আইএমএফ-প্রধানকে ড. ইউনূস

ভোটার তালিকা প্রস্তুত হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

বাসস

ছবি :মন্ত্রণালয়

দেশের সংস্কার নিয়ে ঐকমত্যে উপনীত হওয়া এবং ভোটার তালিকা তৈরি হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য তার অন্তর্বর্তী সরকার যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে সে সম্পর্কে কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘কমিশনের সুপারিশ নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, সংস্থাটি বিষয়টি নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে ঢাকায় একটি দল পাঠিয়েছে। 

প্রধান উপদেষ্টা ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে বাংলাদেশের পূর্ববর্তী স্বৈরশাসন উৎখাত করা ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করেন। তখন ক্রিস্টালিনা তাকে বলেন, ‘এটি একটি ভিন্ন দেশ। এটি বাংলাদেশ ২.০’।

আইএমএফের প্রধান নির্বাহী অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগে তার সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘আইএমএফ বাংলাদেশ সরকারের জন্য আর্থিক সহায়তা দ্রুততর করবে।’ তিনি দ্রুতই বাংলাদেশে আইএমএফের একটি দল পাঠিয়েছেন এবং এ মুহূর্তে তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। দলটি আগামী মাসে আইএমএফ পরিচালনা পর্ষদের কাছে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে উল্লেখ করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা।

তিনি বলেন, ‘আইএমএফ বোর্ড টিমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ঋণদান কর্মসূচি শুরু করতে পারে, অথবা এটি গত বছরের শুরুর দিকে চালু হওয়া বিদ্যমান সহায়তা কর্মসূচির অধীনে আরো ঋণ দিতে পারে।’

জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পরিবহন উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ফাওজুল কবির খান আইএমএফ-প্রধানকে বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র এক সপ্তাহ সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপরাধের দুর্গ গুঁড়িয়ে দিয়েছে।’

ড. দেবপ্রিয় দেশের অর্থ প্রদানের ভারসাম্য বাড়াতে আইএমএফের সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে আইএমএফের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।’

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে অতিরিক্ত ১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার সাহায্য প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের এক পার্শ্ব বৈঠকে এ ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। গতকাল ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।

নতুন সহায়তা প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) থেকে ১২ কোটি ৯০ লাখ ও পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রায় ৭ কোটি ডলার।

মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়া ৬ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার জরুরি প্রয়োজন মেটানোই এ সহায়তার লক্ষ্য। ইউএসএআইডির সহায়তায় কৃষি বিভাগের কমোডিটি ক্রেডিট করপোরেশন থেকে ৭ কোটি ৮ লাখ ডলারসহ এ সাহায্য দেয়া হচ্ছে। এ অর্থ বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের কাছ থেকে প্রায় ৫২ হাজার ২০০ টন খাদ্যপণ্য ক্রয়, জাহাজীকরণ ও বিতরণে সহায়তা করবে।

এ অর্থায়ন রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য, পুষ্টি এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেমন আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটি, ইউনিসেফ এবং জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সহায়তা করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন