বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুরু মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ ক্ষণগণনার উদ্বোধন করেন।

গতকাল ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের এই দিনে দেশে ফিরে আসেন। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ দিনটিকেই মুজিব বর্ষ উদযাপনের ক্ষণগণনা শুরুর সময় হিসেবে বেছে নেয়া হয়। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের এ স্থানটিতেই প্রথম পা রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সে সময় ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর একটি উড়োজাহাজ লন্ডন থেকে নয়াদিল্লি হয়ে তাকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের তত্কালীন ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

অনুষ্ঠানে গতকাল জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মুহূর্তটির প্রতীকী আবহ তৈরি করা হয়। এজন্য বড় একটি এলইডি স্ক্রিনে বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরার সময় ধারণকৃত ঐতিহাসিক মুহূর্তের ভিডিও ও স্থিরচিত্র প্রদর্শন করা হয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে সম্প্রতি সংযোজিত একটি সি-১৩০ জে উড়োজাহাজকে বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে অবতরণ করানোর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক মুহূর্তটির পুনরাবৃত্তি করা হয়।

অবতরণের পর টারমাক এলাকায় পৌঁছলে উড়োজাহাজটির দরজা খোলা হয়। টারমাকে উড়োজাহাজটি থামার নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করা ছিল সিঁড়ি ও লালগালিচা। এ সময় উড়োজাহাজের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ২১ বার তোপধ্বনি করা হয়। দরজা খোলার পর লেজার লাইটের মাধ্যমে সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আলোকিত করা হয়। সে আলো সিঁড়ি থেকে ধীরে ধীরে লালগালিচার মাথায় এসে থেমে যায়। লেজারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির আলো দৃশ্যমান হওয়া মাত্র উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। এ সময় স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিকৃতির আলোয় ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দেয়। এর পর পরই সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে গার্ড অব অনার দেয়া হয় ও জাতীয় সংগীতের বাদ্য পরিবেশন করা হয়।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সুমহান ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দীর্ঘ ২৩ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। ১৩ বছরেরও বেশি সময় জেলে কাটিয়েছেন। তিনি নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে কোনোদিন আপস করেননি। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ছিলেন অটল। সবসময় ন্যায় ও সত্যের পথে থেকে দেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা শতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার অমূল্য স্মৃতি ও স্মারক সংরক্ষণ করতে চাই। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঙালি জাতির গৌরব এবং পূর্বসূরিদের অসীম সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের অনন্য গাথা জানতে পেরে সেই আলোকে নিজেদের আলোকিত করতে পারে।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম ত্যাগ ও অসীম সাহসিকতার কথা সুবিদিত হয়ে থাকবে। এই মুজিব বর্ষ উদযাপনে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর মাধ্যমেই সর্বজনীন অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বক্তব্য রাখার পর প্রধানমন্ত্রী সুইচ চেপে মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনার উদ্বোধন করেন। এ সময় তেজগাঁও বিমানবন্দরে স্থাপিত ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনা শুরু হয়। একই সঙ্গে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপিত ডিজিটাল ডিসপ্লেতেও ক্ষণগণনা শুরু হয়। আগামী ১৭ মার্চ মধ্যরাতে এসব ঘড়ির ডিজিট একযোগে শূন্য হয়ে

যাবে। প্রধানমন্ত্রী ক্ষণগণনার উদ্বোধনকালে শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্ত করার পাশাপাশি বেলুন উড়ানো হয়।

এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কাছে বঙ্গবন্ধুর ছবিসংবলিত মুজিব বর্ষের লোগো হস্তান্তর করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন