সুলতানি আমলে দুর্গের বিকাশ

ড. আয়শা বেগম

বাংলায় মধ্যযুগের প্রারম্ভে যখন মুসলমানরা আগমন করেন, তখন তাদের নির্মিত স্থাপত্য নিদর্শনের উল্লেখ সমসাময়িক ইতিহাস গ্রন্থতাবাকাত- নাসিরি (১২৫৮ খ্রি.)’ থেকে পাওয়া গেলেও ত্রয়োদশ শতাব্দী দূরে থাক চতুর্দশ শতাব্দীতে নির্মিত স্থাপত্য নিদর্শনেরও সন্ধান বাংলায় খুব অল্পই মিলেছে। দেশে মুসলিম শিল্প-ঐতিহ্য প্রধানত স্থাপত্যকে নির্ভর করে বিকশিত হয়েছে।

বাংলার প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলো প্রশাসনিক এলাকার সীমা নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এসেছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের সীমার হ্রাস-বৃদ্ধি হয়েছে। বাংলার দুর্গগুলো সাধারণত নদীর সংযোগস্থলে কিংবা নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল। নদীমাতৃক বাংলার নদীই সৃষ্টি করেছে বাংলার ভূপ্রাকৃতিক সীমা, আর সে সীমা অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে জনপদ। জনপদ, নগর, দুর্গের অবস্থিতি প্রধানত নদীর উপকূলে পরিলক্ষিত হয়। বাংলার ভূখণ্ডের ভূ-অবস্থানের বিশেষত্বের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নদীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করতে অঞ্চলের নদী, উপনদী, শাখা নদী, দীঘি-নালা, পরিখা দুর্ভেদ্য অবস্থা সৃষ্টি করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকরভাবে সহায়তা প্রদান করেছে। আবার কথা সত্য যে নদীর গতিপথ পরিবর্তন ভাঙনে এবং প্রায় নিয়মিত বন্যার ফলে বাংলার অনেক সমৃদ্ধ জনপদ, রাজধানী, নগর দুর্গ বিলীন হয়ে গেছে। ফলে একদা বাংলার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনে নির্মিত দুর্গ, দুর্ভেদ্য প্রাকার, বুরুজ ইত্যাদি শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। যেসব শহর দুর্গের নাম জানা যায়, সেসব নিদর্শন লিখিত তথ্য, শিলালিপি, তাম্রশাসন, মুদ্রা ইত্যাদি সূত্রের ওপর ভিত্তি করে নিয়মানুগ জরিপ প্রত্নতাত্ত্বিক উত্খননের মাধ্যমে নির্ধারণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে তাও প্রায় অসম্ভব।

মধ্য যুগে সাধারণত ধর্মকে ভিত্তি করে স্থাপত্য শিল্প গড়ে উঠেছিল। কারণে লৌকিক স্থাপত্য নিদর্শন নির্মাণে নির্মাতাদের উৎসাহ ততটা পরিলক্ষিত হয় না এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে মসজিদ, মন্দির, মাজার, মিনারকে ধ্বংস থেকে বিরত থাকলেও লৌকিক স্থাপত্য-প্রাসাদ, দুর্গ, স্তম্ভ, প্রাকার ইত্যাদি নিদর্শনের ক্ষতি করতে তেমন দ্বিধাবোধ করে না। অধিকন্তু উপাদানের ভঙ্গুরতা বাংলার বৃষ্টিবহুল জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে স্থাপত্য নিদর্শনগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। যে অল্পসংখ্যক লৌকিক স্থাপত্য ইমারত প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়, সেগুলোও মানুষের হাত থেকে রক্ষা পায় না। পুরাতন লৌকিক ভগ্ন স্থাপত্য ইমারত থেকে পাথর, ইট, কাঠ ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য সাধারণ ব্যক্তি প্রত্নবস্তুর ক্ষতি সাধন করে। আবার নতুন নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পুরনো গুরুত্বপূর্ণ ইমারত ধ্বংস হয়ে যায়। সম্প্রতি বাসস্থানের সমস্যা সমাধানে চাষাবাদের জমি তৈরি করতে দুর্গ, প্রাসাদ অন্যান্য লৌকিক স্থাপত্যের বিলুপ্তি ঘটছে।

বাংলায় মুসলিম স্থাপত্য দুটি প্রধান স্থাপত্য রীতিতে বিভক্ত- একটি সুলতানি রীতি, অন্যটি মোগল রীতি। গৌড়ে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নির্মিত ইমারতগুলোকে সুলতানি স্থাপত্য রীতি এবং ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দের পর

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন