ফ্রান্সের কাছে টাইব্রেকারে হারল পর্তুগাল

রোনালদোর বিদায় নিয়ে জল্পনা

ক্রীড়া ডেস্ক

ছবি : বণিক বার্তা

চারদিন আগে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হওয়ার পর কেঁদেছেন পর্তুগাল অধিনায়ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পরে টাইব্রেকারে জয়লাভ করে পর্তুগাল। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর কাছে হেরে বিদায় নেয়ার পরও কেঁদেছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী সুপারস্টার। তবে এবার আর তিনি কাঁদলেন না। শুক্রবার রাতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে তার দল। হয়তো এটাই তার শেষ ইউরো, শেষ বড় আসরও। তাই হয়তো অধিক শোকে রোনালদোর চোখের জলই শুকিয়ে গেছে। 

রোনালদো কাঁদেননি এ রাতে, তিনি বরং সান্ত্বনা দেন দীর্ঘদিনের সতীর্থ পেপেকে। খুব সম্ভবত এটি দুজনেরই শেষ বড় টুর্নামেন্ট। ৪১ বছর বয়সী পেপে পর্তুগালের হয়ে অসাধারণ পারফর্ম করেছেন। তিনি ছিলেন পর্তুগিজ রক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী। ভালো খেলেও দলকে সেমিফাইনালে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি ম্যাচ শেষে কেঁদেছেন। তখনই তাকে আলিঙ্গনে বেঁধে সান্ত্বনা দেন রোনালদো। এ ছবিটাই এখন ভাইরাল। বলা হচ্ছে, পর্তুগালের জার্সিতে এটাই দুজনের শেষ বড় আসর।

দুজনই পর্তুগিজ গ্রেট, যাদের সম্মিলিত বয়স ৮০ বছর। অবসর দেখছেন দুজনই। শেষ আসর থেকে বিদায় ঘটার পর পেপে বলেন, ‘ফুটবল আসলেই নিষ্ঠুর।’

২০২৬ সালের বিশ্বকাপে রোনালদোর বয়স হয়ে যাবে ৪১ বছর। তাকে ওই আসরে দেখার সম্ভাবনা ক্ষীণ। যদিও এখনো অবসরের ঘোষণাও দেননি। তিনি এখনো দলটির অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক ফুটবলে রেকর্ড ২১২ ম্যাচে রেকর্ড ১৩০ গোল রোনালদোর। এখনো দেশের জার্সিতে পুরো ৯০ মিনিট খেলে যান তিনি। এবার একটি ম্যাচেই পুরো ৯০ মিনিট খেলেননি। জর্জিয়ার সঙ্গে জয় যখন প্রায় নিশ্চিত তখন ৬৬ মিনিটে তাকে তুলে নেন পর্তুগাল কোচ রবার্তো মার্টিনেজ। এরপর স্লোভেনিয়া ও ফ্রান্সের বিপক্ষে উভয় ম্যাচেই পুরো ১২০ মিনিট খেলেছেন তিনি! 

এখনো সব সতীর্থ ও কোচ মার্টিনেজের সম্মান আদায় করে নিচ্ছেন রোনালদো। যদিও বড় টুর্নামেন্টে তার গোলখরা কি শেষের পথটাই দেখিয়ে দিচ্ছে? চলতি ইউরো ও গত বিশ্বকাপ মিলিয়ে বড় আসরে টানা আট ম্যাচে গোলহীন এ গোলমেশিন। 

ফ্রান্স ম্যাচে সেন্টার ব্যাক উইলিয়াম সালিবা ও দায়োত উপামেকানো আঠার মতো লেগে ছিলেন রোনালদোর সঙ্গে। ওই দুজনকে ফাঁকি দিয়ে তিনি কিছুতেই বলের কাছে যেতে পারছিলেন না। অতিরিক্ত সময়ের খেলায় তিনি একবার তাদের ফাঁকি দিতে পেরেছেন, যদিও ক্রসের বলে তিনি যে শট নেন সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

দুই গ্রেটকে নিয়ে পর্তুগাল কোচ মার্টিনেজ বলেছেন, ‘এ হার মেনে নেয়া কঠিন। হতাশায় কাঁদছিল ওরা। পর্তুগিজ ফুটবলের অনুপ্রেরণা পেপে। যেভাবে ফ্রান্সের বিপক্ষে ও খেলল এবং এ প্রতিযোগিতায় খেলল, তা চিরদিন মনে থাকবে মানুষের। পরের প্রজন্মও মনে রেখে দেবে।’ 

রোনালদো ও পেপের অবসর নিয়ে স্প্যানিশ কোচ বলেন, ‘একটু আগেই ম্যাচ শেষ হয়েছে। হারের যন্ত্রণায় বিদ্ধ আমরা। এখনই কোনো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেয়নি ওরা। এখন সেই সময়ও না।’

অবসর প্রসঙ্গে পেপে যা বললেন, ‘আমি তো ভবিষ্যতেও এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাব। এখন এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না। কারণ, মানুষ তো আগামীকাল এসব বিষয় নিয়ে কথা বলবে না, বরং তখন আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে জিজ্ঞেস করবে।’ 

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে রেকর্ড ১৪ গোল করেছেন রোনালদো, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার মিশেল প্লাতিনির চেয়ে পাঁচটি বেশি! প্লাতিনি তার নয়টি গোল করেছেন একটি আসরেই! ১৯৮৪ সালের আসরে দুটি হ্যাটট্রিক করেছিলেন ফরাসি গ্রেট। সেবার প্রথম ইউরোপিয়ান মুকুট জয় করে ফ্রান্স। 

রোনালদো একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ছয়টি ইউরোয় খেলেছেন। এবারের আসর বাদে আগের প্রতিটিতেই গোল করেছেন। এবারই প্রথম লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হলেন তিনি। 

হামবুর্গে ১২০ মিনিট গোলশূন্য থাকা ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে। ফরাসিরা পাঁচ শটেই গোল করলেও পর্তুগালের হোয়াও ফেলিক্স ব্যর্থ হলে ৫-৩ গোলের জয় পান। ৯ জুলাই মিউনিখে প্রথম সেমিফাইনালে স্পেনের মুখোমুখি হবে ফ্রান্স।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন