বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনা ও আজকের বাংলাদেশ

সমীর কুমার বিশ্বাস

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হব। আর ২০৪১ সালে উন্নত দেশের সারিতে আমাদের অবস্থান সুনিশ্চিত করার প্রত্যয়ে আমরা আজ টেকসই উন্নয়নের মহাসড়কে উত্তরণের পথ বাতলাচ্ছি। কিন্তু স্বপ্নের বীজ যার দ্বারা উপ্ত হয়েছিল, তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই বলতে হয়, আমাদের যা কিছু অর্জন; যত সব উত্তরণ, তার ভিত্তিমূলে রয়েছে জাতির পিতার আজীবন স্বপ্নলালিত উন্নয়ন ভাবনা। সেজন্যই বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ কিংবা বাঙালির ইতিহাস পাঠ যেমন পূর্ণতা পাবে না, তেমনি বাংলাদেশ কিংবা বাঙালির কোনো উন্নয়ন দর্শনের অভিযাত্রার পরিক্রমা পাঠও এক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। মূলত বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একই সত্তার এপিঠ-ওপিঠ। বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করলে কার্যত বাংলাদেশকেই অস্বীকার করা হয়। বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রাম সব প্রত্যয় নিয়ে আমরা বলতে পারি বঙ্গবন্ধু  এমন একটি নাম, যা বাঙালির আবেগের রসে সিক্ত; বঙ্গবন্ধু এমন একটি আবেগ, যা বাঙালির প্রাণের ভেতর থেকে উত্থিত; বঙ্গবন্ধুএই একটিমাত্র নাম দ্বারাই বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রাম-চেতনা-আবেগমথিত ভাবধারা-সম্মিলিত প্রয়াসের মহত্তম অর্জন নির্যাসের সাবলীল প্রকাশ ঘটে। বাংলাদেশের সমবায় আন্দোলনও বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন দ্বারা ঋদ্ধ এবং আজকের বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনা উন্নয়ন দর্শন একান্তই প্রাসঙ্গিক।

একটু পেছন ফিরে তাকানো যাক। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছি। পেয়েছি অনেক স্বপ্নের, অনেক আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সিক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ সংজ্ঞায়িত হয়েছে শত শত শহীদের রক্তে অর্জিত জাতীয় সোনালি ভূমি প্রশংসিত গণতান্ত্রিক চিরসুবজ পবিত্র আবাসস্থল হিসেবে। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত, ধ্বংসপ্রায় দেশকে কীভাবে পুনর্গঠন করা যায়, উন্নতির শিখরে নেয়া যায়, সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কার্যকর উদ্যোগ নিলেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা খুঁজে বের করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত চাইলেন। তাদের গভীর পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে এল অমিত সম্ভাবনাময় দেশের মাটি মানুষ, জল বৃক্ষ এবং পরিবেশ প্রকৃতিই সবচেয়ে বড় সম্পদ। আর সম্পদকে যথার্থ অর্থে কাজে লাগাতে এবং দেশের উন্নয়নের নিয়ামক করতে বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করেছিলেন সমবায়ভিত্তিক কর্মযজ্ঞ।

বঙ্গবন্ধু সংগ্রামী চেতনার আলোকে মনে করতেন, সমবায় একটি মানবকল্যাণমূলক আর্থসামাজিক উন্নয়ন পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মানুষের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব। বঙ্গবন্ধুর ভাবনারই স্বীকৃতি আমরা পাই বর্তমান সময়ে এসেও যখন দেখি ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গঠনে সমবায়ের অন্তর্নিহিত শক্তিমত্তার কথা জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে ২০১২ সালকে আন্তর্জাতিক সমবায় বর্ষ হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে। প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের তত্কালীন মহাসচিব বান কি মুন বলেছিলেন, ‘সমবায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, অর্থনৈতিক মুনাফা সামাজিক দায়বদ্ধতা একই সঙ্গে অর্জন সম্ভব।আন্তর্জাতিক সমবায় মৈত্রী সংস্থার (আইসিএ) সভাপতির ভাষায়, ‘সমবায় মানুষের চাহিদা মেটানোর কাজ করে, লোভ মেটানোর কাজ করে না এসব কথা বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনার বাস্তব প্রতিফলন বলে আমরা মনে করতেই পারি। বঙ্গবন্ধু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, সমবায় সমিতি একটি সাধারণ প্রতিষ্ঠান নয়। সমবায় সমিতি এমন একটি জনকল্যাণ উন্নয়নমূলক আর্থসামাজিক প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে থাকে গণতন্ত্র, অর্থনীতি, সম্মিলিত কর্মপ্র্রচেষ্টা, উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ, সদস্যদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির প্রয়াস, সর্বোপরি সদস্যদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধন।

গ্রামবাংলার দরিদ্র, দুঃখী, শোষিত কৃষক জনতার মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুবাধ্যতামূলক বহুমুখী গ্রাম সমবায়কর্মসূচি গ্রহণ করেন। কর্মসূচির কতিপয় মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো () পাঁচশত থেকে এক হাজার

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন