২০২৪-২৫ মৌসুমে ঘরের মাঠে মোট সাতটি টেস্ট খেলবে পাকিস্তান, যা হবে চলতি শতাব্দীতে তাদের ব্যস্ততম মৌসুম। এ বছরে আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
গোটা মৌসুমের সূচি ঘোষণা করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি), যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও। যদিও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচিটা খসড়াই, কারণ এ নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। পাকিস্তানের মাটিতে খেলতে অপারগতা জানাতে পারে ভারতীয় ক্রিকেট দল। তখন হয়তো ভেন্যু কিংবা সূচিতে খানিকটা পরিবর্তন আনা হবে। আগামী বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর পাকিস্তানের আয়োজন করার কথা।
বাংলাদেশের আগমনের মধ্য দিয়ে হোম সিজন শুরু হবে পাকিস্তানের। দুটি টেস্ট হবে যথাক্রমে রাওয়ালপিন্ডি ও করাচিতে। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সংস্কারকাজের কারণে সেখানে টেস্ট রাখা হয়নি। তালিকায় ছিল মুলতানও। যদিও শেষ পর্যন্ত রাওয়ালপিন্ডি ও করাচিকে বেছে নিয়েছে পিসিবি। ২১ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টেস্ট দুটি অনুষ্ঠিত হবে। যদিও উচ্চ তাপ ও আর্দ্রতার কারণে ঐতিহ্যগতভাবে আগস্টে ঘরের মাঠে আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলে না পাকিস্তান। এটা আবার বর্ষা মৌসুমের মধ্য সময়। কাজেই এ সময় টেস্ট ম্যাচে বৃষ্টি বাগড়া দিলে তা হতে পারে চরম ক্ষতির কারণ। পাকিস্তান তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে আগস্টে মাত্র দুটি টেস্ট খেলেছে, যার একটি বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৩ সালে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এখন পর্যন্ত ১৩টি টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টিতেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে পাঁচটি পাকিস্তানের মাটিতে ও আটটি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দলের একমাত্র ড্র ম্যাচটি হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। পাকিস্তানের মাটিতে ১২টি ওয়ানডে খেলেও জয়হীন বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতেও একই ফল। ২০ ওভারের তিনটি ম্যাচ খেলে সবগুলোই জিতেছে পাকিস্তান। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে ২০টি ম্যাচ খেলে একটিও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। টেস্টে অন্যতম সেরা দলের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে আরেকটি অগ্নিপরীক্ষায় নামতে যাচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তার সতীর্থরা। বধ্যভূমিতে কি প্রথম জয়ের উৎসব করতে পারবেন তারা?
২০০১ সালে মুলতানে প্রথম দেখায় বাংলাদেশকে ইনিংস ও ২৬৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারায় পাকিস্তান। পরের বছর জানুয়ারিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে টানা দুই টেস্টে ইনিংস পরাজয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ লড়াই করেছে দুটি টেস্টে। ২০১৫ সালে খুলনায় তামিম ইকবালের ডাবল সেঞ্চুরিতে ভর করে পাকিস্তানের সঙ্গে ড্র করতে সমর্থ হয়েছিল টাইগাররা। বাংলাদেশের সঙ্গে ১৩ টেস্ট খেলে একটিও জিততে পারেনি পাকিস্তান। এছাড়া ২০০৩ সালে মুলতানে জিততে জিততে হেরে যায় বাংলাদেশ। ইনজামাম-উল-হক ১৩৮ রানের বীরোচিত ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে ১ উইকেটের স্নায়ুক্ষয়ী জয় এনে দেন। ২৬১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ২০৫ রানে অষ্টম উইকেট হারায় পাকিস্তান। সেখান থেকে উমর গুলকে (৫০ বলে ৫) নিয়ে লড়াই করে দলের রান ২৫৭ পর্যন্ত নিয়ে যান ইনজি। গুল রানআউটের শিকার হওয়ার পর ইয়াসির আলীকে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নোঙর করান তিনি। জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ১ উইকেটের হার নিয়ে বিমর্ষচিত্তে মাঠ ছাড়ে খালেদ মাহমুদ সুজনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল।
সব ঠিক থাকলে সপ্তমবারের মতো দুই জাতি সিরিজ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এখন পর্যন্ত ছয়টি সিরিজ খেলে সবগুলোই হেরেছে বাংলাদেশ। ২০০২ সালে ২-০-তে, ২০০৩ সালে ৩-০-তে, ২০১১ সালে ২-০-তে, ২০১৫ সালে ১-০-তে, ২০২০ সালে ১-০-তে ও ২০২১ সালে ২-০-তে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
২০২০ সালের পর আবার পাকিস্তানের মাঠে টেস্ট খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। রাওয়ালপিন্ডিতে সর্বশেষ টেস্টে ইনিংস ও ৪৪ রানে হেরেছে সফরকারীরা। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ওই সফরে দ্বিতীয় টেস্টটি বাতিল করা হয়েছিল।
দুই দলের প্রথম টেস্টটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজের অংশ ছিল না। ২০০১ সালের আগস্টে মুলতানে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে বাংলাদেশকে ইনিংস ও ২৬৪ রানে হারিয়ে দেয় পাকিস্তান।
বাংলাদেশ সফর শেষ করে আসার পর মুলতান, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে তিনটি টেস্ট খেলবে পাকিস্তান। ম্যাচগুলো হবে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে। এরপর অস্ট্রেলিয়া ও জিম্বাবুয়ের মাঠে সীমিত ওভারের সিরিজ খেলতে যাবে পাকিস্তান। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলবে তারা সব ফরম্যাটের সিরিজ। অস্ট্রেলিয়ায় তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সিরিজ হবে ৪-১৮ নভেম্বর। ২৪ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলবে পাকিস্তান।
১০ ডিসেম্বর টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শুরু হবে তাদের। ৭ জানুয়ারি সফর শেষ হবে দুই টেস্টের সিরিজ দিয়ে। টেস্ট দুটি যথাক্রমে সেঞ্চুরিয়ন ও কেপটাউনে।
রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ২১ থেকে ২৫ আগস্ট ও করাচিতে ৩০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য অনুষ্ঠিত আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে পাকিস্তানের মাঠেই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। যেহেতু পাকিস্তানের সঙ্গে ১৩ ম্যাচ খেলে এখনো কোনো জয় নেই, তাই এবারের সফরটিও কঠিন হবে শান্ত-লিটনদের জন্য।
পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ শেষ করেই আরেকটি কঠিন সফর বাংলাদেশের সামনে। ভারতের সঙ্গে দুই টেস্টের সিরিজ খেলবেন শান্তরা। ১৯ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ে শুরু হবে সিরিজের প্রথম টেস্ট, এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে কানপুরে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। অক্টোবরে ধর্মশালা (৬ অক্টোবর), দিল্লি (৯ অক্টোবর) ও হায়দরাবাদে (১২ অক্টোবর) তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে ভারত ও বাংলাদেশ।
এরপর পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাবে বাংলাদেশ। এ সফরে রয়েছে দুটি টেস্ট এবং তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ১৯ ডিসেম্বর শেষ হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর।