ভোমরা স্থলবন্দর

ট্রাক টার্মিনালের অভাবে ব্যাহত স্বাভাবিক আমদানি-রফতানি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় পণ্যবাহী ট্রাক যেখানে সেখানে পার্কিং করতে বাধ্য হয়। ফলে বন্দরসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজটের। মালামাল খালাসে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। সে সময় পণ্যবাহী ট্রাকেই নষ্ট হয় পচনশীল আমদানি পণ্য। পাশাপাশি সময়মতো বন্দর ছেড়ে যেতে পারে না পণ্যবাহী ট্রাক। ফলে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। তবে সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ভোমরা বন্দরে একটি আধুনিক ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানি-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রোহিত ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রামকৃঞ্চ চক্রবর্তী জানান, তারা প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৪০ ট্রাক পাথর আমদানি করেন ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে। পাশাপাশি ফলজাতীয় পণ্যও আমদানি করেন। কিন্তু বন্দরসংলগ্ন এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ায় সময়মতো এসব মালামাল পৌঁছে দিতে পারেন না গন্তব্যস্থলে।

তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অর্জন করছে ভোমরা স্থলবন্দর থেকে। অথচ একটি ট্রাক টার্মিনাল গড়ে ওঠেনি এখানে। যতদিন না ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে, ততদিন এ দুর্ভোগ পোহাতে হবে ব্যবসায়ীদের। ট্রাক টার্মিনাল নির্মিত হলে স্বাভাবিক আমদানি-রফতানিতে গতি আসবে, সেই সঙ্গে রাজস্ব আহরণ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

জানা গেছে, ভোমরা স্থলবন্দরকে শুল্কস্টেশন ঘোষণা করা হয় ১৯৯৬ সালে। পরে ২০১৩ সালে শুরু হয় বন্দরের কার্যক্রম। যশোরের বেনাপোল থেকে কলকাতার সড়কপথে দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটার। আর সাতক্ষীরার স্থলবন্দর থেকে কলকাতার সড়কপথে দূরত্ব ৬২ কিলোমিটার। কলকাতার সঙ্গে দূরত্ব কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে অবকাঠামো উন্নয়নের ঘাটতির কারণে সে আগ্রহে ভাটা দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। প্রতিষ্ঠার পর ২৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ট্রাক টার্মিনাল নির্মিত হয়নি ভোমরা স্থলবন্দরে। এতে বন্দরের স্বাভাবিক আমদানি-রফতানি ব্যাহত হচ্ছে।

ভোমরা স্থলবন্দরের অন্যতম সিঅ্যান্ডএফ ও কৃষিপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহীন জানান, শুকনো মরিচ, কাঁচামরিচ, আদা, হলুদসহ বিভিন্ন প্রকার মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করে তার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু যানজটের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মালামাল পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রতি মাসে একটি মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির শিকার হন তিনি। তিনি বলেন, বন্দরে ট্রাক টার্মিনাল না থাকার কারণে ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক আমদানি-রফতানি ব্যাহত হচ্ছে।

ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ স্থলবন্দরে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন। প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ পণ্যবাহী ট্রাক আসা-যাওয়া করে ভোমরা বন্দরে। কিন্ত টার্মিনাল না থাকায় প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ব্যবসায়ীদের সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রফতানি।

ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. রেজাউল করিম জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ভোমরা স্থলবন্দরে ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ট্রাক টার্মিনাল ও যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ৯ দশমিক ৯৬ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হবে ওই ট্রাক ও যাত্রী টার্মিনাল। তিনি বলেন, এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ হলে বন্দরের যানজট থাকবে না। গতি বাড়বে আমদানি-রফতানিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন