ধরিত্রী রক্ষায় গ্রেটার সঙ্গে বাংলাদেশী তরুণ

সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিটে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের তরুণ সংগঠক তাহিসন উদ্দিন। অংশগ্রহণকারী বিশ্বের ১৪০টি দেশের তরুণ সংগঠকদের মধ্যে তিনি একজন। জানিয়েছেন ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিটে তার অভিজ্ঞতার কথা

স্কুলজীবন থেকেই আমি বিভিন্ন ধরনের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এসব কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ একদিন জাতিসংঘের কোনো সামিটে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার মতো সুযোগ আসবে, সেটা কখনো ভাবনাতেও আসেনি। গত ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বিশ্বের ১৪০টি দেশের পাঁচ শতাধিক তরুণ সংগঠক নিয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিটে বাংলাদেশের হয়ে অংশ নেয়ার সুযোগ হয় আমার। পুরো প্রক্রিয়ায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাশে ছিল ইউনিসেফ।

পাসপোর্ট আর ভিসা প্রক্রিয়ার ঝক্কি কম ছিল না। ঈদের ছুটি আর সরকারি কাজের দীর্ঘসূত্রতা, ভুলভ্রান্তি পেরিয়ে পাসপোর্ট হাতে পেতেই সময় লেগেছিল বেশি। তবে আমেরিকান ভিসা পেয়ে গেলাম আবেদন জমা দেয়ার মাত্র দুদিনের মাথায়! কি অবাক কাণ্ড! অবশ্য আরেকটু দেরি হলেই হয়তো পত্রিকার পাতায় আজ আর এ লেখা ছাপা হওয়ার সুযোগ তৈরি হতো না। তারপর ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো আকাশে ওড়া। তাও আবার আমেরিকায়। সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। ২২ ঘণ্টার লম্বা বিমান জার্নিতে কাতার হয়ে পৌঁছে গেলাম ১ হাজার ২৬৬ কিলোমিটার দূরের নিউইয়র্কে।

প্রথম দিন সকালে গিয়েই মোটামুটি একটা ধারণা নিয়ে নিই নিউইয়র্ক সম্পর্কে। এখানকার অন্যতম মজার অভিজ্ঞতা মেট্রোরেল। ৩০ ডলার দিয়ে কিনে নিই এক সপ্তাহের জন্য আনলিমিটেড রাইড। সেদিনই বিকালে ইউনিসেফের স্টাফ ইজাগুয়ের আমাকে নিয়ে যান গ্লোবাল স্ক্রাইবস নামের একটি আন্তর্জাতিক ইয়ুথ নেটওয়ার্কের আইডিয়া শেয়ারিং অনুষ্ঠানে। বিদেশী তরুণ সংগঠকদের সঙ্গে সেখান থেকেই পরিচয় শুরু।


পরের দিন ছিল গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক। বিশ্বজুড়ে শিশু-কিশোররা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে কার্যকরী পদক্ষেপের জন্য। প্ল্যাকার্ড বানাতে সকাল সকাল চলে যাই ইউনিসেফ হেডকোয়ার্টারে। সেখানে লবিতে পরিচয় হয় ১০ জন তরুণ-তরুণীর সঙ্গে। একজন ছাড়া বাকি সবাই আমার থেকে চার-পাঁচ বছরের বড়। সবাই এসেছে ইউনিসেফের আমন্ত্রণে। অফিসে গিয়ে দেখি অবাক কাণ্ড! ইউনিসেফের যতজন স্টাফ আমাদের সঙ্গে এসেছিল পরিচিত হতে, তাদের সবাই আমাকে আগে থেকেই চেনে। পরে বুঝতে পারলাম আসল ঘটনাটা। ক্লাইমেট সামিটে অংশ নেয়া তরুণদের নিজ নিজ কাজ নিয়ে একটা করে সেলফি ভিডিও বানাতে বলা হয়েছিল। আমার ভিডিওটা তাদের বেশ পছন্দ হয়েছে, সেটা ফেসবুকসহ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভালো অ্যাঙ্গেজমেন্ট পেয়েছে।

প্ল্যাকার্ড বানাতে বানাতে সখ্য হয়ে গেল অন্য তরুণদের সঙ্গেও। দুপুরে নিউইয়র্কের রাজপথে নেমে আশ্চর্য হয়ে দেখি নানা বয়সের হাজার হাজার শিক্ষার্থী জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছে। সবার হাতেই নিজেদের বানানো প্ল্যাকার্ড। সঙ্গে আছে বয়স্করাও। রাস্তায় জায়গা না পেয়ে অনেকে বিভিন্ন উঁচু ভবনের কাচের ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে প্ল্যাকার্ড নিয়ে। সবারই সে কী স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ! ভেবে খারাপ লাগল জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির তালিকায় শুরুতে থাকা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই এখনো ভালোভাবে জানেই না সামনে কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। তখনই মনে মনে ঠিক করে ফেলি দেশে ফিরে সব শিক্ষার্থীর কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছাতে হবে আরো দ্রুত।

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন