ব্যাংক খাত সংস্কার আমানতকারীদের গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে

ছবি : বণিক বার্তা

ভূঁইয়া মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, ২০২৪ অভ্যুত্থানের পর ছাত্র, নাগরিক ও অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ রক্ষায় গঠিত ছয় সদস্যের লিয়াজোঁ কমিটির একজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করে গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ে (সানেম)। অভ্যুত্থানের পূর্বাপর সময়ে নানা রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক তৎপরতায় যুক্ত আছেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ‘গুরুবার আড্ডা’ নামক পাঠচক্রের অন্যতম সদস্য ও শিল্প-সাহিত্যের পাঠচক্র ‘রসিক আড্ডা’র সংগঠক। এছাড়া শিল্প-সাহিত্যের পত্রিকা ‘রণপা’ ও ওয়েবসাইট ‘রসিক’ (রণপা, সিনেযোগ ও কলন্দর)-এর সম্পাদক। অভ্যুত্থান-পরবর্তী তৎপরতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের নানা কার্যক্রম মূল্যায়নসহ সাম্প্রতিক নানা প্রশ্ন নিয়ে কথা বলেন বণিক বার্তায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি বড় দাবি ছিল মেধাভিত্তিক সমাজ বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এ মেধাভিত্তিক সমাজ তৈরি করার লক্ষ্যে আপনারা কীভাবে এগোচ্ছেন? 

আমরা মূলত প্রতিটি ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। মেধাভিত্তিক সমাজ গঠনের কথা বলছি, কারণ আমরা দেখেছি গত ১৫ বছরে কীভাবে প্রতিটি নিয়োগ ব্যবস্থা রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় এবং সংশ্লিষ্টতা বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। এভাবে মেধাভিত্তিক সমাজ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। প্রথমত, বিশেষায়ণের জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। যারা যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, তাদের সেই বিষয়ে নিয়োগ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের শিক্ষা খাতকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এ বিদ্যমান কাঠামোয় মেধাবীরা দেশের জন্য অবদান রাখার সুযোগ পাচ্ছে না, দেশ ছেড়ে বহুলাংশে চলে যাচ্ছে। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় মেধাকে দক্ষতায় রূপান্তরের প্রক্রিয়াও পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করার সুযোগ নেই। তাই মেধাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে শিক্ষা খাতে বিপুল সংস্কার প্রয়োজন। প্রথমত, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। 

বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আপনাদের অঙ্গীকার কী? আয়বৈষম্য কীভাবে কমাবেন?

আমরা কেবল জিডিপির মাধ্যমে অর্থনীতির যে ব্যাখ্যা দিই, সেটিকে প্রশ্ন করা প্রয়োজন। এরই মধ্যে আমরা দেখেছি অর্থনৈতিক খাত নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটি গঠিত হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে জিডিপিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছিল, এর প্রকৃত মূল্যায়ন দরকার। শুধু জিডিপি দিয়ে অর্থনীতির অন্যান্য সূচক বোঝা যায় না। আমাদের জিডিপি ৭ শতাংশে পৌঁছেছিল, কিন্তু একই সঙ্গে আয়বৈষম্যও বেড়েছে। মানব উন্নয়ন সূচকের অন্যান্য সূচকে বৈষম্য দেখা দিয়েছে, যা শুধু জিডিপি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। আমাদের নতুন পদ্ধতি নিয়ে আসতে হবে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, জিডিপি বাড়লেও পুঁজি এককেন্দ্রিকভাবে পুঞ্জীভূত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে আয় বাড়লেও তা সমানভাবে বণ্টিত হচ্ছে না। অলিগার্কি সমাজে আয়বৈষম্য তৈরির বড় কারণ। ছোট ও মাঝারি (এসএমই) ব্যবসাগুলোর বিকাশ না হলে বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

বিগত সরকারের একটি বড় ফোকাস ছিল অলিগার্ক তোষণ। এসএমই ও মডারেট শিল্প শক্তিশালী করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার?

আমরা এটা স্বীকার করি যে একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যবসা বাণিজ্যের বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। সেখানে বড় ব্যবসায়ী যেমন থাকবেন, তেমনি মাঝারি ব্যবসায়ীরাও থাকবেন। কিন্তু বাংলাদেশে যেভাবে অলিগার্কি তৈরি করা হয়েছে, সেটি অবশ্যই অস্বাভাবিক। এর একটি বড় কারণ হলো, বড় ব্যবসায়ীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সুবিধা নিচ্ছেন। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক দখল পর্যন্ত করেছেন। যদি শক্ত নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া থাকত, তাহলে তাদের পক্ষে এ ধরনের দুর্নীতি করা সম্ভব হতো না। বর্তমানে আমরা যদি আর্থিক খাতকে পুনরুদ্ধার করতে চাই, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলোকে বিকশিত করতে চাই, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ নীতিমালা গ্রহণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে এ নীতিগুলো বাস্তবায়ন এবং সঠিক তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে কেউ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোনো অবৈধ সুবিধা নিতে না পারে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। গুটিকয়েক লুটেরা গ্রাহকদের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপের কারণে সিংহভাগ সাধারণ আমানতকারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সাধারণ আমানতকারীদের আমানতের সুরক্ষা এবং ব্যাংক খাতে স্বস্তি ফেরাতে কী করণীয়?

বর্তমান সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের উদ্বেগের একটি বড় জায়গা। খেলাপি ঋণ ও লুটপাটের কারণে অনেক ব্যাংক দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ব্যাংক খাত ধ্বংসের মুখে পড়েছে, যা মূলত বড় ব্যবসায়ী ও অলিগার্কদের মাধ্যমে ঘটেছে। সরকারও বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মূল অংশীদার হলো আমানতকারীরা—তাদের স্বার্থ আগে নিশ্চিত করা উচিত। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে সংস্কার প্রয়োজন। এ সংস্কারগুলো কীভাবে আমানতকারীদের ক্ষতি না করে করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। আমানতকারীদের গুরুত্ব দিয়ে ব্যাংকখাতে এ সংস্কার করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেই এগোতে হবে। আমাদের প্রায় সব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে ভঙ্গুর করে ফেলেছে ফ্যাসিবাদী রেজিম। 

বিগত সরকারের অর্থ লোপাটের বড় একটি জায়গা ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এ খাতে দুর্নীতি এবং জনবিরোধী চুক্তিগুলো নিয়ে আপনার মতামত কী?

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনেক বেশি দুর্নীতি হয়েছে এবং নানা অবৈধ আইন করা হয়েছে। এ খাতে তেমনভাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়নি। বিগত সরকার এক ধরনের ইনডেমনিটি আইন তৈরির মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাত থেকে জবাবদিহিতার কালচার রহিত করেছে। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে তদারকিবিহীন প্রচুর প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে তেমনভাবে কোনো পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করা হয়নি। রেগুলেটরি কমিশন বিইআরসির গণশুনানির মতোন বিভিন্ন ক্ষমতাকেও বিভিন্নভাবে খর্ব করা হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক বিডিংয়ের ব্যবস্থাও বাতিল করা হয়েছিল। আইন করে এ সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলোর মূলেই রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন উচ্চাভিলাষী নীতিমালা ও প্রকল্প। অসংখ্য প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে যেগুলোর বাস্তবে কোনো ভ্যালিডিটি নেই। আবার ক্যাপাসিটি চার্জের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ, ব্যবসায়ী ও পাওয়ার প্লান্টকে দীর্ঘদিন ধরে দেদার অর্থ দেয়া হয়েছে। এসব জায়গায় শক্তিশালী পলিসিমেকিং এবং একটি গাইডিং ফিলোসফির দরকার। 

মূল্যস্ফীতি ও বাজার অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ প্রয়োজন?

এক্ষেত্রে এটা বোঝা প্রয়োজন যে বর্তমানে যেসব সমস্যার মোকাবেলা করা হচ্ছে, সেগুলোর বেশির ভাগই আওয়ামী শাসনের অবশিষ্ট প্রভাব (রেসিডিউ)। দু-এক বছর ধরেই আমরা পূর্বাভাস পেয়েছিলাম যে বিভিন্ন সমস্যা আসতে চলেছে, কিন্তু সেগুলোর জন্য পূর্ববর্তী সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তাই এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে দ্রুত বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং বাজারের সিন্ডিকেটগুলোকে ভেঙে দিতে হবে। সাপ্লাই চেইন অক্ষুণ্ণ রাখতে চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক প্রভাবও দূর করা অত্যন্ত জরুরি। উৎপাদন থেকে বাজারে পৌঁছানোর মাঝে যেসব মধ্যস্বত্বভোগী ও চাঁদাবাজি কাজ করছে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে নীতিগত সমন্বয় করতে হবে। মুদ্রা ও রাজস্বনীতির মধ্যে সঠিক সমন্বয় আনাই হবে মূল লক্ষ্য। 

ভারতের সঙ্গে কেমন বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সম্পর্ক আপনারা প্রত্যাশা করেন? 

ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং একটি ভৌগোলিক বাস্তবতা, যা আমরা অস্বীকার করতে পারব না। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হওয়া উচিত সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। আমরা ভারতের সঙ্গে কার্যকরী ও কেজো সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই, তবে তাদের হেজেমনিক অবস্থানের প্রতি আমাদের সতর্ক দৃষ্টি আছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, যা ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের কোনো বিদ্বেষের সম্পর্ক নেই। বরং আমরা কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরো সুসংহত করতে চাই। তবে ভারতের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ এবং একতরফা চুক্তি চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। ভারত যদি বাংলাদেশের প্রতি সমতার দৃষ্টিতে এগিয়ে আসে তাহলে আমরাও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরো মজবুত করতে প্রস্তুত।

ন্যূনতম কোন কোন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্য অর্জন হলে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল বলতে পারি? 

গত ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিচ্ছিন্নতার একাধিক নতুন ধারা লক্ষ করা যাচ্ছে। ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনের ফলেই সমাজে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন প্রবণতা দেখা দিয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি বড় দায়িত্ব হলো সামাজিক ও কমিউনিটি পর্যায়ে ইতিবাচক প্রণোদনা ও মনোভাব সৃষ্টি করা এবং জনগণের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কাজ করা। আমরা যারা কমিউনিটি পর্যায়ে কাজ করছি, তাদের উদ্দেশ্য হলো সমাজে ফ্যাসিবাদী প্রবণতাগুলো দমিয়ে রাখা এবং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। 

যে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করা হয়েছে, সেই শহীদদের পরিবারের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা মূল্যায়নের গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক। এছাড়া যেসব খাতে দ্রুত সংস্কার আনা প্রয়োজন, সেসব খাতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শুরু করতে হবে। সংস্কার কর্মসূচি দ্রুত শুরু করে দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। অর্থনৈতিক খাতে জনবান্ধব সংস্কার চালু করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে এবং শিক্ষা খাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী পরিবর্তন আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। এভাবেই আমরা বর্তমান সরকারের সফলতা মূল্যায়ন করতে পারি।

ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী গত দেড় যুগে যে ফৌজদারি অপরাধ করেছে তার বিচারিক প্রক্রিয়া কী হবে এবং তারা যদি রাজনীতিতে ফিরতে চায় তাহলে আপনাদের অবস্থান কী হবে? 

গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসকরা প্রচুর হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন সংঘটিত করেছে। বিশেষ করে গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বড় পরিসরে হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এসব অপরাধের জন্য বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়া জরুরি এবং তা অবশ্যই স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হতে হবে। আমরা চাই অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হোক, কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় তাদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ না হোক। এছাড়া অর্থনৈতিক অপরাধ, যেমন ব্যাংক লুট ও অর্থ পাচারকারীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। রাজনৈতিক অপরাধ, যেমন নির্বাচনে কারচুপি। প্রয়োজন হলে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। আমরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অপরাধের ন্যায্য বিচার চাই। 

আপনি যে ন্যায্য বিচারের কথা বলছেন তা করার জন্য দেশের বিচার বিভাগ কি যথেষ্ট শক্তিশালী? আপনারা এ বিচার বিভাগ দিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবেন?

বিচার বিভাগকে স্বাধীন বলা হলেও বাস্তবে দেখা যায়, তা সরকারের নির্বাহী বিভাগের প্রভাবে থাকে। বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের প্রভাব কমাতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। বিচার বিভাগ যেন কখনই রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। গত ১৫ বছরে সংঘটিত অপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিচার বিভাগকে অবশ্যই স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে হবে।

শ্রুতলিখন: মিনহাজুল আবেদীন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন