লসিকানালির প্রবাহ
বাধাগ্রস্ত হয়ে
পানি জমে
শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
ফুলে যাওয়াকে
বলা হয়
লিম্ফেডিমা।
দেশের বিভিন্ন
স্থানে এ
রোগে আক্রান্ত
মানুষের দেখা
মিললেও এদিক
থেকে সবচেয়ে
নাজুক অবস্থানে
রংপুর বিভাগ। স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের সর্বশেষ
প্রকাশিত বুলেটিনের
তথ্য বলছে,
সারা দেশে
এ রোগে
মোট আক্রান্তের
৮৭ শতাংশই
রংপুর বিভাগের
সাত জেলার
বাসিন্দা।
বিভাগটিতে একমাত্র
গাইবান্ধা জেলাতেই
এখন পর্যন্ত
এ রোগের
প্রকোপ তেমন
একটা দেখা
যায়নি।
লিম্ফেডিমা বা
লিম্ফেটিক অবস্ট্রাকশন
হলো একটি
দুরারোগ্য ব্যাধি। এ
রোগের ক্ষেত্রে
দেহের টিস্যুগুলোয়
অতিমাত্রায় পানি
জমে ফুলে
যায়।
মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ
ব্যবস্থার একটি
অংশ হলো
লসিকানালি (লিম্ফেটিক
সিস্টেম)। এ
নালির মধ্য
দিয়ে লসিকার
(লিম্ফ) প্রবাহ
কোনো কারণে
বাধাগ্রস্ত হয়ে
পানি জমে
যাওয়ার কারণেই
(ইডিমা) দেখা
দেয় লিম্ফেডিমা। সাধারণত
হাত বা
পায়ে এ
রোগের সংক্রমণ
দেখা দেয়। কোনো
কোনো ক্ষেত্রে
উভয় হাত
বা পায়ে
এ রোগের
সংক্রমণ দেখা
দিতে পারে। এমনকি
কোনো কোনো
রোগীর ক্ষেত্রে
মস্তিষ্ক, প্রজননতন্ত্র
বা বুকেও
এ রোগের
সংক্রমণ দেখা
দেয়ার নজির
রয়েছে।
দুরারোগ্য হলেও
সঠিক চিকিৎসার
মাধ্যমে রোগটিকে
নিয়ন্ত্রণে রাখা
সম্ভব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন,
বাড়তি মাংসপেশি
বা টিউমারের
কারণে হাত-পায়ের
লসিকানালি স্বাভাবিক
কার্যক্ষমতা হারিয়ে
ফেলে।
আবার ক্যান্সারের
চিকিৎসায় ব্যবহূত
কেমোথেরাপির প্রভাবেও
লসিকানালির কার্যক্রম
বাধাগ্রস্ত হতে
পারে।
এছাড়া পর্যাপ্ত
চিকিৎসার অভাবে
গোদ রোগের
(ফাইলেরিয়া) পরিস্থিতি
ক্রমে খারাপের
দিকে গিয়ে
এ রোগ
দেখা দিতে
পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
সর্বশেষ প্রকাশিত
স্বাস্থ্য বুলেটিনের
তথ্য বলছে,
সারা দেশে
মোট লিম্ফেডিমা
রোগীর সংখ্যা
৩০ হাজারের
কিছু বেশি। অন্যদিকে
রংপুর বিভাগের
গাইবান্ধা ছাড়া
অন্য সাত
জেলায় এ
রোগে আক্রান্তের
সংখ্যা ২৬
হাজার ৭৮১। অর্থাৎ
সারা দেশে
আক্রান্তের ৮৭
শতাংশই রংপুর
বিভাগে।
এর মধ্যে
শুধু রংপুর
জেলাতেই এ
রোগে আক্রান্তের
সংখ্যা ৮
হাজার ৫৩২।
বিভাগটিতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব এভাবে কেন্দ্রীভূত হওয়ার কারণ হিসেবে দারিদ্র্যকেই চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দারিদ্র্যপ্রবণ বিভাগটির জেলাগুলোয় যেমন অপুষ্টির প্রকোপ রয়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যসচেতনতার অভাবও মারাত্মক। এ কারণে রংপুর বিভাগে লিম্ফেডিমার মতো রোগে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি।
রোগটি সম্পর্কে
জানতে চাইলে
বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব মেডিকেল
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য
(গবেষণা ও
উন্নয়ন) অধ্যাপক
ডা. মো. শহিদুল্লাহ
সিকদার বণিক
বার্তাকে বলেন,
সাধারণত শরীরের
লসিকানালি বাধাগ্রস্ত
হলে রোগটি
হয়ে থাকে। এটা
হাত ও
পায়ে বেশি
দেখা দেয়। এ
রোগে মাংসপেশিগুলো
অস্বাভাবিক ফুলে
যায়।
ফলে রোগীর
চলাচলে অসুবিধা
হয়।
শারীরিক ও
মানসিকভাবে দুর্বল
হয়ে পড়ে। রোগটি
আরো বেশকিছু
কারণে হতে
পারে, যার
মধ্যে গোদ
রোগ একটি। দেশের
উত্তরাঞ্চলে এর
প্রকোপ বেশি।
লিম্ফেডিমায় আক্রান্ত
রোগী সবচেয়ে
বেশি শনাক্ত
হয়েছে রংপুর
জেলায়।
এখানে রোগটির
প্রাদুর্ভাবের অন্যতম
কারণ গোদ
রোগের প্রকোপ। জেলাটির
সিভিল সার্জন
হিরম্ব কুমার
রায় বলেন,
কিউলেক্স মশার
কামড়ে গোদ
রোগের সংক্রমণ
দেখা দিতে
পারে।
তবে দীর্ঘদিন
ধরে এটির
চিকিৎসায় অবহেলা
হলে পরবর্তী
সময়ে তা
লিম্ফেডিমায় রূপ
নেয়।
প্রাথমিকভাবে শরীরের
নিম্নাংশ, বিশেষ
করে পায়ে
পানি জমে। পরে
তা শরীরের
অন্য অংশেও
ছড়িয়ে পড়তে
পারে।
দরিদ্রতা ও
অসচেতনতার কারণে
এ অঞ্চলে
রোগটির প্রাদুর্ভাব
বেশি।
রংপুর বিভাগের
শুধু গাইবান্ধায়
এ রোগের
প্রকোপ তেমন
একটা উল্লেখযোগ্য
নয়।
বাকি সাত
জেলার সবক’টিই
এ রোগের
প্রাদুর্ভাব তালিকার
শীর্ষ পর্যায়ে
রয়েছে।
নীলফামারীতে লিম্ফেডিমা
রোগী শনাক্ত
হয়েছে ৫
হাজার ৪৭৫
জন।
লালমনিরহাটে শনাক্ত
হয়েছে ৫
হাজার ৩৮৩
জন।
এ প্রসঙ্গে
লালমনিরহাট জেলার
সিভিল সার্জন
ডা. কাসেম
আলী বলেন,
এ রোগের
প্রকোপ কমাতে
উদ্যোগ নেয়া
হয়েছে।
জেলায় রোগটি
প্রায় নির্মূলের
পথে।
ঠাকুরগাঁওয়ে লিম্ফেডিমায়
আক্রান্তের সংখ্যা
২ হাজার
৭৬৭।
এখানেও রোগটির
প্রকোপের বড়
কারণ হিসেবে
মশাকেই দায়ী
করেছেন জেলাটির
সিভিল সার্জন
আনোয়ারুল ইসলাম।
রংপুর বিভাগের
অন্য জেলাগুলোর
মধ্যে দিনাজপুর
জেলায় ২
হাজার ৪৪
জন, পঞ্চগড়ে
১ হাজার
৩৪১ ও
কুড়িগ্রামে ১
হাজার ২৩৯
জন লিম্ফেডিমায়
আক্রান্ত রোগী
শনাক্ত হয়েছে।
রংপুর বিভাগের
বাইরের অন্যান্য
জেলার মধ্যে
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬৯৩
জন, ঝালকাঠিতে
৫৯২ ও
বরগুনায় ৫৪২
জন লিম্ফেডিমায়
আক্রান্ত রোগী
শনাক্ত করা
হয়েছে।
এছাড়া বরিশাল,
পটুয়াখালী, পিরোজপুর,
কুষ্টিয়া, পাবনা,
রাজশাহী ও
চুয়াডাঙ্গা জেলায়ও
উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগী
পাওয়া গেছে।