সিল্করুট

মিনহাজের বিবরণীতে বাংলার নগর ও রাজনীতি

আহমেদ দীন রুমি

প্রাচীন লখনৌতি বা গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ শিল্পী: থমাস ও উইলিয়াম ড্যানিয়েল ১৭৯৫। সূত্র: ওয়েলকাম কালেকশন

মিনহাজ-ই-সিরাজ যখন বাংলায় পা রাখেন, তখন বাংলার ইতিহাসের বাঁক বদলাচ্ছে। কেবল এখানকার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে না, পরিবর্তন হচ্ছে অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। পরিবর্তন ঘটছে নগর ও স্থাপত্য কাঠামোয়। বখতিয়ারের বাংলা অভিযানের চার দশকের মাথায় তিনি নিজের চোখে দেখেছেন সে পরিবর্তনকে। তার চিহ্নিত ক্ষমতার সমীকরণ ও নগরের বর্ণনা এখনো মগ্ন রেখেছে ঐতিহাসিকদের।

পাল বংশের পতনের পর বাংলার ইতিহাসের চালক হিসেবে আবির্ভূত হন সেনরা। মূলত কর্ণাটক থেকে এসে তারা থিতু হয় পাল আমলে। ক্রমে ওপরে উঠতে থাকে ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে। বংশের প্রথম শাসক সামন্ত সেন। তার মৃত্যুর পর পুত্র বিজয় সেন পাল শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বড় একটা অংশের ওপর অধিকার বিস্তার করেন। বিজয় সেনের এ বিস্তারপ্রবণতা বল্লাল সেনের (১১৫৮-১২০৫) সাল আমলে বেড়েছে বৈ কমেনি। বলা হয় বল্লাল সেনের সময়েই বাংলায় বর্ণপ্রথা দৃঢ় করা হয়। পোক্ত হয় অভিজাতদের ক্ষমতাও। তবে স্বস্তির শেষ হাসিটাও তিনিই হাসেন। তার পরে মসনদে বসে লক্ষ্মণ সেন (১১৫৮-১২০৫) রাজধানী সরিয়ে নেন। প্রতিষ্ঠা করেন লখনৌতি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বখতিয়ারের আগমনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে আধিপত্য।

সে সময়ে বাংলার বিভিন্ন দুর্গনগরী ও বসতি  নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন মিনহাজ-ই-সিরাজ। তার চিহ্নিত সে স্থানগুলোকে বছরের পর বছর ধরে পর্যালোচনা ও পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে শনাক্ত করে চলছেন আধুনিক ঐতিহাসিকরা। মিনহাজ বাসানকোট বলে যে অঞ্চলকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, হালের প্রত্নতাত্ত্বিক আলেকজান্ডার কানিংহাম সেটাকে মনে করেন মহাস্থানগড়ের পাশে অবস্থিত ভাসুবিহার। বাংলার অন্য নগরী লখনৌতি থেকে তার দূরত্ব প্রায় ১০০ মাইল। এদিকে মনমোহন চক্রবর্তীও স্বীকার করেছেন বাসানকোট লখনৌতির কাছাকাছি। বাসানকোট ছিল গৌড়ের দুর্গ। মাটির তৈরি পাঁচিল দিয়ে পরিবেষ্টিত শহরের দেয়াল। মিনহাজের মতে, বাসানকোট নগরী ও মিনারের মধ্যে বিস্তৃত জায়গা ছিল। সেখানে শত্রুবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছিল পরবর্তীকালে। বাসানকোটের তুলনায় দেবকোট পুরনো নগরী। বস্তুত দেবকোট ছিল বাংলার প্রাচীন নগরীগুলোর একটি, কেউ কেউ একে প্রাচীন নগরী বানগড় হিসেবেও চিহ্নিত করেন। যাদব প্রকাশের ‘বৈজয়ন্তী’-তে ‘দেবকোট’ ও কোটীবর্ষকে একই নগরী বলা হয়েছে। গুপ্তযুগে ছিল গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র। তবে পাল আমলে জেলা হিসেবে বহাল থাকে। বখতিয়ার খলজি ও পরবর্তী খলজি মালিকদের আমলে দেবকোট বিশিষ্ট নগরীর মর্যাদা লাভ করে। বখতিয়ার খলজি তিব্বত অভিযানের আগে দেবকোটে রাজধানী স্থাপন করেন। তিব্বত অভিযান হতে ফিরে এসে এখানেই তার মৃত্যু হয়। বাংলায় মুসলিমদের ক্ষমতার কেন্দ্র ছিল দেবকোট, যা বর্তমানে গঙ্গারামপুর নামে পরিচিত। দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত। সেখানেই অবস্থিত মুসলিম শহর দুমদুমাহ। সম্ভবত দুমদুমাহ ছিল অনেকটা ক্যান্টনমেন্টের মতো। জে মার্টিনের বক্তব্য অনুসারে, দুমদুমাহই মূলত তৎকালীন দেবকোট। মুসলিম আমলের গোড়া থেকেই এটা সামরিক ঘাঁটি ছিল। কানিংহাম বলেন, ‘দেবকোটের পুরনো দুর্গ অবস্থিত ছিল পুনর্ভবা নদীর বাম বা পূর্বপাশে। পাণ্ডুয়া নগরী থেকে ৩৩ মাইল উত্তর-পূর্বে। দিনাজপুর থেকে ১৮ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে। গৌড় থেকে ৭০ মাইল উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে। উত্তরে দেবকোট একটি ১০০ ফুটের দেয়াল দ্বারা সুরক্ষিত। আরো উত্তরে আরেকটি দেয়াল। দুটিকেই ঘিরে রয়েছে পরিখা। দক্ষিণ দিকে মুসলমানদের আবাস। এ আবাসকে অনেক সেনাছাউনি হিসেবেও অবিহিত করা যেতে পারে। সেখান থেকে একটা রাস্তা সোজা চলে গেছে পূর্ব দিকে। দুটা বড় হ্রদ পার হয়েছে, যা পরিচিত ধল দীঘি ও কাল দীঘি। প্রথমটিকে মনে করা হয় মুসলিম আমলের নির্মাণ, যা অবস্থিত পূর্ব থেকে পশ্চিমেজুড়ে।’

মিনহাজ গানগুরি শহরের কথা তুলে ধরেছেন। অনেক পরে লেখা তবকাত-ই-আকবরিতে বলা হয়েছে হুসাম উদ্দিন ইওয়াজ ছিল কালওয়ার শাসক। যদুনাথ সরকার গানগুরিকে মহল গানকারাহ হিসেবে চিহ্নিত করেন। সম্রাট আকবরের সময় গানকারাহ ছিল সমৃদ্ধ পরগনায়, বর্তমানে যা পশ্চিমবঙ্গের গানকার বলে চিহ্নিত। আর এ গানকারাহ বা গানকারই মিনহাজের গানগুরি। মিনহাজের উদ্ধৃত জাজনগর নিয়ে আলোচনা দীর্ঘ। আধুনিক ঐতিহাসিক ড. কানুনগো ও রায় বাহাদুর মনমোহন চক্রবর্তীর মত অনুসারে, তবকাত-ই-নাসিরীতে জাজনগর বলতে উড়িষ্যাকে বোঝানো হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর উড়িষ্যা ছিল মিনহাজের লক্ষ্যবস্তু। জাজনগর নামটা জয়পুর থেকে প্রভাবিত আর জয়পুর নগরী অবস্থিত বৈতরণী নদীর তীরে। উত্তর উড়িষ্যার অন্যতম প্রধান নগরী এ জয়পুর। তবে কানুনগো ও মনমোহনের মতের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মতে, জাজনগর হলো জাজ্বল্যনগরের বিচ্যুত উচ্চারণ, বর্তমানে যা ছত্তিশগড় জেলায় অবস্থিত। যদিও এ দাবির পাশাপাশি তিনি এ কথাও স্বীকার করেছেন যে ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীর অধিকাংশ মুসলমান লেখক তাদের লেখায় জাজনগর বলে উড়িষ্যাকে বোঝাতে চেয়েছে। 

মিনহাজ-ই-সিরাজ লাখনোরের কথা বলেছেন, আর এর অবস্থান নিয়ে আধুনিক ঐতিহাসিকদের মধ্যে বলতে গেলে তেমন কোনো মতভেদ নেই। প্রায় সবাই স্বীকার করেছেন লাখনোর অবস্থিত ছিল বীরভূম জেলার নগর নামের শহরটির আশপাশেই। এক্ষেত্রে ব্লকম্যান কিছুটা দ্বিমত করলেও তার মত সমর্থন পায়নি। কারণ নগর বা রাজনগর ছিল একসময় হিন্দু শাসকের রাজধানী। ফলে এর পেছনে যুক্তিও বেশ শক্ত। সেদিক থেকে অধিকাংশই একেই সায় দেন। এদিকে দেবকোটের মতো পুরনো না হলেও নদীয়াও প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার বিখ্যাত নগরী। মনে করা হয়, ভাগীরথী ও জলাঙ্গী নদীর মোহনায় অবস্থিত শহরটি বল্লাল সেন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। নদীয়া আগে ভাগীরথী নদীর দ্বারা দুভাগে বিভক্ত ছিল, যদিও এক অংশ বর্তমানে বিলীন হয়ে গেছে এবং অন্য অংশটি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির মাধ্যমে গঠন করেছে নতুন নদীয়া। যা-ই হোক, নদীয়ায় প্রবেশের সময় বখতিয়ার খলজি সম্ভবত বুলপুকুর ও সমুদ্রগড়ের মাঝামাঝি অবস্থান করেছিলেন। সেখানেই পরে লক্ষ্মণ সেনের সময়ের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। ভাগীরথীর পশ্চিম প্রান্তকে মনে করা হতো রাঢ়, সেখানেই অবস্থিত লাখনোর শহর। পূর্ব পাশের শহরকে মিনহাজ-ই-সিরাজ বলেছেন বারিন্দ বা বারিন্দা। সেন শাসনের সময়কার তৃতীয় রাজধানী ছিল নবদ্বীপ। যদুনাথ সরকার মনে করেন, সেন শাসনের সময় নবদ্বীপ স্থায়ী রাজধানী ছিল কিনা তা জানার কোনো উপায় নেই। তার মতে, এটা একটি পবিত্র স্থান, যা অবস্থিত গঙ্গা নদীর উপকণ্ঠে। যখন সেনরা এখানে আসে; তাদের জন্য জনবহুল দরবার জরুরি ছিল। ফলে এটা বাড়তি গুরুত্ব নিয়ে হাজির হয়। শহরটির পুরোটা জুড়েই বাঁশে নির্মিত ঘর দেখা যায়। বাংলার স্থাপত্য কাঠামোয় বাঁশ ব্যবহারের রীতি পুরনো। বিষয়টি চমৎকৃত হওয়ার মতো যে কোনো দুর্গ কিংবা প্রতিরক্ষা প্রাচীরের কথা বর্ণনা করেননি কোনো ঐতিহাসিক। বিশেষ করে যখন নবদ্বীপের প্রসঙ্গ আসে। পাটলিপুত্র ভ্রমণকালে মেগাস্থিনিস শাল কাঠের ব্যবহার দেখেছেন স্থাপনায়, খুব সম্ভবত সেভাবেই বাঁশ ব্যবহার হয়েছে নদীয়ায়। রমেশচন্দ্র মজুমদার তার ‘হিস্ট্রি অব বেঙ্গল’ বইতে বলেছেন, নদীয়াকে সেন শাসকদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজধানী হিসেবেই কুলজিতে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু ঐতিহাসিক তাৎপর্য প্রমাণিত হবে না, যতক্ষণ না অন্য ঐতিহাসিক দলিল হাজির করা যায়। তবে তবকাত-ই-নাসিরী মনে হয় একে সত্যায়ন করছে। লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় থাকা সংস্কৃত ভাষার অন্যতম কবি ধোয়ীর পবনদূতে বিজয়পুরকে উল্লেখ করা হয়েছে লক্ষ্মণ সেনের রাজধানী। কবিতায় বর্ণিত স্থানের সঙ্গে নদীয়ার সাদৃশ্য হাজির করেছেন মনমোহন চক্রবর্তী। যেহেতু ত্রিবেণী সঙ্গমের ঠিক পর পরই বর্ণনা করা হয়েছে বিজয়পুরের বিষয়ে। ফলে এটা নদীয়া হওয়াই অধিক যৌক্তিক।

মিনহাজের বিবরণী থেকে এটা স্পষ্ট যে বখতিয়ার খলজির সরকার ছিল কতেকটা সামরিক আর কতেকটা সামন্তবাদী চরিত্রের। বখতিয়ার তার রাজত্বকে সেনা অফিসারদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলেন, আর তাদের অধিকাংশই ছিল তুর্কি ও খলজি। মসনদ অধিকারের পর তিনি নদীয়া থেকে লখনৌতি সরিয়ে নেন প্রশাসনিক কেন্দ্র। সেখান থেকেই পরিচালিত হতো সরকার ব্যবস্থা। পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন অংশকেও নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন। বীরসালার দায়িত্ব দেন আলি মর্দান খলজির ওপর; সান্তুষ ও মাকসাদার দায়িত্ব দেন মুহাম্মদ শিরান খলজির ওপর, দেবকোট ও বিকানওয়ারের দায়িত্ব পান মুতামিদুদ্দৌলা। গানগুরির দায়িত্ব দেয়া হয় মালিক হুসাম উদ্দিন ইওয়াজ খলজিকে। উত্তরাধিকার নির্বাচন নিয়ে এভাবে বিভাজনের সিদ্ধান্তই ভেবেছিলেন বখতিয়ার। তিনি তার অনুসারীদের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অনবহিত ছিলেন না। বলতে গেলে তাদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে তিনি যেকোনো প্রকার সংঘাত এড়াতে চাইছিলেন। কারণ যেকোনো সংঘাত লখনৌতিতে মুসলিম ক্ষমতার জন্য সংকট নিয়ে আসবে বলে জানতেন তিনি। সময়টি ছিল অস্থির। তখনকার প্রশাসনিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও বেশি কিছু জানা যায় না। অনুসারীদের ওপর এভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর থেকেই পরিস্থিতি আন্দাজ করে নেয়া যায় কিছুটা। বখতিয়ার ও পরবর্তী সময়ে খলজিদের শাসন ছিল সেদিক থেকে সামরিক ও সামন্ততান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মিশেল। বাংলার ইতিহাসে সম্ভবত এটাই প্রথম সামরিক শাসন। আর এ সময়ে কেবল সামরিক সদস্যরাই প্রশাসনিক দায়িত্ব সামাল দেয়ার যোগ্য ও বিশ্বস্ত হিসেবে বিবেচিত হতো। বখতিয়ারের মৃত্যুর পর একটা ধ্বংসাত্মক সংঘাত শুরু হয় উত্তরাধিকারের স্থান দখল করার জন্য। খলজি অভিজাতদের মধ্যে সংঘটিত সে সংঘাত ছিল একদিকে আত্মঘাতী; অন্যদিকে রক্তক্ষয়ী।

বখতিয়ার খলজির মৃত্যুর খবর শোনার পর লাখনোর ছেড়ে দেবকোটের দিকে রওনা দেন মুহম্মদ শিরান খলজি। উদ্দেশ্য ছিল আলি মর্দান খলজিকে একটা শিক্ষা দেয়া। কারণ আলি মর্দান তার প্রাপ্ত উত্তরাধিকার বীরসালা থেকে আরো বিস্তৃত করেছিলেন ক্ষমতা। শিরান খলজির অগ্রগতি দেখে আলি মর্দান ঘোড়াঘাটের দিকে চলে যান। পরবর্তী সময়ে শিরান খলজি আলি মর্দানকে ধরতে সক্ষম হলেও দ্রুত তিনি পালিয়ে দিল্লিতে চলে যান এবং নতুন করে কৌশল বিস্তার করতে থাকেন। বখতিয়ার নিজের নামে খুতবা ও মুদ্রা চালু করেননি। কিন্তু আলি মর্দান করেছিলেন। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে আলি মর্দান খলজিই ছিলেন বাংলার প্রথম গভর্নর। তিনিই প্রথম নিজেকে লাখনৌতির সুলতান হিসেবে ঘোষণা দেন। নিজের নামে চালু করেছিলেন খুতবা। তবে মালিক হুসাম উদ্দিন ইওয়াজ খলজির সময় থেকে রাজনৈতিক স্থিরতা দেখা দিতে শুরু করে। হুসাম উদ্দিন ইওয়াজ সুলতান গিয়াস উদ্দীন উপাধি ধারণ করে বাংলায় স্বাধীনভাবে শাসন করেন। প্রথম সুলতান হিসেবে তিনি মুদ্রায় নিজের নাম ব্যবহার করেন। পাশাপাশি বাগদাদের খলিফার নাম ব্যবহার করা হয়েছে মুদ্রায়। ইওয়াজ খলজির সবচেয়ে বড় প্রশাসনিক সংস্কার ছিল রাজধানীকে দেবকোট থেকে গৌড়ে স্থানান্তর। তিনি একটা নৌবাহিনী গঠন করেন। বিশেষ করে বাংলার নদীপ্রধান অঞ্চলে তিনি টিকে থাকতে কৌশল অবলম্বন করেন। এজন্য তাকে ভারতে মুসলিম নৌবাহিনীর জনক বলা হয়। এ নৌবাহিনী তাকে সুলতান ইলতুতমিশের বিপরীতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন। তবকাত-ই-নাসিরীর ভাষ্যানুসারে, ইওয়াজ খলজি কেবল রাজধানী লখনৌতিতে স্থানান্তর করেই খুশি হননি; শহরকে সজ্জিত করেছেন নিজের মতো। সময়টি ছিল রাজনৈতিক পুনর্গঠনের। সে সময় সুযোগ খুঁজছিল দিল্লি। সেই পুনর্গঠন ও টানাপড়েনকে তুলে এনে মিনহাজ-ই-সিরাজের তবকাত-ই-নাসিরী দাঁড়িয়ে আছে বাংলায় মুসলিম শাসনের প্রথম দলিল হিসেবে।

আহমেদ দীন রুমি: লেখক