নেপালে বন্যা ও ভূমিধসে ১২৯ জনের মৃত্যু

বণিক বার্তা ডেস্ক

নেপালে বন্যা ও ভূমিধসে মরদেহ উদ্ধারে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা ছবি: রয়টার্স

নেপালে টানা দুদিনের ভারি বৃষ্টি থেকে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ১২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে ৬২ জন। তিনদিন বিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলো মেরামতের প্রয়োজন হওয়ায় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লক্ষ্মী ভট্টরাই রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা দুর্গত এলাকার স্কুলগুলো তিনদিনের জন্য বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, নেপালের পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের একটা বড় অংশ গত শুক্রবারই প্লাবিত হয়। বেশ কয়েকটি নদীতে পানি বেড়ে যায়। নদীতীরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় আকস্মিক বন্যা। এতে দেশটির বিভিন্ন মহাসড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বন্যার কারণে কাঠমান্ডু উপত্যকায় যান চলাচল ও স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ৪০ লাখের আবাসস্থলে ৩৭ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, রাজধানীর কিছু অংশে ৩২২ দশমিক ২ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। এতে প্রধান নদী বাগমতীর পানির স্তর বিপৎসীমার ২ দশমিক ২ মিটার অতিক্রম করে।

রাজধানীর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা গোবিন্দ ঝা বলেন, ‘গতকাল সকালে কিছুটা স্বস্তির লক্ষণ দেখা গেছে। অনেক জায়গায় বৃষ্টি কমে গেছে। পরবর্তী সময়ে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হতে পারে, তবে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।’

রাজধানীর আবহাওয়া কর্মকর্তারা জানান, নেপালের প্রতিবেশী ভারতের কিছু অংশে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্টের (আইসিআইএমওডি) জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলেন, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন নেপালকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।

কেন্দ্রের পরিবেশগত ঝুঁকিবিষয়ক কর্মকর্তা অরুণ ভক্ত শ্রেষ্ঠা জানান, তিনি কাঠমান্ডুতে এত বড় বন্যা আগে কখনো দেখেননি। 

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭০ সালের পর এটাই রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির নজির। বাগমতী নদী ও তার অনেক শাখা-প্রশাখায় পানি বেড়ে গেছে। ফলে পুরো কাঠমান্ডুতে নদীতীরবর্তী বাড়ি ও যানবাহন পানিতে ডুবে গেছে। বুকসমান পানি পেরিয়ে মানুষকে উঁচু জায়গায় যেতে হচ্ছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত উদ্ধারকারীরা ৩ হাজার ৩০০ মানুষকে উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য হেলিকপ্টার, মোটরবোটসহ মোট তিন হাজার নিরাপত্তা কর্মকর্তা কাজ করছেন। উদ্ধারকর্মীরা রাবারের ভেলা ব্যবহার করে মানুষকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।

ভূমিধসের কারণে অনেক মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। ফলে রাজধানীর সঙ্গে কার্যত দেশের বাকি অংশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। কাঠমান্ডু থেকে স্থানীয় ফ্লাইটগুলো আবারো চালু হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার সন্ধ্যায় ১৫০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়। ২০২৪ সালে বৃষ্টিসংশ্লিষ্ট দুর্যোগে নেপালে অন্তত ২৬০ জনের প্রাণহানি হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন