নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি প্রাসঙ্গিক ভাবনা ও সম্ভাবনা

মো. ইকবাল কবীর জাহিদ

পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্নপ্রায়। ঈদুল আজহা মানেই মুসলমানদের মনে আসে নামাজের পরই পশু কোরবানি করা। গ্রাম এলাকায় কোরবানির জায়গার অভাব না থাকলেও শহর এলাকা বিশেষ করে সিটি করপোরেশনগুলোয় বাসার নিচে বা রাস্তার ওপর পশু কোরবানি করা হয়। এ কোরবানি-পরবর্তী বর্জ্য অপসারণ কত বিশাল কর্মযজ্ঞ, তা ঢাকা শহরের পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যাবে। গড়পড়তাভাবে প্রতি বছর ঈদুল আজহায় সাড়ে তিন লাখের বেশি পশু কোরবানি করা হয় ঢাকা মেগাসিটিতে। কোরবানি-পরবর্তী রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ হাজার টনের বেশি। ঢাকা সিটি করপোরেশনে ২০ হাজারের মতো পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেন। কয়েক বছর ধরে ঢাকায় কোরবানি ঈদ করছি এবং আমি নিজেও বাসার সামনে কোরবানি করছি। আর সেটি সত্যিই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। এজন্য তারা ধন্যবাদ ও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এদিকে কোরবানির ঈদ এলেই দুই মেয়র ঘোষণা দেন ঈদ-পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব বর্জ্য পরিষ্কার করে দেবেন। তাদের ঘোষণা শুনে আমার কাছে অদ্ভুত লাগে এ কারণে যে ঢাকা শহরের শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষ শহরের রাস্তা, বাড়ির সামনের খালি জায়গা কোরবানি করে নোংরা করবে, বর্জ্য ফেলবে এবং তারা সেটা পরিষ্কার করবেন—এটাই তাদের দায়িত্ব। তাদের পক্ষে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেড় টনের মতো বর্জ্য পরিষ্কার করতে হয়।

গত বছর পত্রিকায় প্রকাশ, ঈদুল আজহার আগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ ১১টি সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তির সমন্বয়ে কয়েকটি সভা করে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির সিদ্ধান্ত নেন। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ অন্য সিটি করপোরেশনগুলোয় প্রায় তিন হাজার স্থান নির্ধারণ করা হয় এবং জনগণকে আহ্বান করা হয় নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি করার জন্য। আমি নিজে তো নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি করিনি এবং কেউ করেছে এমন সংবাদ কারো কাছ থেকে পাইনি। আবার পত্রিকার দ্বারস্থ হলাম প্রকৃত সমস্যাটা কী জানতে? বাস্তবতাটা একটু হলেও হতাশার ও দুঃখের। মাননীয় মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র জনগণ নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি না করায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন এবং পুনরায় জনগণকে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির আহ্বান জানিয়ে ঈদ-পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব নিয়েছেন। সুতরাং ধরে নেয়া যায়, এ বছরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে এবং তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতি বছর নির্দিষ্ট যে স্থানগুলো সাময়িকভাবে পশু কোরবানির জন্য নির্ধারণ করা হয়, তা কোনো মাঠ বা খোলা বড় জায়গা। পত্রপত্রিকার ভিত্তিতে জানতে পারলাম মানুষ কেন এ জায়গাগুলোয় গিয়ে কোরবানি করার উৎসাহ বোধ করেনি। প্রথমত, নির্দিষ্ট জায়গাগুলোয় পশু কোরবানির জন্য পরিবহন করার প্রয়োজন থাকে। পরিবহনের জন্য খরচ করতে মানুষ উৎসাহ বোধ করে না। দ্বিতীয়ত, নির্দিষ্ট জায়গাগুলোয় পশু কোরবানি করার মতো সুযোগ-সুবিধার অভাব। যেমন পানি, আধুনিক যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় লোকবল ব্যবস্থা করা হয় না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন