মোগল আমলের শাশ্বত কীর্তি

ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ

মোগল সময়কালে বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্প নিয়ে গর্ব করার মতো কিছু নেই। কারণ মোগলের আবির্ভাব ঘটে দিল্লিতে। তার মানে সে সময় যা হয়েছে তা দিল্লিতেই হয়েছে। দিল্লিতে কুতুব মিনারের সংশ্লিষ্ট জায়গায়, আগ্রায় মোগলদের প্রচুর কাজ হয়েছে। শেষদিকে তাজমহল হয়েছে, ফতেহপুর সিক্রি হয়েছে। একেকটা থেকে একেকটা কিন্তু মাইলস্টোন হিসেবে গণ্য সারা দুনিয়ায়! তাজমহলকে তো পৃথিবীর এক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভবন হিসেবে চিন্তা করা হয়। এটা ওদের শেষদিকের কাজ। তিন ধরনের মোগল স্থাপত্য রয়েছেএকটি হলো পুরো লাল ইটের বা লাল পাথরের। আগ্রা ফোর্ট, দিল্লি রেড ফোর্ট, ফতেহপুর সিক্রি সব লাল ইটের। তারপর আরেকটি হলো লাল সাদা পাথরের মিশ্রণ, হয়তো ভবনটি লাল আর সদর দরজা মার্বেলের। একদম শেষের দিকে এসে মার্বেলের ভবন হয়। তাজমহল হচ্ছে এর সবচেয়ে সেরা উদাহরণ। যেহেতু বাংলাদেশে মার্বেল লাল বেলেপাথর কোনোটাই নেই, তখন বাংলাদেশীরা নতুন এক ধরনের স্থাপত্য উপকরণ তৈরি করল। সে সময় ভবন তৈরির বন্ডিং ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ছিল চুন। এখন যেমন সিমেন্ট এসেছে। বালি আর সিমেন্ট মেশালেই ইট দিয়ে ভবন তৈরি করে ফেলা যায়। তখন সিমেন্টের পরিবর্তে চুন ছিল। চুন আর ইট গুঁড়ো করে বালির মতো মিশিয়ে প্লাস্টার তৈরি করার পর যখন ব্যবহার করা হলো তখন ভবনকে লাল দেখাল। অন্তত কিছু লাল ভবন তৈরির সুযোগ তৈরি হলো উপকরণ বদলে নিয়ে। দিল্লি আর এখানে এই দুটি স্থানের আবহাওয়া কিন্তু একরকম না। যেমন দিল্লি জামে মসজিদের কথা যদি বলা হয় তাহলে দুটো বিশাল মিনার, মধ্যে একটা বড় ডোম, সামনে বিশাল আঙিনা, যেখানে লোকেরা নামাজ পড়ে। আমাদের মতো দেশে যেখানে ছয় মাস বৃষ্টি হয় সেখানে এই আঙিনায় কোনো কাজ হবে না। আমাদের প্রয়োজন বন্ধ ঘরের। যার উপরে ছাদ আছে। ফলে ওই ধরনের মোগল স্থাপত্য আমাদের এখানে হয়নি। তবে দিল্লির মতো ভবন হয়েছে, যেখানে আয়তাকার ভবনের মাঝখানের ডোমটা বড় দুপাশে ছোট রকম আবদ্ধ ভবন আমাদের হয়েছে। প্রতিটি ভবনই কিন্তু বদ্ধ, সামনে অল্প একটু করিডোর রয়েছে কিন্তু দিল্লির মতো না। দিল্লিতে যেমন বিশাল করিডোর থাকে যাকে শান বলে, থাকে হাঁটার পথ। আমাদের সে সুযোগ নেই। কেবল শুধু ভবনটাই।

ভবনের পরিকল্পনাটা আমরা দিল্লি থেকে কিন্তু উপকরণের ভিন্নতার কারণে ভবনগুলোর চেহারা লাল হয়ে যায়। মনে হয় যে কিছুটা মোগলের আদলে করা। এগুলোই হচ্ছে মোগলের ভবন। মোগলের সময়ের ভবনে কোনো কারুকাজ নেই। প্লাস্টারের মধ্যে কোথাও ধনুর মতো করে বা উপরে গোলাপের পাপড়ির মতো কিছুমার্লন বলে সেটাকে। এমন করে বানিয়ে ভবনের কাজটা শেষ করা হয়েছে। তাছাড়া মৌচাকের মতো প্যাটার্ন তৈরি করে মোগলরা ভবনগুলো অলংকৃত করেছিল। ফলে মোগল ভবনের অলংকরণ উপকরণগুলো একটু ভিন্ন অন্যগুলো থেকে। এমনকি ডোমটাও আমাদের এখানে পেঁয়াজের শেপের মতো করে তৈরি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন