বিবিসির বিশ্লেষণ

এখন কী করবে হিজবুল্লাহ ইরান ও ইসরায়েল

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিমান হামলায় হাসান নসরাল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ বৈরুতে শুক্রবার এক বিমান হামলায় হাসান নসরাল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যে বিধ্বংসী সংঘাত বাড়তে পারে। এতে ইরান যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ভর করবে নসরাল্লাহ নিহতের পর হিজবুল্লাহ, ইরান ইসরায়েল কী পদক্ষেপ নেবে তার ওপর। খবর বিবিসি।

ইসরায়েলের একেক পর এক হামলায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে হারিয়ে লেবাননভিত্তিক গোষ্ঠীটির কমান্ড কাঠামো অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। অসংখ্য পেজার ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের কারণে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটেছে। তাছাড়া বিমান হামলায় অনেক অস্ত্র ধ্বংস হয়েছে।    

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ আল-বাশা বলেন, ‘গোষ্ঠীটির ওপর হাসান নসরাল্লাহকে হারানোর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে। তাদের অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। স্বল্পমেয়াদে রাজনৈতিক সামরিক কৌশলেও পরিবর্তন আসতে পারে।

তিনি জানান, হিজবুল্লাহ যে হুট করে ক্ষান্ত হবে, এমন প্রত্যাশা এখনই করা যাচ্ছে না। ইসরায়েলের শর্তে যে তারা শান্তির পথ বেছে নেবে, তাও সম্ভবত হবে না।

হিজবুল্লাহ এরই মধ্যে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এখনো তাদের হাজার হাজার যোদ্ধা রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের সিরিয়ায় যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে। তারা এখন প্রতিশোধের দাবি জানাচ্ছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গোষ্ঠীটির এখনো যথেষ্ট পরিমাণ আধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যার অনেকগুলো দূরপাল্লার। অস্ত্রগুলো দিয়ে ইসরায়েলের তেল আবিবসহ অন্যান্য শহরে সুনির্দিষ্টভাবে হামলা চালানো সম্ভব। তবে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির পর্যায়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অস্ত্রগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নেতারা চাপ অনুভব করবেন। 

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে হিজবুল্লাহ যদি হামলা চালায় তাহলে ইসরায়েলের জবাব আরো ভয়াবহ হতে পারে। এতে লেবাননের অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে। আর ধ্বংসযজ্ঞ ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

নসরাল্লাহ হত্যাকাণ্ড ইরানের জন্যও বড় ধাক্কা। দেশটি এরই মধ্যে পাঁচদিনের শোক ঘোষণা করেছে। হত্যার সম্ভাবনা থেকে তাদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নসরাল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর দেশটির প্রতিক্রিয়া জানানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের বেশকিছু সশস্ত্র সহযোগী গোষ্ঠী আছে। যাদের তথাকথিতপ্রতিরোধ অক্ষ বলা হয়।

সহযোগী গোষ্ঠী হিসেবে হিজবুল্লাহর মতো ইরানের রয়েছে ইয়েমেনে হুথি এবং ইরান সিরিয়ায় কয়েকটি গোষ্ঠী। ইরান এসব গোষ্ঠীকে ইসরায়েল ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে হামলার কথা বলতে পারে। ইরান যে পদক্ষেপ নিক না কেন, তারা পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধের দিকে না গিয়ে জোরদার জবাব বেছে নিতে পারে।

গত সপ্তাহে লেবানন ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত বন্ধে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশ। ইসরায়েলের যে সে রকম কোনো পরিকল্পনা নেই, নসরাল্লাহর হত্যাকাণ্ডের পর কারো সন্দেহ থাকবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। হিজবুল্লাহকে ভঙ্গুর অবস্থায় ফেলেছে বলে মনে করছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ফলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি পুরোপুরি অপসারণ না করা পর্যন্ত তারা হামলা চালিয়ে যাবে।

হিজবুল্লাহর আত্মসমর্পণের সম্ভাবনা কম। এদিকে তাদের পক্ষ থেকে আক্রমণের হুমকি রয়েছে। ইসরায়েলের পক্ষে স্থল অভিযান না চালিয়ে হামলার হুমকি দূর করাও কঠিন হবে।   

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) অবশ্য সীমান্তের কাছে তাদের পদাতিক বাহিনীর প্রশিক্ষণের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে। থেকে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারা স্থল অভিযানে যেতে পারে। তবে সবশেষ যুদ্ধের পর হিজবুল্লাহ ১৮ বছর ধরে পরবর্তী যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছে। মৃত্যুর আগে সবশেষ বক্তৃতায় নসরাল্লাহ তার অনুসারীদের বলেন, ‘দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের অনুপ্রবেশ হবে ‘‘ঐতিহাসিক সুযোগ’’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন