ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে বিএডিসির বীজ

কৃষির উন্নয়নে বীজই প্রধান ও মুখ্য উপকরণ। বীজ ভালো না হলে অন্যান্য উপকরণের ব্যবহার ফলপ্রসূ হয় না। কখনো কখনো একেবারেই অপচয় হয়। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি তথা কৃষির সামগ্রিক উন্নতি নির্ভর করে সময়মতো প্রয়োজনীয় পরিমাণ মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারের ওপর। যদিও এ দেশের কৃষকদের অনেকেই আগের বছরে উৎপাদিত ফসলের রেখে দেয়া একটা অংশ পরের বছর বীজ হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু সবসময় এ বীজে মানসম্পন্ন গুণাগুণ বিদ্যমান থাকে না। মানসম্পন্ন বীজ ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত ফলন বৃদ্ধিতে সক্ষম। মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার না করার কারণে একদিকে যেমন ফসলের ফলন হ্রাস পায়, অন্যদিকে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় এসব বীজ ব্যবহার হওয়ায় অপচয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বিশিষ্ট বীজবিজ্ঞানী ড. মো. নজমুল হুদা কর্তৃক রচিত ডযু ছঁধষরঃু ঝববফ বইয়ে উল্লেখ রয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত বীজ ব্যবহারের ফলে অপচয় হয় প্রায় পাঁচ লাখ টন বীজ, যা খাদ্যশস্য হিসেবে ব্যবহার করা যেত। এ অপচয়ের আনুমানিক বাজারমূল্য ১ হাজার কোটি টাকা। সময়ের পরিবর্তন এসেছে। ভালো বীজের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারছে এ  দেশের সচেতন কৃষক সমাজ। বিএডিসির বীজ কৃষকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে থাকে। ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকে এ বীজের চাহিদা। বিএডিসি বিভিন্ন ফসলের মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, বাজারজাত ছাড়াও চারা ও গুটি কলম তৈরি ও বিতরণসহ বীজ প্রযুক্তি বিস্তারে কাজ করছে। এছাড়া আধুনিক বীজ   প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় ঘটানোর জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও প্রযুক্তি হস্তান্তর-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

১৯৬২-৬৩ সালে বিএডিসি প্রায় ১৩ দশমিক ৮০ টন বীজ সরবরাহের মাধ্যমে এ দেশে বীজ কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এর পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৫০ লাখ টন। বীজ প্রযুক্তির ধাপ অনুসরণ করে বিএডিসি বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ কার্যক্রম ১৯৭৪-৭৫ সালে শুরু করে। এ কার্যক্রমের আওতায় ১৯৭৬-৭৭ সালে ৫৭৬ টন মানসম্পন্ন গমবীজ কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। বিভিন্ন প্রকার বীজ সরবরাহের পরিমাণ ১৯৭৭-৭৮ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৫ হাজার ৬৬ টনে উন্নীত হয়। ১০ বছর পর অর্থাৎ ১৯৮৭-৮৮ সালে বীজ সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৭১৯ টনে এবং আরো ১০ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৮-৯৯ সালে বীজ সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪০ হাজার ৮০০ টন। উল্লেখ্য, এ সময় পর্যন্ত বিএডিসিই ছিল দেশে বীজ উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে একমাত্র প্রতিষ্ঠান। উদার বীজনীতির আলোকে পরবর্তীতে প্রাইভেট সিড কোম্পানির মাধ্যমে বীজ কার্যক্রম শুরু হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ বর্ষে ১ লাখ ৫ হাজার ১০৯ টন দানাশস্যবীজ, ৩১ হাজার ২৪৬ টন বীজ আলুসহ বিভিন্ন ফসলের মোট ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮১ টন বীজ উৎপাদন ও বিতরণ করা হয়। মোট চাহিদার আউশ, আমন, বোরো ধানবীজ ও গমবীজের বিপরীতে শতকরা হিসাবে বিএডিসি কর্তৃক যথাক্রমে ৭ দশমিক ২০, ১২ দশমিক ৫৭, ৫৯ দশমিক ১৯ এবং ৪১ দশমিক ১৪ ভাগ বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। চলতি ২০১৮-১৯ উৎপাদন বর্ষে মোট বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫৫ টন। এর মধ্যে দানাদার শস্যবীজের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪ হাজার ৯১৮ টন, আর বীজ আলুর ৩৩ হাজার ৮৫০ টন। নিম্নমানের বীজের স্থলে ভালো মানের বীজ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। আগের তুলনায় বর্তমানে বীজ প্রতিস্থাপনের হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএডিসির বীজের পাশাপাশি প্রাইভেট সিড কোম্পানিও এক্ষেত্রে বেশ ভূমিকা রাখছে। তবে এক্ষেত্রেও বিএডিসি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবদান রেখে চলেছে। ফসলভিত্তিক বীজের অবদান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, শুধু হাইব্রিড ধানবীজ ব্যবহারের মাধ্যমে ধানের ফলন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বছরে প্রায় ১০ হাজার টন হাইব্রিড ধানবীজ ব্যবহার করা হচ্ছে।

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন