। যেখানে আমরা ৩০টির বেশি ম্যাচ খেলে ১৮টি জিতেছি।

বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার জন্য দেশ ছাড়ার আগে আকবরও ইতিবাচক প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছেন। বলেছিলেন, তারা এগোতে চান ম্যাচ ধরে ধরে। নিজেদের কথামতো কাজও করেছেন ক্রিকেটাররা। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাতিল হওয়া ম্যাচটিতেই কেবল ব্যাটিংটা ভালো হয়নি। পরে কোয়ার্টার সেমিতে ঠিকই দারুণভাবে ফিরে আসেন জয়-রাকিবুলরা। ব্যাটে-বলে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে দুটি ম্যাচই দারুণভাবে জিতে নেয় বাংলাদেশ। তবে কোনো একক কৃতিত্বে নয়, দুটি ম্যাচই বাংলাদেশ জিতেছে ঐক্যের শক্তিতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের নায়ক ছিলেন রাকিবুল। কিন্তু ব্যাট হাতে তানজীদ হাসান, তৌহিদ হূদয় শাহাদাত হোসেন এবং বোলিংয়ে তানজিম হাসান সাকিবের পারফরম্যান্সকে ভুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন মাহমুদুল হাসান জয়। সঙ্গে শরিফুল-শামীমদের বোলিং এবং তৌহিদ-শাহাদাতের ব্যাটিংও দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। 

ব্যাটিং-বোলিং দুদিকেই ভারত বেশ শক্তিশালী দল। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিতে চোখ রাখলেই তার প্রমাণ মেলে। সেদিন পাকিস্তানকে মাত্র ১৭২ রানে গুটিয়ে ভারত ম্যাচ জিতে নেয় ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ওপেনার যশস্বী জাসওয়াল। অবশ্য সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে ভারতের দুর্দান্ত ব্যাটিং-বোলিং লাইনআপকেও থামানো সম্ভব। বোলিংয়ে ভারতের মূল অস্ত্র শর্ট বল। অস্ত্র দিয়ে এর আগে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে কাবু করেছে ভারতের পেসাররা। বাংলাদেশের বিপক্ষেও ভারত অস্ত্র ব্যবহার করবে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এখন ভারতের এই বোলিংয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কেমন হয়, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। অন্যদিকে ব্যাটিংয়ে ভারতের মূল ভরসা দুই ওপেনার। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুজন বাকিদের মাঠেই নামতে দেয়নি। ফাইনালে বাংলাদেশের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ থাকবে দুজনকে দ্রুত সাজঘরে পাঠানো। দুজনকে ওপর থেকে তুলে নিতে পারলে টাইগার যুবাদের জন্য কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

ফাইনালে ভারতকে হারাতে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর বলেন, আমরা ফাইনালকে অন্য আরেকটা ম্যাচের মতোই নিচ্ছি। সবাই খুব রোমাঞ্চিত ম্যাচ নিয়ে। মূল কাজগুলো ঠিকঠাক করতে চাই। আমরা আগের ম্যাচগুলোর পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে দেখছি এবং সেখান থেকে শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি ভারতকে হারাতে পারব।

অবশ্য ভারতকে হারানোর আশা করলেও কাজটি যে সহজ নয়, সেটি ভালো করেই জানেন আকবর। পরে প্রতিপক্ষ ভারতের প্রশংসা করে তিনি আরো বলেন, ভারত দারুণ একটি দল। সব বিভাগেই তারা ভালো একটি দল। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে অপরাজিত দলও তারা। আমরাও অপরাজিত এখনো। আশা করছি দারুণ একটি ম্যাচ হতে যাচ্ছে। ভারতের পাশাপাশি নিজেদের দলের ওপর বিশ্বাস রাখার কথা সময় জানান আকবর। সেই সঙ্গে তিনি কাজে লাগাতে চান নিজেদের নেয়া পরিকল্পনাগুলোও। আর দিন শেষে নিজেদের পরিকল্পনামতো কাজ করতে পারলে ফলাফলও আসবে বাংলাদেশের পক্ষে।

এর আগে সেমিফাইনালে জেতার পরও বেশ পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বলেছিলেন, ফাইনাল সামনে রেখে তারা কোনো চাপ নিতে চান না। নির্ভার হয়ে খেলতে চান তারা। পাশাপাশি প্রথমবার ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়লেও আবেগে ভেসে যাচ্ছেন না তারা। চারদিক থেকে আসা প্রশংসাবাক্যগুলোও আপাতত কানে তুলছেন না। অবশ্য চাপ কিংবা আবেগ, ফাইনালের আগে সামলে রাখা সহজ নয়। বিশেষ করে সেটি যদি হয় বিশ্বজয়ের মতো কোনো আসরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে সে চাপ সামলে উঠতে পারাটাই মূল ব্যাপার। দিন শেষে যারা সেই কাজটি করতে পারে, জয় নিয়ে ফিরতে পারে তারাই। অবশ্য বাংলাদেশ এরই মধ্যে একাধিকবার প্রমাণ দিয়েছে, তারা মানসিকতার দিক থেকে কতটা শক্তিশালী। এখন ফাইনালের মঞ্চে সেসব আরেকবার ফিরিয়ে আনার অপেক্ষা।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন