আর্থিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ

নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হোক

২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় ২৫টি অর্থনীতির দেশের একটি হবে। তখন বাংলাদেশ হবে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বর্তমানে অবস্থান ৪১তম। ২০৩৩ সালে আমাদের পেছনে থাকবে মালয়েশিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ। আগামী ১৫ বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি গড়ে শতাংশ থাকবে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এটি কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে আর্থিক অপরাধও বাড়ছে। নানা জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে অর্থ বের করে নেয়া হচ্ছে, আবার বিদেশে অর্থ পাচারও বাড়ছে। দেশেও অর্থ আসছে ভিন্ন চ্যানেলে, কিছু অর্থ আবার অপতত্পরতায় ব্যবহারের অভিযোগও আসছে। এর কিছু বাংলাদেশ ব্যাংক ধরতে পারলেও ধারণা করা হচ্ছে, একটি অংশ এখনো নজরদারির বাইরে রয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আর্থিক অপরাধ ধরা পড়লেও সেটি বন্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান বা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ফিন্যান্সিয়াল ক্রিমিনোলজি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বিদ্যমান অবস্থার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করেছেন। আর্থিক অপরাধ দেশের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে শুধু বাধাগ্রস্তই করছে না, এর স্থায়িত্বেও চিড় ধরাচ্ছে।

আর্থিক অপরাধ এখন বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই ব্যাংকে কোনো না কোনোভাবে আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। চেক জালিয়াতি, ঋণ আমানত হিসাবে জালিয়াতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত জালিয়াতি এবং তথ্যপ্রযুক্তিঘটিত জালিয়াতি অহরহই ব্যাংকগুলোয় ঘটছে। জালিয়াতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি চক্র মানি লন্ডারিং করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ব্যাংকিং খাতে সংঘটিত ৯০ শতাংশ অপরাধে ব্যাংকের নিজস্ব লোক জড়িত। একই সঙ্গে দিন দিন মানি লন্ডারিংয়ের প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করেন তারা। এছাড়া অপরাধ শনাক্তে ব্যাংকের নিরাপত্তায় প্রতিটি ব্যাংকের পৃথক গোয়েন্দা ইউনিট গঠনের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ব্যাংকে যে সম্পত্তি বন্ধক রাখা হচ্ছে, তা প্রকৃত কিনা যাচাই করার কোনো উপায় নেই। সব কর্মকর্তাকে ব্যবসায়িক লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হচ্ছে। যে কারণে জালিয়াতি বাড়ছে। এছাড়া ব্যাংকের চেক এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও ছাপছে।

জালিয়াতি রোধে ব্যাংকগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের যেভাবে নজরদারি করার কথা, সেভাবে তা হচ্ছে না। নজরদারি বা তদারকি আরো জোরদার করতে হবে। ব্যাংকিং খাতে অপরাধ যেহেতু বেড়েছে, তাই প্রতিটি ব্যাংকে একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা দল গঠন করতে হবে। তাদের কাজ হবে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে পূর্বাভাস দেয়া। তাদের পরিচয় সবার জানার দরকার নেই। তারা বর্ণচোরা হয়ে কাজ করবে। ইংল্যান্ডে এমনটি হয়েছে, বাংলাদেশও মডেল গ্রহণ করতে পারে। অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। আইন প্রণয়নের বিষয়টি সন্তোষজনক। কিন্তু আইন প্রয়োগ করে পরিস্থিতির বড় ধরনের পরিবর্তন হয়নি। অর্থ পাচারের তেমন কোনো ঘটনাই ধরা পড়ছে না। অথচ এটা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয় যে মানি লন্ডারিং হচ্ছে না। বড় কোনো ঘটনাই ধরা পড়ছে না। সন্ত্রাসে যে অর্থায়ন, তা কিন্তু ধরতে পারেনি। এসব অপরাধ ধরার ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সক্ষমতার অভাব রয়েছে।

আর্থিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন