কোথাও উন্নতি, কোথাও অবনতি সপ্তাহ শেষে বৃষ্টি বাড়ার আভাস

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে পানি কমে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদে পানি কমলেও ধরলা ও দুধকুমার নদে পানি বেড়ে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। যমুনা নদীতে পানি বেড়ে গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এছাড়া সপ্তাহ শেষে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গতকাল বেলা ৩টার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়, দুধকুমারের পাটেশ্বরী (ভূরুঙ্গামারী) পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার, ধরলার কুড়িগ্রামে ৩২, ঘাঘটের গাইবান্ধায় ২৩, ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়ায় ৫০, হাতিয়ায় ৫৩, চিলমারীতে ৬৪, যমুনা নদীর ফুলছড়ীতে (গাইবান্ধা) ৭১, বাহাদুরাবাদে ৮৩, সাঘাটায় ৮০, সারিয়াকান্দিতে (সিরাজগঞ্জ) ৫৫, কাজীপুরে ৫৪, জগন্নাথগঞ্জে (জামালপুর) ১১৭, সিরাজগঞ্জে ৬১, পোড়াবাড়ীতে (টাঙ্গাইল) ৩২, আত্রাইয়ের বাঘাবাড়ীতে ২, পশুরের মোংলায় (বাগেরহাট) ২১, সুরমার কানাইঘাটে (সিলেট) ৪৮, কুশিয়ারার অমলশিদে ৬৯, শেওলায় ৯, কুশিয়ারার মারিকুলিতে ২৬, সোমেশ্বরীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

অন্যদিকে, সারা দেশে সপ্তাহ শেষে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া বুলেটিনে বলা হয়, আজ রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।

আগামীকালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি ও অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়ার সারসংক্ষেপে বলা হয়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে বণিক বার্তার প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানির তীব্র  স্রোতে ভেঙে যাচ্ছে নদীতীরবর্ত গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক। এসব সড়ক ভেঙে নদীর পানি খুব দ্রুত লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে করে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন বাড়ি-ঘর, হাটবাজার, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ।

পাউবো টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, যেসব এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিচ্ছে, তৎক্ষণাৎ ডাম্পিং ও জিও ব্যাগ ফেলে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে যমুনার পানি বেড়ে বগুড়ার সারিয়াকন্দি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ উপজেলায় প্রায় ৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ, স্কুলঘরে পানি থৈথৈ করছে। পানি ওঠায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সাময়িক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আশপাশে তিন উপজেলার ১ হাজার ৩৫৬ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

এছাড়া কুড়িগ্রামে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি। ব্রহ্মপুত্রের পানি সামান্য কমে চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে ধরলার পানি বেড়ে তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি ওঠায় নয় উপজেলায় ৩৪১টি প্রাথমিক, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে সাতদিন ধরে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে উঁচু সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার সংকটে পড়েছে চরাঞ্চলের বন্যাকবলিতরা। পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। তবে বানভাসি মানুষের মাঝে সরকারিভাবে কিছু ত্রাণসহায়তা লক্ষ্য করা গেলেও বেসরকারিভাবে তেমন ত্রাণসহায়তা দেখা যায়নি। কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, বন্যা মোকাবেলায় ৩১৭ টন চাল, ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ১৯ হাজার ৩০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন