উৎপাদনে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর

বণিক বার্তা প্রতিনিধি মিরসরাই

চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনীর বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠছেবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে চলছে শিল্প স্থাপনের কাজ। এরই মধ্যে এ শিল্পনগরে স্থাপিত একাধিক কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।

জানা গেছে, এক মাসের মধ্যে এ শিল্পনগরে পণ্য উৎপাদনে যাচ্ছে রাসায়নিক উৎপাদক চীনা কোম্পানি জেনিয়ান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি। ১০ একর জমির ওপর নির্মিত কারখানায় জেনিয়ান শুরুতে লেড নাইট্রেট তৈরি করবে তারা। পরবর্তী ধাপে অন্য কেমিক্যাল প্রস্তুত করতে বিনিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি। জেনিয়ান কেমিক্যাল বাংলাদেশের প্রতিনিধি শাখাওয়াত হোসেন (মাসুদ) হোসেন বণিক বার্তাকে জানান, আগামী জানুয়ারিতে তারা উৎপাদনে যাবেন। তাদের উৎপাদিত লেড নাইট্রেট শতভাগ রফতানি করা হবে।

চীনা এ কোম্পানি ছাড়াও শিগগিরই উৎপাদনে যাবে দেশী প্রতিষ্ঠান মডার্ন সিনটেক্স। টি কে গ্রুপের এ প্রতিষ্ঠান ২০ একর জমির ওপর কারখানা স্থাপনের জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। জার্মানির একটি গ্রুপের মাধ্যমে তাদের কারখানার নকশা তৈরি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি পলিয়েস্টারের সুতা ও কাপড় তৈরির ভার্জিন চিপস উৎপাদন করবে। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টন উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

এছাড়া আরো সাতটি শিল্প-কারখানা শিগগিরই পণ্য উৎপাদনে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান। এগুলোর মধ্যে এশিয়ান পেইন্ট ২০, ম্যাকডোনাল্ড স্টিল, মডার্ন সিনটেক্স, যোজু কেমিক্যাল ও জাপানের নিপ্পন স্টিল অন্যতম। নিপ্পন স্টিল এখানে গাড়ি উৎপাদন কারখানা করবে। আর আগামী এক বছরে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান।

দৃশ্যমান হচ্ছে ৩০ হাজার একর জমির ওপর নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুরচর, শীলচর, মোশাররফচর ও পীরেরচর এলাকা, ফেনীর সোনাগাজী ও সীতাকুণ্ড অংশের চরাঞ্চলজুড়ে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম এ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এরই মধ্যে ৫৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান জমি নিয়েছে। মাটি ভরাট করে প্রস্তুত করা হয়েছে দুই হাজার একর জমি।

জানা গেছে, ৭ হাজার ৭১৬ একর জমিতে ও সমুদ্রতীরবর্তী জেগে ওঠা ১৫ হাজার একর জমির মধ্যে চারটি মৌজায় ৬ হাজার ৩৯০ একর জায়গায় চলছে কর্মযজ্ঞ। চায়না হারবার কোম্পানির তত্ত্বাবধানে সেখানে নির্মিত হয়েছে অবকাঠামো, তৈরি হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ। এরই মধ্যে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি হয়েছে ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মিরসরাই ইপিজেড পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে চার লেনের আরো ১০ কিলোমিটার শেখ হাসিনা এভিনিউ। মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংযুক্ত হচ্ছে এ অঞ্চলের সঙ্গে। সমুদ্র উপকূল ঘেঁষে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নৌবাহিনী ও চায়না হারবার কোম্পানি সাড়ে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করছে। কারখানায় পানি সরবরাহের জন্য দুই একর জমিতে তৈরি করা হবে জলাধার। সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

বেজা সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলে দেশী-বিদেশী শিল্পোদ্যোক্তাদের ৮৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। সেখানে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে বিনিয়োগ করতে চায় বসুন্ধরা, পিএইচপি, কেএসআরএম, বিএসআরএম, ঝেজিয়াং, কুনমিংসহ বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ।

এছাড়া ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে সামিট চিটাগং পাওয়ার, ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রি, বিপিডিবি আরপিসিএল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চায় ১ হাজার কোটি টাকা, আরব-বাংলাদেশ ফুড ১০০ কোটি, গ্যাস-১ লিমিটেড ২০০ কোটি, ফন ইন্টারন্যাশনাল ২০০ কোটি, ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সাড়ে ৫০০ কোটি, আরমান হক ডেনিমস ১০০ কোটি ও অর্কিড এনার্জি ২০০ কোটি টাকা। তবে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে পিএইচপি গ্রুপ। পিএইচপি স্টিল ওয়ার্কস বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে সেখানে স্টিল মিল স্থাপন করবে। এ গ্রুপ ৫৬৪ একর জমিতে স্টিল মিলসহ বিভিন্ন খাতে দুই ধাপে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি ৫০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন। এতে আধুনিক পাল্প অ্যান্ড বোর্ড মিলসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপন ও ইকোনমিক জোনের উন্নয়নে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এছাড়া এ শিল্পনগরে তিন-চার বছরের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে বেজা সূত্রে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন